ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

অনলাইন ক্লাস: কেউ যেন বঞ্চিত না হয় 

আদিত্য রায় রিপন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০১, ২৫ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ০৬:৫৫, ২৭ আগস্ট ২০২০
অনলাইন ক্লাস: কেউ যেন বঞ্চিত না হয় 

চলছে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ। প্রতিটি দেশেই সরকারি নানা বিধিনিষেধ চলমান। বাদ যায়নি বাংলাদেশও। প্রথম দিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সরকারি অফিস আদালতসহ সব প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। খোলা হয়েছে অফিস-আদালত। কিন্তু এখনও বন্ধ রাখা হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

দীর্ঘ ৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন শিক্ষার্থীরা। বাসায় থেকে একঘেয়েমি এসেছে তাদের। এসব কারণে তাদের লেখাপড়ার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে অনলাইন ক্লাসের। 

ইতোমধ্যেই বেশকিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও অনলাইন ক্লাস শুরু করা হয়েছে। এতে যেমন ফুটে উঠেছে আশার আলো, তেমনি দেখা দিয়েছে নানা সমস্যাও। এসব সমস্যার সঠিক সমাধান না হলে অনলাইন ক্লাসের উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

অনলাইন ক্লাসের জন্য উপযুক্ত সরঞ্জাম সংকটই প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়েন, তারা অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের অধিকাংশেরই বাবা কৃষক, শ্রমিক কিংবা দিনমজুর। অনেকে আবার টিউশন করে নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগানোর পাশাপাশি পরিবারেরও খরচ চালায়। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারাও পড়েছে বিপাকে। তাই তাদের পক্ষে স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপ কিনে ক্লাস করা অনেকটা বাড়তি চাপ। 

পত্রিকায় দেখা যায়, ছেলেকে অনলাইন ক্লাসের জন্য স্মার্টফোন কিনে দিতে বিক্রি করতে হয়েছে নিজেদের শেষ সম্বলটুকুও। অনেক শিক্ষার্থীরই স্মার্টফোন কিনতে না পারার সমস্যাটা রয়েছে। আর যারা কষ্ট করে স্মার্টফোন কিনেছেন, তারা ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনা নিয়ে পড়েছেন আর্থিক সমস্যায়। দেখা যায়, যুম ক্লাউডিং অ্যাপে একটা ক্লাস করতে প্রায় ২৫০-৩০০ মেগাবাইট ইন্টারনেট খরচ হয়। এর মূল্য অপারেটর ভেদে প্রায় ২৫-৩০ টাকা। এভাবে প্রতিদিন ৩/৪ টা ক্লাস করলে প্রতিদিন ৮০-১০০ টাকা খরচ হবে, যা মাস শেষে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩০০০ টাকায়। এই পরিমাণ টাকা অধিকাংশ পরিবারই বহন করতে পারছে না।

অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির হার অর্ধেকের মতো। ফলে অনেক শিক্ষার্থীই শিক্ষার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা ক্লাস চলাকালীন যে সমস্যাটায় ভুগছি, সেটা হচ্ছে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে প্রশ্ন-উত্তর পর্বটা আর আগের মতো হচ্ছে না। যারা ক্লাসে উপস্থিত থাকে তাদেরও অধিকাংশ ঠিকঠাক বুঝতে পারে না।

ক্লাস করতে গিয়ে আমাদের আরেকটি বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সেটা হলো মোবাইল অপারেটরগুলোর নেট স্পিডের বাজে সার্ভিস। যদিও থানা সদরের মধ্যে কিছুটা চলার মতো স্পিড পাওয়া যায়, কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে নেটওয়ার্ক খুবই দুর্বল। নেটওয়ার্ক পেতে ফাঁকা জায়গা কিংবা কোনো গাছে উঠতে হয়। যা ক্লাসের পরিবেশ নষ্ট করে এবং অনলাইন ক্লাসের প্রতি বিরক্তির সৃষ্টি করে।

অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়টা আসলেই ভালো উদ্যোগ। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পুনরায় পড়ালেখার স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনতে অনলাইন ক্লাসের বিকল্প নেই। আর অনলাইন ক্লাসের এই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে হলে অবশ্যই শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যেন বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ক্লাস করতে গিয়ে যেন কোনো পরিবারকে ক্ষতির মুখে পড়তে না হয়। এজন্য যাদের সামর্থ নাই, তাদেরকে স্মার্টফোন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। 

শিক্ষার্থীদেরকে সহজ শর্তে ও বিনা সুদে ল্যাপটপ কেনার সু্যোগ করে দিতে হবে। ইন্টারনেট প্যাকেজ ফ্রি দিতে হবে। আর যদি ফ্রি দেওয়া সম্ভব না হয়, অন্তত সবার কেনার সামর্থ্যের মধ্যে ইন্টারনেট প্যাকেজগুলো দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আর সর্বোপরি প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ভালো নেটওয়ার্ক স্পিড নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই অনলাইন ক্লাসের উদ্দেশ্য সাফল্যমণ্ডিত হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

রাবি/মাহফুজ/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়