ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘বেয়াদ্দব মাইয়া! চোখ না ঢাইকা নাক ঢাকে’

রণজিৎ সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪২, ২৬ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বেয়াদ্দব মাইয়া! চোখ না ঢাইকা নাক ঢাকে’

রণজিৎ সরকার : কলেজগেট দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। হঠাৎ দাঁড়ালাম। একটি লোক দেয়ালে লিখছেন, ‘যৌতুক চাওয়া ভিক্ষা চাওয়া’। আমি দূর থেকে দেখছি। ইচ্ছা হলো তার সঙ্গে কথা বলতে। একটু এগিয়ে গেলাম। ‘সৌজন্য নিয়াজী আর্ট’ লেখাটার ওপর তুলির আঁচড় দিয়ে দাঁড়ালেন।
ভাবলাম, লেখা হয়তো শেষ। এখন তার সঙ্গে কথা বলা যায়। এগিয়ে গেলাম লোকটির কাছে। তারপর বললাম, কেমন আছেন?
লোকটি বললেন, ‘ভালো আছি। আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।’
আমাকে আপনি চিনতে পারবেন না। আপনার সঙ্গে আগে কখনো দেখা হয়নি, কথাও হয়নি কখনো আপনার।
‘ও আচ্ছা।’
হ্যাঁ, আমি এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম। আপনার লেখা দেখে দাঁড়ালাম। কিছু কথা বলতে চাই আমি আপনার সঙ্গে।
‘কী কথা বলবেন?’
আপনি দেয়ালে লিখছেন ‘যৌতুক চাওয়া ভিক্ষা চাওয়া’- এই কাজটা কি আপনাকে কেউ টাকা দিয়ে করাচ্ছেন?
‘না।’
আমি অবাক হয়ে বললাম, তাহলে আপনি নিজ উদ্যোগে করছেন?
লোকটি বললেন, ‘বলতে পারেন।’
নিজের পকেটের টাকা দিয়ে এ কাজ করেন?
লোকটি মুচকি হেসে বললেন, ‘যৌতুক নিয়ে বিয়ে করা মানেই ভিক্ষা করা, যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি- যৌতুকবিরোধী এসব  স্লোগান বাংলাদেশের অনেক স্থানেই আমি নিজ উদ্যোগে লিখে যাচ্ছি দীর্ঘ ২১ বছর ধরে।’
লোকটির কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। বলে কী! দীর্ঘ ২১ বছর নিরলসভাবে কাজটি করে যাচ্ছেন। বললাম, আপনার বাড়ি কোথায়?
‘আমার বাড়ি ভৈরব।’
এ কাজ কেন করেন আর আপনার উদ্দেশ্য কী?
‘সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এ কাজ করে আসছি। সুযোগ পেলেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে লিখি। ছোটবেলায় আমাদের বাজারে পত্রিকায় যৌতুকের জন্য নির্যাতনের খবর পড়ে মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠত। সেখান থেকেই মনে মনে পণ করি, নিজেও যৌতুক নিয়ে বিয়ে করব না। এবং অন্যদের এ বিষয়ে সচেতন করে তুলব। সেই থেকে যৌতুকের বিরুদ্ধে রং আর তুলি হাতে তুলে নিয়েছি। আমার একটা আর্ট সেন্টার আছে ভৈরবে, নিয়াজী আর্ট।’
ও, আচ্ছা, আপনি কি পারবেন বাংলাদেশের সব কয়টা জেলায় গিয়ে লিখতে?
‘ইচ্ছা আছে আমার, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে যৌতুকবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাব। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটা জেলায় লিখেছি। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কত দূর করতে পারি। আল্লাহ যদি শরীর ভালো রাখেন তা হলে পারব।’
অবশ্যই পারবেন। আচ্ছা, আপনাকে একটা কথা বলতে চাই?
‘কী বলেন?’
আপনি কারো কাছ থেকে কি আর্থিক সাহায্য নিতে চান না।
‘না। এই কাজ করতে অর্থে প্রয়োজন হয় না তেমন। শুধু রং আর তুলি কিনতে কত আর লাগে। এটা আমি নিজেই ব্যয়ভার বহন করতে পারি।’
বাহ্, শুনে খুশি হলাম। আমরা যে দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছি, হঠাৎ একটা লোক দৌড়ে এল। দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়াতেই বুঝতে পারলাম। লোকটা প্র¯্রাব করছে। পাশ দিয়ে একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে মুখে ওড়নার আঁচল রেখে।
লোকটি প্রস্রাব শেষ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘বেয়াদ্দব মাইয়া! চোখ না ঢাইকা নাক ঢাকে, কত বড় ফাজিল।’ এই বলে লোকটি চলে গেল উত্তর দিকে।
লোকটা কথা শুনে আমি আর নিয়াজী হেসে ফেললাম।
তারপর নিয়াজী ভাই বললেন, ‘ভাই, দেয়াল লেখার সময় কত রকমের ঘটনা ঘটে। বলে শেষ করা যাবে।’
আচ্ছা, ফুটপথে যত্রতত্র মূত্রত্যাগ ঠেকাতে দেয়ালে বাংলার পরিবর্তে আরবি লেখা হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে। আপনি কি সে কাজ পেয়েছিলেন?
‘হ্যাঁ, কিছু কাজ করেছি।’
আচ্ছা, আপনি এগিয়ে যান। আপনার জন্য আমার সব সময় শুভ কামনা থাকল।
নিয়াজী মাথা নাড়ালেন। আমি নিয়াজীর মহতী উদ্যোগ কথা ভেবে হেঁটে চলে যেতে লাগলাম।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জুলাই ২০১৫/কমল কর্মকার

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়