ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কুসিক নির্বাচন : সাক্কু সম্পদে এগিয়ে, সীমা শিক্ষায়

মহিউদ্দিন মোল্লা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ৪ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কুসিক নির্বাচন : সাক্কু সম্পদে এগিয়ে, সীমা শিক্ষায়

মনিরুল হক সাক্কু (বাঁয়ে) ও আঞ্জুম সুলতানা সীমা

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু সম্পদের দিক থেকে এগিয়ে। সাক্কুর চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি। তিনি বিএ, বিএড।

তবে প্রার্থীদের মধ্যে বেশি লেখাপড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) মামুনুর রশীদের। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিএ।

মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু এসএসসি পাস, পেশা ব্যবসা। সীমার পেশা শিক্ষকতা। মামুনের পেশা ওষুধের ব্যবসা। জাসদের (জেএসডি-রব) শিরিন আক্তার এসএসসি পাস, পেশা ব্যবসা। প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোয়েবুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলবি, তিনি পেশায় আইনজীবী।

গত বৃহস্পতিবার রির্টার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এ সব তথ্য জানা গেছে। তবে প্রার্থীদের কয়েকজনের সম্পদের পরিমাণ আরো বেশি হবে বলে সচেতনদের মন্তব্য।

হলফনামার সূত্রমতে, সাক্কুর সম্পদ গত ৫ বছরে বেড়েছে। তবে তার স্বর্ণের পরিমাণ বাড়েনি। আগেরবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে কমিশনে দেওয়া হলফনামায় যে সম্পদের বিবরণ দিয়েছিলেন সাক্কু, এবারের দেওয়া হলফনামায় সে সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে।

এদিকে সাক্কু ছাড়া অন্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে।

সাক্কুর সম্পদ : সদ্য বিদায়ী মেয়র সাক্কুর চেয়ে তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলীর সম্পদ বেশি। বাড়ি ভাড়া থেকে পান ৭২ হাজার টাকা, ব্যাংক সুদ দুই লাখ ১২ হাজার টাকা ও সম্মানী ভাতা ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ রয়েছে ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামে নগদ আছে ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ও ব্যাংকে জমা ৮৭ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র বাবদ সাক্কুর রয়েছে দুই লাখ টাকা। তার স্ত্রীর এ খাতে আছে ২৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। তার গাড়ি আছে দুটি। দুইজনের স্বর্ণ আছে ১০ তোলা করে। তার স্ত্রী ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়েছেন দুই কোটি ১২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে সাক্কুর অকৃষি জমি আছে দশমিক ০৯২৩ একর।

অন্যদিকে তার স্ত্রীর রয়েছে দশমিক ০৫ একর জমি। তার স্ত্রীর আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পদের মধ্যে কুমিল্লা নগরীর রেইসকোর্স এলাকায় সেল নিশা টাওয়ারে রয়েছে তিনটি বাণিজ্যিক দোকান, দ্বিতীয় তলায় ১২টি দোকান, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার সাত হাজার ২৫৬ বর্গফুটের দুটি স্পেস, ফাতেমা জাহানারা টাওয়ারে ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় দুটি ফ্ল্যাট এবং ৩ হাজার ২২৯ বর্গফুটের স্পেস।

সাক্কুর বিরুদ্ধে ঢাকার রমনা থানায় দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি এবং আয়কর আইনে কুমিল্লায় অপর একটি মামলা রয়েছে।

২০১১ সালে সাক্কুর হলফনামায় দেয়া সম্পদের থ্য : সাক্কু বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে ৪৫ হাজার ৬০০ টাকা ও ব্যাংকের এফডিআর থেকে দুই লাখ ৩৫ হাজার ৫৭৫ টাকা সুদ হিসেবে বছরে আয় করে থাকেন। নির্ভরশীল কোনো আয় করেন না। তার নিজ নামে প্রায় এক কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৮৭৫ টাকা ও স্ত্রীর নামে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৭৯৮ টাকা নগদ রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজ নামে প্রায় সাত হাজার ৭৬৫ টাকা ও স্ত্রীর নামে ১৭ লাখ ৭৪ হাজার ২৮২ টাকা জমা রয়েছে। নিজ নামে দুই লাখ টাকার বন্ড এবং ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭ টাকার স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ও স্ত্রীর নামে ১৯ লাখ ১৫ হাজার ১২১ টাকা স্থায়ী বিনিয়োগ রয়েছে। তার নিজ নামে দুটি প্রাইভেটকার আছে। নিজ নামে ১০ তোলা স্বর্ণালংকার, স্ত্রীর নামে একই পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও নিজ নামে ৪৭ হাজার টাকা সমমূল্যের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে বলে অস্থাবর সম্পদ তালিকায় দেখানো হয়েছে।

স্থাবর সম্পদের তালিকায় যৌথ মালিকানাধীন ৬ একর কৃষি জমি, ৩ কাঠার একটি ও ৫ কাঠার ৩টি প্লট, দশমিক শূন্য ১৬ একর, দশমিক ৪১৯৯ একর ও দশমিক শূন্য ৯২৩ একর অকৃষি জমি, স্ত্রীর নামে ৩ কাঠা প্লট, দশমিক শূন্য ৫ একর, দশমিক ১৩০২ একর ও দশমিক ২৩০০৪ একর অকৃষি জমি রয়েছে। এ ছাড়াও স্ত্রীর নামে ৩টি বাণিজ্যিক দোকান, ১৮২৬ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট, নিজ নামে যৌথ মালিকানায় দশমিক শূন্য ৪ একর দালান, দশমিক ৩৬৫০ একর যৌথ মালিকানাধীন অ্যাপার্টমেন্ট (নিজ অংশ ১৭ ভাগের ২ ভাগ) ও নিজ নামে সাত লাখ টাকার মূল্যের দোকানঘর পজিশন নেওয়া হয়েছে বলে স্থাবর সম্পদ তালিকায় দেখানো হয়েছে। তার নামে গাড়ির ঋণ বাবদ পাঁচ লাখ ৮৩ হাজার ৯১৪ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৪২ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যক্তিগত ঋণ রয়েছে। একই সঙ্গে ১৪ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ পৃথকভাবে গাড়ির ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।

সীমার সম্পদ : সীমার বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে আয় ৫৪ হাজার টাকা। তিনি শিক্ষকতা পেশা থেকে আয় করেন আড়াই লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে দুই লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৪৬ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র বাবদ ২০ লাখ টাকা ও স্বর্ণ ৩০ তোলা। এ ছাড়া তার স্বামী নিসার উদ্দিন আহমেদের রয়েছে ৩০ তোলা স্বর্ণ। সীমার স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে অকৃষি জমি ১০ শতক ও টিনশেড দালান। তার স্বামীর অকৃষি জমি আছে ২০ শতক, দুই হাজার বর্গফুটের দ্বিতলবিশিষ্ট আবাসিক দালান ও এক হাজার ২০০ বর্গফুট তিনতলা আবাসিক দালান।

জাসদের শিরিন আক্তারের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ রয়েছে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা, স্বর্ণ ৩০ ভরি ও ঋণপত্র ৫০ হাজার টাকা। আর তার স্থাবর সম্পদ আছে ১৪ শতক জমি।

পিডিপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোয়েবুর রহমানের পেশা থেকে আয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ এক লাখ টাকা ও ব্যাংকে জমা দুই লাখ টাকা।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মামুনুর রশীদের বাড়ি ভাড়া থেকে আয় তিন লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া তার স্ত্রীর শিক্ষকতা পেশা থেকে আয় ৬০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে দেড় লাখ টাকা। মামুনুর রশীদের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ এক লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে দুই লাখ টাকা ও স্ত্রীর স্বর্ণ ছয় লাখ ৩০ হাজার টাকার। আর স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষিজমি ১১ শতক, অকৃষি জমি ৬০ শতক ও স্ত্রীর একটি বাড়ি।

সুজন কুমিল্লা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, প্রার্থীদের হলফনামা সব সময় প্রকৃত তথ্য ওঠে আসে না। প্রকৃত তথ্য দেওয়া প্রত্যেক প্রার্থীর নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

রির্টার্নিং কর্মকর্তা মো. রকিব উদ্দিন মন্ডল বলেন, হলফনামায় সবার সঠিক তথ্য দেওয়া উচিত। হলফনামার তথ্যে গরমিল প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ৫ ও ৬ মার্চ মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই। ১৪ মার্চ প্রত্যাহার। ১৫ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ। ৩০ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।



রাইজিংবিডি/কুমিল্লা/৪ মার্চ ২০১৭/মহিউদ্দিন মোল্লা/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়