ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

৫২২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুদকের সুপারিশ যাচ্ছে মন্ত্রণালয়ে

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ২৫ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৫২২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুদকের সুপারিশ যাচ্ছে মন্ত্রণালয়ে

এম এ রহমান মাসুম : রাজধানীর নামি-দামি ২৪ সরকারি বিদ্যালয়ের ৫২২ শিক্ষককে বদলির চূড়ান্ত সুপারিশ চলতি সপ্তাহেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থেকে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়েছেন এসব শিক্ষক। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এসব শিক্ষকের ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত একই বিদ্যালয়ে থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সরকারি নীতিমালা ও নির্দেশিকা অনুসারে এসব শিক্ষককে বদলি করা হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, ওই শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অর্থ উপার্জন করছেন। এজন‌্য ৫২২ শিক্ষককে বদলির সুপারিশ করেছে দুদক।

এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম‌্যান ইকবাল মাহমুদ রাইজিংবিডি বলেন, ‘৫২২ শিক্ষকের তালিকা এখনো পাঠানো হয়নি। চলতি সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে যাবে। এত বছর একজন শিক্ষক কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠানে থাকে? শিক্ষক বদলির একটি নীতিমালা আছে। সেই নীতিমালার ব‌্যত্যয় কীভাবে ঘটল সে বিষয়টিই আমি বলেছি। আমরা মন্ত্রণালয়কে আমাদের ফাইন্ডিংসগুলো বলেছি। এখন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে তারা কী করবে?

দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘সরকারি নীতিমালা মোতাবেক, শিক্ষকদের এক কর্মস্থলে তিন বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হলেই তাদেরকে অন্যত্র বদলি করার নির্দেশনা রয়েছে। ওই নির্দেশনা মোতাবেক দুদক থেকে সুপারিশ করা হয়েছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য ও নিয়োগ বাণিজ্যের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল অনুসন্ধান শেষে ১ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে।

যেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলির সুপারিশ করা হয়েছে সেসব হলো- গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ৩২ জন, মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৬ জন, ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাই স্কুলের ১৭ জন, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৪ জন, শেরেবাংলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৭ জন, সরকারি বিজ্ঞান কলেজে সংযুক্ত হাই স্কুলের ২৫ জন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩১ জন, তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২১ জন, গণভবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৪ জন, মিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯ জন, নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯ জন, নারিন্দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩১ জন, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ২৯ জন, আরমানিটোলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ২১ জন, ঢাকা গভর্নমেন্ট মুসলিম হাই স্কুলের ৯ জন, ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ জন, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩২ জন, বাংলাবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২২ জন, টিকাটুলী কামরুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩০ জন, তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৮ জন, শেরেবাংলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৪ জন, ধানমন্ডি কামরুন্নেছা সরকারি বিদ্যালয়ের ৭ জন, ধানমন্ডি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ জন ও নিউ গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুলের ৭ জন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে কমিশনে থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।  তালিকা অনুসারে সুপারিশ তৈরী করা হয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিছু কাজ বাকি আছে। তবে চলতি সপ্তাহে ওই সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে যাবে। এরপর মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে কাকে কোথায় বদলি করা হবে।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু শিক্ষক কোচিং বা প্রাইভেট বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বছরের পর বছর ঢাকার একই বিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন। একই কর্মস্থলে বছরের পর বছর থাকার ফলে ওই শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ানোর নামে কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন এবং শিক্ষার্থীদের সেখানে পড়তে বাধ্য করা হয়। ১০ বছরের বেশি কোনো শিক্ষক একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে তাকে বিভাগের বাইরের বিদ্যালয়গুলোতে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ বছরে বেশি সময় কর্মরত শিক্ষকদের ঢাকা নগরীর বাইরে এবং তিন বছরের বেশি একই বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকলে নগরীর অন্য বিদ্যালয়ে বদলির সুপারিশ করেছে দুদক।

অনুসন্ধানকালে শিক্ষা প্রশাসন দুদক টিমকে জানিয়েছে, সরকারি নীতিমালা মোতাবেক একই কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেই অন্যত্র বদলি করার নির্দেশনা রয়েছে। এই বদলি না করার মূলে রয়েছে চাপ প্রয়োগ, তদবির ও অনৈতিক আর্থিক লেনদেন। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইংরেজি শিক্ষক বা গণিত শিক্ষক কর্মরত আছেন। আবার কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ইংরেজি বা গণিতের শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে তা সমন্বয় করা হচ্ছে না। এর মূল কারণ হচ্ছে সিন্ডিকেট করে কোচিং বাণিজ্য।

২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে দুদকে রাজধানীর নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি ও কোচিং বাণিজ্য এবং নিয়োগ বাণিজ্যের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ দল গঠন করে দুদক। এই দল প্রথম দফায় অনুসন্ধান শেষে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদন দাখিলের পরপরই দুদকে আরো একটি অভিযোগ আসে। সেখানেই বিভিন্ন সরকারি স্কুলে কিছু শিক্ষক সরকারি নীতিমালা অমান্য করে ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত একই বিদ্যালয়ে কর্মরত থেকে কোচিং বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এমন অভিযোগের কথা বলা হয়।

দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্যরা বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে দেখতে পান, অনেক শিক্ষক পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে প্রাইভেট পড়ানোর কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। উল্লিখিত স্কুলের ৫২২ জন শিক্ষক রয়েছেন যারা ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত একই বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ নভেম্বর ২০১৭/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়