ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

‘ম্যালেরিয়া মুক্ত বিশ্ব’ সময়েরই দাবী

টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ২৫ এপ্রিল ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ম্যালেরিয়া মুক্ত বিশ্ব’ সময়েরই দাবী

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস ২০১৫ এর একটি লোগো

শাহ মতিন টিপু : মশাবাহিত সংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে ম্যালেরিয়া অন্যতম। যার জন্য দায়ী প্লাজমোডিয়াম গোত্রের প্রোটিস্ট নামের একটি অণুজীব। এনোফিলিস নামক স্ত্রী মশার কামড়ে এই রোগ হয়। বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ। যেহেতু মশার কামড়ে এই রোগটি হয় এবং জ্বর এর প্রধান লক্ষণ তাই রোগটি ম্যালেরিয়া জ্বর নামেই প্রচলিত।

 

‘ম্যালেরিয়া মুক্ত বিশ্ব’ এই স্বপ্নকে সামনে রেখে এবারের ২৫ এপ্রিল, বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস পালন করতে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ)। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ইনভেস্ট ইন দ্যা ফিউচার, ডিফিট ম্যালেরিয়া’। উল্লেখ্য যে ২০০৭ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) প্রতি বছর ২৫ এপ্রিল বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস পালন করে। একই সাথে বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়।

 

এ বছর মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ)এর সম্মেলনে ২০১৫ পরবর্তী সময়ে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে করনীয় নতুন কর্ম পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হবে। এই নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বতর্মানের তুলনায় শতকরা ৯০ ভাগ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

 

গত এক দশকে চারটি দেশকে ‘ম্যালেরিয়া মুক্ত’ স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ২০১৫ পরবর্তী পরিকল্পনায় আরো ৩৫ টি দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া মুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।

 

ম্যালেরিয়ার আলামত এরকম- দুইদিনের বেশি কাঁপুনিসহ জ্বর কিংবা হজমের গোলযোগ দেখা যায়। শরীরে ক্লান্তিআসে। এছাড়াও রক্ত শূণ্যতা, কিডনি সমস্যা, শ্বাস কষ্ট, জন্ডিস, খিঁচুনি, রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়।

 

২০০৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদের ৬০তম অধিবেশনে হু-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো বিশ্বে ম্যালেরিয়া রোধ ও সচেতনতা বাড়াতে দিনটির সূচনা করে। হু-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের ১০৬টি দেশে প্রায় ৩৩০ কোটি মানুষের ম্যালেরিয়া সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে।

 

ম্যালেরিয়া রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিবছরের মত এবারো বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস’২০১৫। এ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ম্যালেরিয়াপ্রবণ ১৩ জেলা এবং ৭০ উপজেলার ৬২০টি ইউনিয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

 

সুখবর এই যে, এমডিজি‘র লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালের ভেতরে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর হার ৬০ শতাংশে কমিয়ে আনার কথা থাকলেও বাংলাদেশ ২০১২ সালে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

 

জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সূত্রের খবর অনুযায়ী, গত এক বছরে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ২০১২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৫৬ লাখ। আর বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছেন ১ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। এমডিজি অর্জিত হয়েছে এখন লক্ষ্য ম্যালেরিয়া মুক্ত বাংলাদেশ। যা সবার সহযোগিতায়,খুব দ্রুত অর্জন করা সম্ভব।

 

ম্যালেরিয়া থেকে নিরাপদ থাকতে হলে কিছুটা নিজেরও সচেতনতা প্রয়োজন। বাড়ির বাইরে গাছের টব ও জলাধারগুলো শুকনো ও পানি শূন্য রাখা, যেসব জিনিসে বৃষ্টির পানি জমে, যেমন ফ্রিজের নিচের ট্রে,ফুলদানিতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। যদি ম্যালেরিয়া ধরা পরে তাহলে উদ্বিগ্ন না হয়ে,সঠিক চিকিৎসা নিলেই ম্যালেরিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

 

এখনো ম্যালেরিয়া পৃথিবীজুড়ে একটি ঘাতকরোগ হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ লোক এ রোগে প্রাণ হারায়। আর ৮৫ ভাগ মৃত ব্যক্তিই হলো পাঁচ বছরের নিচের শিশু। এ রোগ যদিও আফ্রিকা মহাদেশের প্রধান রোগ, তবু এখনো এশিয়া ও ল্যাতিন আমেরিকার বড় অংশজুড়ে রয়েছে ম্যালেরিয়া।

 

সেই প্রাচীনকাল থেকে মানবজাতির জন্য আতঙ্ক হয়ে ছিল আর এখনো ১০৯টি দেশের ৩৩০ কোটি মানুষ রয়েছে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে। অনুমান হলো, প্রতিবছর ৩৫০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন লোক পৃথিবীতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। আর গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলোয় বেড়াতে আসা লোকদের মধ্যে ৩০ হাজার ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ এপ্রিল ২০১৫/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়