৫০ কারখানা বন্ধ, অপেক্ষায় আরো ৪০
মামুন || রাইজিংবিডি.কম
আব্দুল্লাহ আল মামুন : অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের চাপ ও আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে গত কয়েক মাসে প্রায় ৫০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অন্তত ২৫-৩০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছেন।
টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন সূত্র ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুব শিগগিরই বন্ধ হয়ে যেতে পারে আরো ৩০-৪০টি কারখানা। ফলে আরো ১০ থেকে ১৫ হাজার শ্রমিকের বেকার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে হাহাকার চলছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে জুলাই পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৫০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সোয়ান, লিরিক, আরএম ফ্যাশন, মিফকিফ ও বনী। বন্ধ হওয়ার পথে মিরপুরের লিবার্টি গার্মেন্ট, লিবার্টি ফ্যাশন ও উত্তরার ফাহিম লুমসহ প্রায় ৩০-৪০টি কারখানা। সব মিলিয়ে আগামী দু-এক মাসের মধ্যে বেকার শ্রমিকের সংখ্যা হবে কমপক্ষে ৫০ হাজার।
শ্রমিকরা জানান, গার্মেন্টে নতুন নিয়োগ হচ্ছে না। ‘কর্মখালি নাই’ এমন লেখাই ঝুলছে অধিকাংশ কারখানার সামনে।
গত ৪ মাস ধরে চাকরি খুঁজছেন সোয়ান গার্মেন্টের নারী শ্রমিক নাহার বানু। তিনি বলেন, ‘যেখানেই যাই, বলে- খালি নাই, পরে যোগাযোগ করেন। চাকরি না পেলে না খেয়ে মরতে হবে।’
এ বিষয়ে টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে না পেরে স্বাভাবিকভাবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের পরিদর্র্শন ভয় ও আর্থিক দুরবস্থার কারণে গত ৭-৮ মাসে প্রায় ৫০টি টেক্সটাইল গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স শেয়ার্ড বিল্ডিংয়ে কারখানা রাখতে দিচ্ছে না। তাই অনেকেই ভয়ে কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন।’
রেডিমেড গার্মেন্ট ওয়ার্কার ফেডারেশনের সভাপতি লাভলি ইয়াসমিন বলেন, ‘অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স ৩৪টি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। আর সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজ করা ৩০-৪০টি কারখানা কাজের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। খুব অল্প সময়েই বন্ধ হবে এমন কারখানার সংখ্যাও অন্তত ৩০টি। সব মিলিয়ে দুই-এক মাসের মধ্যেই বেকার শ্রমিকের সংখ্যা হবে প্রায় ৫০ হাজার।
এদিকে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি- বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, রানা প্লাজা ধসের পর পশ্চিমা ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় ৫০০ করাখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে মালিকদের।
কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করলেও ৩০ হাজার শ্রমিকের বেকার থাকার বিষয়টি স্বীকার করেননি বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজীম।
তিনি বলেন, ‘শেয়ার্ড বিল্ডিংয়ে ক্রেতারা অর্ডার দিতে চান না। তাই অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে নতুন অনেক কারখানা তৈরি আছে। যেগুলো গ্যাস সংযোগের অভাবে উৎপাদনে যেতে পারছে না। এগুলো চালু হলে কয়েক লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এতে দুশ্চিন্তার কারণ নাই।’
রফতানিকারকদের সংগঠন ইএবির সভাপতি সালাম মুর্র্শেদী বলেন, শেয়ার্ড বিল্ডিং এবং কনভার্টেড বিল্ডিংয়ের কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো বন্ধ হবে। এ ছাড়া আমাদের সক্ষমতাও কমে এসেছে। নতুন কারখানাগুলোতে বিদ্যুৎ-গ্যাসের ব্যবস্থা করা হলে বন্ধ হওয়া কারখানার শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ আগস্ট ২০১৫/মামুন/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন