ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘বরিশালকে দেশের সেরা নগরী হিসেবে গড়ে তুলব’

জে. খান স্বপন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১২, ২ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বরিশালকে দেশের সেরা নগরী হিসেবে গড়ে তুলব’

সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল (ছবি : স্বপন)

২০১৩ সালের ১৫ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত আহসান হাবিব কামাল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চেয়ে ১৮৬৫১ ভোট বেশি পেয়েছিলেন তিনি।

 

এর আগে তিনি জাতীয়তাবাদী নাগরিক কমিটির প্রার্থী হয়ে ১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ একযুগ বরিশাল পৌরসভার প্রশাসক, চেয়ারম্যান এবং নবগঠিত সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

বরিশালে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এই মেয়র বরিশালবাসীর জীবন-যাত্রার মানোউন্নয়নে আগামী দিনে তার করণীয় সম্পর্কে রাইজিংবিডি ডটকমের সঙ্গে একান্ত স্বাক্ষাৎকারে নানান দিক তুলে ধরেন। বরিশালে দায়িত্বরত রাইজিংবিডির নিজস্ব প্রতিবেদক জে. খান স্বপন স্বাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন।

 

রাইজিংবিডি : নগর উন্নয়নে বরিশাল সিটি করপোরেশনবাসীর দাবিগুলোকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

 

আহসান হাবিব কামাল : বরিশাল সিটি এলাকা উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে প্রথমে প্রয়োজন একটি মাস্টার প্লান করা। সে জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ উন্নয়ন কাজ করতে চাই। দক্ষ পরিকল্পনাবিদের মাধ্যমে আমি যে মাস্টার প্লান করব তাতে শহরের জলাবদ্ধতা দূর করা, রাস্তাঘাট বড় করা, শহরে খাবার পানি সরবরাহ, ভোলা থেকে গ্যাস এনে তা বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা, শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও যুবসমাজকে ধ্বংসকারী মাদক বন্ধ করে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে। এক কথায়, নাগরিকরা যাবতীয় নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

 

রাইজিংবিডি : কবে নাগাদ এ মাস্টার প্লানের কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন?

 

আহসান হাবিব কামাল : খুবই দ্রুততার সঙ্গে বরিশালের সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবদিক, ধর্মীয়, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষার্থীসহ সমাজের সকল শ্রেণির জনগণের সঙ্গে পৃথক মতবিনিময় সভা করে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হবে। পরামর্শগুলো দক্ষ পরিকল্পনাবিদদের কাছে তুলে ধরা হবে। এরপরই মাস্টার প্লান তৈরি করা হবে। এ মাস্টার প্লান নগরীর সকল শ্রেণি পেশার মানুষের উন্নয়নে তৈরি করা হবে।

 

রাইজিংবিডি : বিগত সিটি মেয়রের সময় কি মাস্টার প্লান ছিল না?

 

আহসান হাবিব কামাল : বিগত মেয়র শওকত হোসেন হিরন এখন বেঁচে নেই। আমি তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, তিনি বেঁচে থাকতে নির্বাচনকালীন এ শহরের অনেক উন্নয়নের কথা বলতেন। কিন্তু শহরবাসী উন্নয়নের নামে যা দেখেছে তা হচ্ছে জনগণের জমি দখল, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না দেওয়া, খালকে ড্রেনে পরিণত করা ইত্যাদি।

 

পাশাপাশি বর্ধিত অঞ্চলকে বঞ্চিত রেখে শহরের মধ্যাঞ্চলে উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। আবার সেই উন্নয়ন কাজের নামে অর্থ লুটপাট ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ পাওয়া গেছে জনগণের মুখে মুখে। এটিকে অবশ্যই মাস্টার প্লান বলে না। তাই আগামীতে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করা আমার মূল লক্ষ্য।

 

রাইজিংবিডি : আগামী ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেটে নগরবাসীর জন্য কী চমক থাকছে?

 

আহসান হাবিব কামাল : আগামী মাসের মধ্যেই ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করব। আর এ বাজেটের আকার হবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিগত অর্থ বছরের থেকে বৃহৎ। এটাই হবে নগরবাসীর প্রথম চমক। এরপর এবারের বাজেটে আমার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বেশ কিছু নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যে প্রকল্পগুলো বিগত ১১টি বাজেটে উপস্থাপন করা হয়নি। এ ছাড়াও আসন্ন বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি সিটির বর্ধিত এলাকার উন্নয়নে। বিশেষ করে ২০০১ সালে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করার পর যে সকল বর্ধিত এলাকায় আদৌ উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সেই সব ওয়ার্ডে। বিশেষ বরাদ্দ ও নগরীর তিনটি প্রবেশ দ্বারে সিটি গেট স্থাপন করব। যাতে বাইরে থেকে কেউ এই শহরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে শহরের পরিচিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন।

 

রাইজিংবিডি : বরিশালে অর্থনৈতিক ও সমগ্রিক উন্নয়নে কী কী প্রতিবন্ধকতা রয়েছে?

 

আহসান হাবিব কামাল : প্রথমত বরিশাল নদী পরিবেষ্টিত এলাকা। দ্বিতীয়ত বরিশালের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধান বাধা হলো এখানে প্রাকৃতিক গ্যাস না থাকা। যার কারণে এখানে এখনো বড় ধরনের শিল্প করাখানা গড়ে ওঠেনি। গ্যাস না থাকায় এখানে শিল্পপতিরাও বিনিয়োগ করতে আসেন না। তৃতীয়ত রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। তাই ভোলা থেকে বরিশালে গ্যাস সরবরাহ করা, পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং পায়রা বন্দর হলে বরিশাল অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশীল হবে। তখন বরিশাল সিটি করপোরেশন হয়ে উঠবে দেশের সবচেয়ে আধুনিক ও সমৃদ্ধশীল নগরী। তবুও পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে সকল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

 

রাইজিংবিডি : বর্ষার মৌসুমে নগরীতে জলাবদ্ধতা রোধে আপনার কী কী পদক্ষেপ রয়েছে?

 

আহসান হাবিব কামাল : আপনি জানেন, গত কয়েক দিনে বরিশালে রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে। এতে নগরীর নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সৃস্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। তবে বৃষ্টি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরীর ড্রেনগুলো দ্রুত পরিছন্ন করায় দ্রুত পানি নেমে গেছে। এই জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ বিগত দিনে বরিশালের বিভিন্ন খাল ও পুকুর ভরাট। তাই বর্তমানে যে কয়টি খাল রয়েছে সেগুলো পূর্ণ খননের প্রকল্পের কাজ চলছে। পাশাপাশি ইতিমধ্যে নগরীর আর একটি পুকুরও ভরাট করা যাবে না বলে নগরবাসীকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে আগামীতে জলাবদ্ধতা রোধ করা সম্ভব হবে।

 

রাইজিংবিডি : পানি সংকট দূরীকরণে আপনার নতুন পদক্ষেপ কী?

 

আহসান হাবিব কামাল : বরিশাল নগরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে নির্মিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। জুলাই মাসের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি ট্রিটমেন্ট প্লান্টের একটি চালু করা হবে।

 

এই দুটি শোধনাগার থেকে দৈনিক ৬ কোটি ৪০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদিত হবে। এতে করে নগরবাসীর পানির চাহিদা মিটবে। বর্তমানে নগরীতে মোট পানির চাহিদা দৈনিক এক কোটি ৩০ লাখ গ্যালন।

 

রাইজিংবিডি : আগামীতে নগরবাসীর সুযোগ সুবিধার জন্য আপনার বিশেষ পদক্ষেপ কী?

 

আহসান হাবিব কামাল : বরিশালবাসী জানেন ১৪৩ কোটি ১৮ লাখ টাকার দেনা ঘাড়ে নিয়ে ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর আমি এখানকার মেয়রের দায়িত্ব বুঝে নিই। এরপর ধীরে ধীরে মাত্র এক থেকে দুই বছরের মধ্যে দেনা পরিশোধ করতে সক্ষম হই। সম্প্রতি সময়ে জাতীয় নির্বাহী কমিটি (একনেক) বরিশালের ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণসহ সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। বরাদ্দ পেলে নগরীর কাশিপুরে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা শুরু করা হবে। এরপর কাশিপুরের গড়িয়ারপাড় এলাকায় প্রস্তাবিত বিভাগীয় বাস টার্মিনাল নির্মাণ ও নথুল্লাবাদে নতুন নগর ভবন নির্মাণ কাজ শুরুর বিষয়টি আগামী বাজেটে রাখা হবে। পাশাপাশি এখনো নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে।

 

রাইজিংবিডি : বর্তমানে নগরীতে সিটি সার্ভিস বন্ধ, এতে নগরবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। আগামীতে সিটি সার্ভিস চালুর নতুন কোনো পদক্ষেপ আছে কী?

 

আহসান হাবিব কামাল : বর্তমানে বরিশালে সড়কের তুলনায় যানবাহন অনেক বেশি। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশন থেকে দেওয়া রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত অটোরিক্সার চেয়ে চার গুন অবৈধ অটোরিক্সা রয়েছে। ফলে বিভিন্ন স্থানে এইসব অবৈধ অটোরিক্সা যানজট সৃস্টি করছে। তাই ১ জুলাই থেকে রেজিস্ট্রেশন বিহীন অটোরিক্সা চলাচলে নিশেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে অটোরিক্সার সংখ্যা কমে যাবে। তখন সিটি সার্ভিস চালুর প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

রাইজিংবিডি : এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

 

আহসান হাবিব কামাল : আপনিসহ রাইজিংবিডি পরিবারকে ধন্যবাদ।

 

 

 

রাইজিংবিডি/বরিশাল/২ জুলাই ২০১৫/জে. খান স্বপন/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়