ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

‘সাকিব আল হাসান, এই বাংলাদেশ জুস খায় না’

আমিনুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০০, ২৯ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সাকিব আল হাসান, এই বাংলাদেশ জুস খায় না’

বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের উদযাপনের দৃশ্য

আমিনুল ইসলাম : ২০১৪ সালটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ব্যর্থতার একটি বছর। ব্যর্থতার বৃত্তে আটকা পড়েছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ হার, এশিয়া কাপে ভরাডুবি, ভারতের বিপক্ষে সিরিজ হার ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করে বাংলাদেশ।

 

২০১৪ সালের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হেরে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। এরপর এশিয়া কাপেও ভরাডুবি হয় বাংলাদেশের। ২০১২ সালে যে বাংলাদেশ রানার্স আপ হয়েছিল, ২০১৪ সালে এশিয়া কাপে সেই বাংলাদেশ একটি ম্যাচেও জয় পায় নি! এমন কী পুচকে আফগানিস্তানের কাছেও হার মানে ৩২ রানে।

 

এশিয়া কাপ শেষে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, ‘গেইল, ডি ভিলিয়ার্স- কী পাওয়ার ওদের খেলায়! জাতিগতভাবেই আমরা শারীরিকভাবে ওদের চেয়ে পিছিয়ে। জন্মের পর থেকে আমরা খাই সবজি খিচুড়ি...নরম করে রান্না করা। এই তো আমাদের খাওয়া, তাই না! আর ওরা ছোটবেলা থেকে অরেঞ্জ জুস খায়। আমাদের হয়তো পাঁচ-দশ ভাগ শিশু এই খাওয়াটা পায়। আমাদের তো ওই সামর্থ্যটা নেই।’

 

ঘরের মাঠে খেলা কী তাহলে আশীর্বাদের বদলে শুধুই চাপ? এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, ‘ সবচেয়ে ভালো দেশের বাইরে খেলা। দুই বছর দেশে খেলা না হোক। দেশের মানুষের প্রত্যাশা কমে যাক, তাহলে ভালো হবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রত্যাশার সীমাটা কোন পর্যায়ের হওয়া উচিত, এটা আমাদের বোঝা উচিত। হ্যাঁ, আমরা যখন ও রকম খেলোয়াড় তৈরি করব, তখন আমরা বলতে পারব। কিন্তু আমাদের পাইপলাইনে না আছে ও রকম খেলোয়াড়, না আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান অত ভালো, না আমাদের অনুশীলন-সুবিধা ভালো, না আমাদের কোচিং স্টাফ ও রকম বিশ্বমানের। আমরা যারা হয়ে গেছি, যতটুকু হয়েছি ততটুকুই। হয়তো নিজেদের পরিশ্রমে, কয়েকজনের চেষ্টায় আমরা কয়েকজন এই পর্যায়ে এসে গেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমরা কেউ কেউ হয়তো একটু উন্নতি করতে পারব, কিন্তু দল হিসেবে খুব বেশি এগোব কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।’

 

এরপর বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন আসে। ওয়ানডে ও টেস্টে আলাদা আলাদা অধিনায়ক করা হয়। মুশফিকুর রহিমকে দেওয়া হয় টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব। আর মাশরাফি বিন মর্তুজাকে দেওয়া হয় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব। মাশরাফির অধিনায়কত্বে আস্তে আস্তে পাল্টে যেতে থাকে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ সাফল্যের ভেলায় ভাসছে। ক্রিকেট বিশ্বের বাঘা বাঘা দলকে উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ জিতেছে।

 

২০১৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। এরপর বিশ্বকাপ-২০১৫। সেটা তো রীতিমতো স্বপ্নের মতো। আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড আর ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে ভারতের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয় মাশরাফি বাহিনীকে।

 

বিশ্বকাপ শেষে বাংলাদেশ সফরে আসে পাকিস্তান। ঘরের মাঠে তাদের ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে ১৬ বছর পর জয় পাওয়ার পাশাপাশি নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের পর বাংলাদেশ সফরে আসে ভারত। বিশ্বকাপে আম্পায়াররা বির্তকিত সিদ্ধান্ত না দিলে কোয়ার্টার ফাইনালের ফল যে ভিন্ন হতে পারত সেটার প্রমাণ দেয় টাইগাররা। ঘরের মাঠে ভারতকে নাস্তানাবুদ করে প্রথমবারের মতো ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ। এরপর আসে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের বিপক্ষেও প্রথমবারের মতো ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ।

 

২০১৪ সালের সেই বাংলাদেশ, আর এই বাংলাদেশের মধ্যে বিশাল কোনো পার্থক্য নেই। সেই একই দল, একই খেলোয়াড়। তারা অরেঞ্জ জুস খেয়ে বড় হয়নি। শুধু অরেঞ্জ জুস খেয়ে খেলেননি। কিংবা ঘরের মাঠে দর্শকদের চাপও তাদের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়নি। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের শুধু ব্যক্তিগত উন্নতি হয়নি, সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে দলগত। দল হিসেবে বাংলাদেশের আগানোটা নিয়ে সাকিব যে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন সেই বাংলাদেশের উন্নতি এখন কল্পনাতীত ও ঈর্ষনীয়। এখন আমাদের পাইপলাইনে অনেক খেলোয়াড় রয়েছে। দলে টিকে থাকতে এখন খেলোয়াড়দের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়।

 

মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে সাক্ষাতকারে সাকিবের দেওয়া বক্তব্যকে ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশ দল। যার মূলে রয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফল- বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশ। আমাদের দলের গতি বলে দিচ্ছে, খাবার-দাবারে নয় মনের জোরে স্বপ্নের আরো মাইলফলক ছুঁতে সমর্থ হবে বাংলাদেশ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ আগস্ট ২০১৫/আমিনুল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়