ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শিলাবৃষ্টি আর আগাম কালবৈশাখী

‘কালোসোনা’য় স্বপ্ন ফিকে কৃষকের

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৮, ২৯ মার্চ ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘কালোসোনা’য় স্বপ্ন ফিকে কৃষকের

তানজিমুল হক, রাজশাহী : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মহিষালবাড়ি এলাকার তরুণ পেঁয়াজ বীজ চাষি আবদুল হান্নান। গত সাত বছর ধরে তিনি পেঁয়াজ বীজের চাষ করছেন। এ বছরও আট বিঘা জমিতে তার পেঁয়াজ বীজ রয়েছে। কিন্তু এই আট বিঘা জমি থেকে তার চার মণ বীজও পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সম্প্রতি রাজশাহী অঞ্চলে দুই দফা বৃষ্টি ও শিলার কারণে তার পেঁয়াজের ফুলে পোকা ধরেছে। ফলে নিশ্চিত ফলন বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার খেত। অথচ এই জমিতে তিনি ইতিমধ্যেই চার লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছেন। বিনিয়োগ করা এ টাকা তোলার দুশ্চিন্তায় মাথায় হাত পড়েছে এ তরুণ চাষির।

দুর্দশার এ চিত্র শুধু হান্নানের একার নয়, তার মতো পেঁয়াজের সাদা সাদা ফুলের ওপর দিনবদলের স্বপ্ন দেখা রাজশাহী অঞ্চলের আরো শত শত চাষির স্বপ্নগুলো এখন ফিকে হয়ে এসেছে। তারা দিন কাটাচ্ছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক যুগ থেকে রাজশাহী অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ বীজ চাষ। এ অঞ্চলে প্রতিবছরই বাড়ছে পেঁয়াজ বীজের চাষ। বিশেষ করে জেলার গোদাগাড়ী, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, চারঘাট ও বাগমারা উপজেলায় ঘটেছে পেঁয়াজ বীজ চাষে নীরব বিপ্লব। চাষের মৌসুমে এসব উপজেলার বিল এলাকাগুলোতে যতদূর চোখ যায়, শুধু সাদা সাদা পেঁয়াজ ফুলের দেখা মেলে।

এ ছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন বীজ কোম্পানির পক্ষ থেকেও এ অঞ্চলে প্রদর্শনী প্লট করে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করা হয়। জাতীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজের আট ভাগ উৎপাদিত হয় এ জেলা থেকে। পেঁয়াজ বীজ চাষ লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা একে অন্যতম অর্থকরি ফসল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। একযুগে পেঁয়াজ বীজ চাষে লাভবানও হয়েছেন অসংখ্য কৃষক। তাই এটি এখন রাজশাহী অঞ্চলের চাষিদের কাছে ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

কিন্তু এ বছর বৈরি আবহাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের ‘কালো সোনার’ খ্যাতি। সম্প্রতি দুই দফায় ঘটে যাওয়া শিলাবৃষ্টি ও আগাম কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বীজের খেত। সেই সঙ্গে ফিকে হয়ে গেছে কৃষকের সাজানো স্বপ্নগুলোও। আগের বছরগুলোতে পেঁয়াজ বীজ খেতে থাকতেই বিভিন্ন বীজ কোম্পানির প্রতিনিধিরা এ অঞ্চলের বীজ কেনার জন্য চাষিদের বাড়িতে ঢু মারতে শুরু করলেও এবার কোথাও দেখা মিলছে না তাদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর তিন হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে। কিন্তু গত ৬ মার্চের হঠাৎ আগাম কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বীজ খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।  কোনো কোনো এলাকায় বিঘায় ১০ কেজিও বীজ না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থা বিশেষ করে জেলার গোদাগাড়ী ও পুঠিয়া উপজেলায়।

গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের মেডিকেল মোড় এলাকার পেঁয়াজ বীজ চাষি মামুন-অর-রশিদ জানান, তিনি এ বছর আট বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় ইতোমধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন। সবকিছু ঠিকই ছিল। জমিতে পেঁয়াজের থোকাও ফুটেছিল বেশ ভালো। কিন্তু গত ৬ মার্চের শিলাবৃষ্টিতে তার জমির ৮০ ভাগ থোকা নষ্ট হয়ে গেছে।

পুঠিয়ার ঝলমলিয়া এলাকার চাষি শাহাদাত আলী জানান, পেঁয়াজ বীজ চাষে যেমন লাভ বেশি তেমন ঝুঁকিও আছে।  রোপণের পর থেকে প্রায় পাঁচ মাস সময় লাগে বীজ ঘরে তুলতে। দীর্ঘ এই সময়ে সামান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগেই ঘটতে পারে ফলন বিপর্যয়। আর এবার তাই ঘটেছে।

এদিকে পেঁয়াজ বীজ চাষকে একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে নিয়েছিলেন জেলার দুর্গাপুর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের যুবক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, থোকা চাষে উৎপাদন ব্যয় বেশি। তাই ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। ঠিকমতো ফসল ঘরে তুলতে পারলে ঋণ পরিশোধ করেও দুই লাখ টাকা লাভ হতো। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সব শেষ হয়ে গেলো।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, রাজশাহীর অতিরিক্ত উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, আগাম কালবৈশাখীতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও পুঠিয়া উপজেলার পেঁয়াজ বীজ খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কিছুটা আগে হলেও পর্যায়ক্রমে পরিপক্ক খেত থেকে ফসল কেটে নেওয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 

 

 


রাইজিংবিডি/রাজশাহী/২৯ মার্চ ২০১৬/তানজিমুল হক/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়