ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

৪৫ বছরেও চিহ্নিত হয়নি ফেনীর বধ্যভূমিগুলো

সৌরভ পাটোয়ারী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৪৫ বছরেও চিহ্নিত হয়নি ফেনীর বধ্যভূমিগুলো

নির্মাণাধীন একটি স্মৃতিস্তম্ভ

সৌরভ পাটোয়ারী, ফেনী : হানাদারদের অত্যাচার, নির্যাতন, ধর্ষণ ও নৃশংস গণহত্যার দুঃসহ স্মৃতি বিজড়িত ফেনীর বেশিরভাগ বধ্যভূমি ৪৫ বছরেরও চিহ্নিত করা শেষ হয়নি। আর যেগুলো চিহ্নিত হয়েছে সেগুলো রয়েছে অযত্নে আর অবহেলায়।

 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ফেনী জেলার বিভিন্নস্থানে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। লাশ ফেলা হয় পুকুর, খাল, নদীনালা, এমনকি বাদ যায়নি গভীর জঙ্গলও।

 

সরকারের পক্ষ থেকে এ সব বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের কথা থাকলেও চিহ্নিত করা হয়নি কোথায় স্থাপন করা হবে সেই স্তম্ভগুলো।

 

ফেনীর বধ্যভূমিগুলো হচ্ছে ফেনী সরকারি কলেজ এলাকার বধ্যভূমি, দাগনভূইয়া রাজাপুর বধ্যভূমি, ফুলগাজী জামুড়া গ্রামের বধ্যভূমি, পরশুরামের মালিপাথর বধ্যভূমি ও সলিয়া বধ্যভূমি।

 

ফেনীকলেজবধ্যভূমিঅরক্ষিত

 

বধ্যভূমির একাংশের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ফেনী কলেজের অনার্স ভবন। ভবনটির পেছনের অংশে বধ্যভূমির কিছু জায়গা জুড়ে রয়েছে ময়লার স্তূপ ও সেপটিক ট্যাংক। ফেনী কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানে না ফেনী কলেজ ক্যাম্পাসের বধ্যভূমির কথা ও ইতিহাস। ফেনী কলেজের দক্ষিণাংশে বধ্যভূমিটি নির্মিত হলেও সংরক্ষণের অভাবে অরক্ষিত রয়েছে। দিন-দুপুরে সেখানে বসে মাদক সেবীদের আড্ডাখানা।

 

ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার মীর আবদুল হান্নান জানান, জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য বধ্যভূমি। ফেনী কলেজেরটিই একমাত্র চিহ্নিত বধ্যভূমি। তাও সংরক্ষণ করা হয় না, রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়।

 

চিহ্নিতহয়নিরাজাপুরবধ্যভূমি

রাজাপুরের মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম পাটোয়ারী জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৫ বছর পার হলেও রাজাপুর চিহ্নিত হয়নি বধ্যভূমি হিসেবে। সংরক্ষণে এগিয়ে আসেনি সরকার বা অন্য কোনো সংস্থাও।

 

তিনি আরো জানান, ১৯৭১ সালে রাজাপুর স্কুলে ছিল হানাদার বহিনীর ক্যাম্প। নির্যাতন করা হতো বাঙালি দের। চৌধুরীবাড়ির পশ্চিম পাশের পুকুরে মুক্তিযোদ্ধা আশরাফকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই স্থানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মারাত্মক আহত হয়েও অল্পের জন্য বেঁচে যান ডাক্তার আবদুল হালিম। হালিম আজো পিঠের ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন। সেখানে বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা দরকার বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

 

ফুলগাজীজামুড়াবধ্যভূমি

এ বধ্যভূমিতে ২৬ জন মুক্তিকামী মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এখানে ঘুমিয়ে আছেন শরিফা খাতুন, সেতারা বেগম, আবুল মনসুর, জোহরা আক্তার এ্যানী ও সাইফুল ইসলামসহ নাম না জানা কয়েকজন শহীদ।

 

যুদ্ধের সময়ের প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুর রহমান জানান, এখানে ২৬ জন মুক্তিকামী মানুষকে বট গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্বিচারে হত্যা করে পাকি সেনারা। এ বধ্যভূমির পার্শ্বে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করার দাবি জানান তিনি।

 

অরক্ষিত ফেনী সরকারি কলেজ এলাকার বধ্যভূমি।ছবিতে স্মৃতিস্তম্ভের ওপর দুই যুবক বসে আছে

 

পরশুরামেরমালিপাথরবধ্যভূমি

এখানে হত্যা করা হয় একই পরিবারে পাঁচজনকে। বেঁচে যাওয়া শহীদ পরিবারের সন্তান মাওলানা নুরুল আমিন জানান, এখানে হত্যা করা হয় তার বাবা, চাচা, জেঠাসহ পাঁচজনকে। এ বধ্যভূমিটি চিহ্নিত করা হলেও রয়েছে অরক্ষিত।

 

পরশুরামেরসলিয়াবধ্যভূমি

এ বধ্যভূমিতে নিরবে শুয়ে আছেন একই পরিবারের তিন মুক্তিকামী মানুষ।

 

পরশুরাম মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হুমায়ুন শাহরিয়ার জানান, এখানে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনজনকে হত্যা করা হয়। এটি আজো চিহ্নিত করা হয়নি। এখানে বধ্যভূমি তৈরীর নামে টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

 

৭১’র ২২ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ সমরে হানাদারদের হারিয়ে ফেনীর মাটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিলেন।

 

 

রাইজিংবিডি/ফেনী/২৩ ডিসেম্বর ২০১৬/সৌরভ/টিআর/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়