ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘পদ্মাবতীর আখ্যান’র চমকপ্রদ পরিবেশনা

শেখ জাহিদ আজিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৮, ৪ মে ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘পদ্মাবতীর আখ্যান’র চমকপ্রদ পরিবেশনা

পদ্মাবতীর আখ্যান নাটকের একটি দৃশ্য

শেখ জাহিদ আজিম : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন মিলয়াতনে মঞ্চ নাটকের প্রদর্শনী নিত্যদিনের ঘটনা। এখানে বিভিন্ন আঙ্গিকের, বিভিন্ন অঞ্চলের, বিভিন্ন নাট্যদলের, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাটক মঞ্চায়িত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২ ও ৩ মে শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চায়িত হলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের নাটক ‘পদ্মাবতীর আখ্যান’।

আর এই জন্যই বোধ হয় বিপুল দর্শক সমাগম। কেননা বাংলা মঙ্গলকাব্য ধারার মধ্যে মনসা মঙ্গল কাব্য ধারাটি ছিল জনসাধারণের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। নাটকটি মূলত কবি বিজয় গুপ্ত ও রাধানাথ রায় চৌধুরীর পদ্মাপুরাণ অবলম্বনে নাটকের নির্দেশক নুসরাত শারমিন তানিয়া রচনা ও পরিকল্পনা করেছেন।

নাটকটির মান বিচার করতে গেলে মূলত দুটি দিক প্রধানত বিবেচ্য বিষয়। প্রথমত, পারফরমেন্সের গুণগত মান, দি¦তীয়ত, নাটকের নয়া ইন্টারপ্রিটেশন বা ব্যখ্যা। ঢাকার মঞ্চে এর আগেও মনসা মঙ্গলকাব্য নির্ভর বহু নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে। তন্মধ্যে যে গুটি কয়েক নাটক সার্থক ও দর্শক প্রিয়তা পেয়েছে, তার সাথে ‘পদ্মাবতীর আখ্যান’ তার প্রযোজনা গুণে যুক্ত হবে বৈকি।

নাটকটির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পারফরম্যান্স বা অভিনয় সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য অবশ্যই তাত্ত্বিক পাঠের হিল্লে নিতে হবে। যদিও নাটকটি একটি লোকজ-স্টাইলাস পারফরমেন্স কিন্তু অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় দেখে যে কোন নাট্যতাত্তিক মাত্রেই আঁচ করতে পারবেন, নির্দেশক স্ত্যানিস্লাভস্কি থেকে শুরু করে মেয়ারহোল্ড, গ্রটস্কি, তাদাসি সুজকি কোন তত্ত্বই সম্ভবত বাদ দেন নি  নাটকটি নির্মাণে। যার প্রতিফলন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সুনিপূন অভিনয়। বিশেষত নাটকের মনসা চরিত্রে অভিনয় করেছেন, কবিতা সরকার যার পারফরমেন্সে আমরা তাদাসি সুজকির এনিমেল এনার্জি বা জান্তব শক্তির চুড়ান্ত প্রয়োগ দেখতে পাই। অন্যদিকে চাঁদ সওদাগরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সাদী মো. শুভ যিনি তার চরিত্রে ছিলেন যথেষ্ট ফোকাস ও মনোযোগী। তার এনার্জি স্তরই তাকে অভিনয়ের  চুড়ান্ত সীমা ছুতে সহযোগিতা করে। এ ছাড়া নেতা চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন সুমাইয়া হাসমি ইরা তার শারিরিক নমনীয়তাই তার অভিনয়ের প্রধান সহায়িকা হিসেবে গন্য। প্রকৃতপক্ষে, নাটকের বন্দনা থেকে মঙ্গলগীত পর্যন্ত দর্শক কখনো চোখের পাতা ঘোরানোর সময় পায় নি শুধু অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় গুণে।

দ্বিতীয়ত, নির্দেশক নাটকটির যে নয়া ব্যখ্যা দান করেছেন, যার দরুণ ধর্মীয় লৌকিক মিথকে ছাড়িয়ে একটি সার্বজনীন পরিবেশনায় পৌছুতে পেরেছে। নাটকের মূল কাহিনি যদিও পূজা গ্রহণ ও পূজা দান। কিন্তু নির্দেশক একে ক্ষমতার লড়াই হিসেবেই দেখেছেন। সমাজে যেমন ক্ষমতাবানরা চিরকাল অন্যদের অধীনস্ত রেখে আত্মসুখ পান, বিনিময়ে হয়তো কোনো করুণার ছিটেফুটা সাধারণ জনগনকে দেয়। ঠিক তেমনি দেবী মনসা জোর করে হলেও চাঁদ সওদাগরের নিকট হতে পূজা লাভের চেষ্টা করেন এবং পূজা পেলে হয়তো কোন বর দান করেন।

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ মে ২০১৬/জাহিদ/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়