ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘আব্বুর কী হয়েছে?’

রেজাউল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২২, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আব্বুর কী হয়েছে?’

আবুধাবীতে নিহত আকতারের স্ত্রী ও তার দুই শিশু কন্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : ‘আম্মু, তোমরা সবাই কাঁদছ কেন? আমার আব্বুর কী হয়েছে? আব্বু কবে আসবে?’

 

মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে ঠিক এভাবেই একের পর এক প্রশ্ন রাখছে ৭ বছর বয়সি শিশু ইসরাত হোসেন আলফা। এ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই তার মা বিলকিছ আক্তার অ্যানির (২৬) কাছে।

 

গত বুধবার মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আকতার (৪০)। তারই বড় মেয়ে আলফা (৭)। আকতারের মৃত্যুর সংবাদে আকতারের গ্রামের বাড়িতে চলছে আহাজারি। নিহতের স্ত্রী বিলকিছ আক্তার অ্যানি স্বামীর মৃত্যুর খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

 

পরিবারের সবার কান্না দেখে বিচলিত শিশু আলফা। সে জানে না তার বাবা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আর জীবিত ফিরে আসবেন না। আলফা ছাড়াও আকতারের রয়েছে ২ বছর বয়সি আরো একটি শিশু কন্যা। তার নাম ইকনাত হোসেন আকিলা।

 

আকতার দীর্ঘ ১১ বছর ধরে আরব আমিরাতে ছিলেন। এর মধ্যে ৮ বছর আগে তিনি ধলই ইউনিয়নের হিম্মত চৌধুরী বাড়ির মরহুম কবির আহম্মদের ছোট মেয়ে অ্যানিকে বিয়ে করেন। আকতার পেশায় প্লাম্বার মিস্ত্রী। তিনি ফ্রি ভিসা নিয়ে আবুধাবিতে কর্মরত ছিলেন। প্রায় প্রতিবছরই তিনি দেশে আসতেন। কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে আগামী সপ্তাহেই তার দেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু আবুধাবিতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আকতারকে চিরতরে না ফেরার দেশে চলে যেতে হয়।

 

আকতারের স্ত্রী অ্যানি বলেন, ‘দুই মেয়েকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য আমরা হাটহাজারী সদরের শাহজালাল পাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছি। মেয়ে আলফা হাটহাজারী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্বামী প্রায় সময়ই মোবাইলে খোঁজ খবর নিতেন। মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতেন। এখন তো আমি স্বামী হারিয়েছি। আমার মেয়েদের কী হবে? আমার স্বামী আগামী ১০ সেপ্টেম্বর দেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের একা করে তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন।’

 

আকতার হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নের কাটিরহাট হাদুর দীঘির পাড়ের সোনা গাজী তালুকদার বাড়ির আবদুল হালিমের ছেলে। ছয় ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে আকতার হোসেন তৃতীয়। তার তিন ভাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকেন। আকতার তার ছোট ভাই রহমতউল্লাহর সঙ্গেই থাকতেন।

 

গত বুধবার প্রাইভেট কারযোগে আবুধাবি থেকে আল-আইন যাওয়ার সময় বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন আকতার। আকতারকে বহনকারী গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের স্থাপনায় আঘাত করলে আরোহী আকতারসহ মোট তিনজন নিহত হন। নিহত অপর দুজনের বাড়িও চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায়। নিহত অপর দুজন হলেন- নোয়াপাড়া এলাকার মুহাম্মদ ইলিয়াছ (৪৫) ও মুহাম্মদ ফরহাদ হোসেন (২৮)। নিহতদের মরদেহ আল আইন জিমি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

 

 

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫/রেজাউল/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়