ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে ধারাবাহিক : পর্ব-২

ডা. সজল আশফাক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ৩ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে ধারাবাহিক : পর্ব-২

ডেঙ্গু ভাইরাস কি এডিস মশার ক্ষতি করতে পারে?

এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর মশাটির ক্ষতি হয় না। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত এডিস মশা তার পুরো জীবদ্দশায় (১৫-১৬ দিন) মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা রাখে। এমনকি এই সংক্রামক মশার ভবিষ্যৎ প্রজন্মও একইভাবে মানুষকে সংক্রামিত করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মাতে পারে।

এডিস মশা কামড়ালেই কি ডেঙ্গুজ্বর হবে?

এডিস মশা কামড়ালেই ডেঙ্গুজ্বর হবে না। মানুষের ডেঙ্গুজ্বর হওয়ার জন্য প্রথমে মশাটিকে এডিস মশা হতে হবে; তারপর সেই মশাটি ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হতে হবে এবং ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত মশাটি মানুষকে অবশ্যই কামড়াতে হবে। সাধারণ এডিস মশা অর্থাৎ ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত নয় এমন এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গুজ্বর হবে না। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৮-১১ দিনের মধ্যেই এডিস মশা কামড়ের মাধ্যমে মানুষকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত করার যোগ্য হয়। কিন্তু ডেঙ্গু ভাইরাস যদি মশাটির মুখে অর্থাৎ কামড় দেয়ার অংশে লেগে থাকে এবং তখনই যদি মশাটি কাউকে কামড়ে দেয় তাহলে সেই ব্যক্তি সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের জীবাণুবাহী হয়ে পড়বে।

ডেঙ্গুজ্বরে রোগীর উপসর্গগুলো কেন দেখা যায়?

ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে রক্তনালীতে প্রদাহের সৃষ্টি (ভাসকুলাইটিস) হয়। ফলে রক্তনালীর ভিতর থেকে তরল পদার্থ অর্থাৎ রক্তের জলীয় অংশ (প্লাজমা) রক্তনালীর বাইরে চুইয়ে বা লিক হয়ে বেরিয়ে আসে। ফলে রক্তের পরিমান কমে যায়, রক্তের পরিমান কমে যাওয়ার জন্য রক্তচাপও কমে যায়। একইসাথে শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বিশেষ করে ব্রেন, কিডনি, লিভার ইত্যাদিতেও রক্ত সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। লিভারে প্রদাহের কারণে সেখান থেকে উৎপাদিত রক্ত জমাট বাঁধার উপাদান তৈরিতে ঘাটতি দেখা দেয়। এছাড়া রক্ত জমাট বাঁধার আরেকটি উপাদান প্লেটিলেটের পরিমান কমে যাওয়ায় রক্তক্ষরণের প্রবণতা বেড়ে যায়। এ কারণে ত্বকের নিচে রক্ত জমে ত্বক ফুলে ওঠে এবং লালাভ চাকার মতো দেখা যায়। এই ধরনের ঘটনা সাধারণত হেমোরেজিক ডেঙ্গু এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে দেখা যায়।

তাছাড়া রক্তনালী চুইয়ে বেরিয়ে আসা রক্তের জলীয় অংশ বা প্লাজমা ফুসফুস, উদর গহ্বর মানে পেটের ভিতরে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জায়গা করে নেয়। কদাচিৎ মস্তিষ্কেও তরল পদার্থ জমতে পারে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কখনো কখনো শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। যে অবস্থাকে বলা হয় মাল্টি অর্গান ফেইল্যুর। মাল্টি অর্গান ফেইল্যুর হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিণাম- মৃত্যু।

ডেঙ্গুজ্বরের উপসর্গ

ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে যে সব উপসর্গ দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে:

ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বর গুরুতর কোনো সমস্যা নয়-

ক. তীব্রজ্বর, জ্বর সাধারণত ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে

খ. বমি, পেটব্যথা ও মাথাব্যথা

গ. কোমর ব্যথা, অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টে ব্যথা। এক্ষেত্রে হাড়ব্যথা এতটাই প্রচণ্ড হয় যে, মনে হয় হাড় ভেঙে গেছে। এ কারণে এই জ্বরকে ‘ব্রেক বোন ফিভার’ বা হাড়ভাঙা জ্বর বলা হয়ে থাকে

ঘ. ৩/৪ দিনের মধ্যেই জ্বর ভালো হয়ে যায়

ঙ. অনেক সময় শরীরের ত্বকে এলার্জি র‌্যাশের মতো দেখা দিতে পারে। এই র‌্যাশগুলো কখনো কখনো চুলকানির উদ্রেক করে

হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বরে যে সব উপসর্গ দেখা দেয় সেগুলো হচ্ছে:

হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বর খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে-

ক. ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বরের উপসর্গগুলোই এক্ষেত্রে আরো তীব্র হয়ে দেখা দেয় এবং সঙ্গে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। বিশেষ করে মাড়ি থেকে রক্তপাত, নাক দিয়ে রক্তপাত, ত্বকের নিচে জমাট বাঁধা রক্তের নমুনা, রক্তবমি, পায়খানার সাথে কালো রক্ত যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিয়ে থাকে

খ. এমনকি রক্তক্ষরণ মস্তিষ্ক এবং হার্টের মধ্যেও হতে পারে

গ. রক্ত ক্ষরণের ফলে শকে (অজ্ঞান হয়ে যাওয়া) চলে গিয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে

ডেঙ্গুজ্বর কীভাবে ছড়ায়?

ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু বা ভাইরাসবাহী এডিস মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড় দিলে সেই ব্যক্তি ৪-৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এই সময়ে ভাইরাসটি দেহে সুপ্তাবস্থায় থাকে বলে কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিটিকে যদি ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত নয় এমন এডিস মশা কামড় দেয় তাহলে সেই মশাটিও ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয় এবং হুল ফোটানোর মাধ্যমে সুস্থ মানুষকে ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রমিত করতে পারে। ডেঙ্গজ্বরের মশা সাধারণত দিনের বেলায়, বিশেষ করে সকাল ও বিকালের দিকে কামড়ায়, তবে অন্য সময়ে যে কামড়ায় না তা নয়।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ আগস্ট ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়