ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ডাকসু নির্বাচন

প্রাণ ফিরে পাক ছাত্ররাজনীতি

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রাণ ফিরে পাক ছাত্ররাজনীতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ মার্চ। সম্প্রতি এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। আর এর মধ্য দিয়ে প্রায় তিন দশকের বন্ধ্যাত্ব ঘুচতে যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তে ডাকসু নির্বাচনের ওপর বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৯ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২ মার্চ।

সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এরপর আর এ নির্বাচন হয়নি নানা কারণে। দীর্ঘ ২৮ বছর পর এখন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। ছাত্র সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন মহল থেকে দীর্ঘদিন ধরে এ নির্বাচনের দাবি তোলা হচ্ছিল। অবশ্য নির্বাচনের তারিখ, ভোট কেন্দ্রসহ কয়েকটি বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। হলের বাইরে ভোট কেন্দ্র করা এবং ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করার দাবি করে আসছে একাধিক ছাত্র সংগঠন। কোনো কোনো ছাত্র সংগঠন নির্বাচনের সময় কিছুটা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করেছিল।

বস্তুতঃ ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ও সহাবস্থান অর্থাৎ সব ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রধানত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। নির্বাচনের আগে সব ছাত্রসংগঠন যাতে ক্যাম্পাসে সমানভাবে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারে, তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র সংগঠনগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরিতে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করা। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও ভূমিকা রয়েছে এক্ষেত্রে।

দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ডাকসু ও ছাত্রসমাজের অনন্যসাধারণ ভূমিকার কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও পরিচালনার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা অর্জন করেন গণতন্ত্রের প্রায়োগিক শিক্ষা। বিকশিত হয় নেতৃত্বের গুণাবলি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর নেতৃত্বে ছিলেন- এমন অনেকেই আজ জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বর্তমান রাজনীতিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়েই রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন।

আমাদের প্রত্যাশা দীর্ঘ বিরতির পর যে ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি ও শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। পাশাপাশি আমরা এ প্রত্যাশা করি যে, এবারের ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রসমাজ তাদের অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২৮ বছর ধরে সুস্থধারার ছাত্র রাজনীতি-সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে যে স্থবিরতা বিরাজমান ছিল তা থেকে উত্তরণ ঘটবে। সাধারণ ছাত্ররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণ করবে। ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ছাত্ররাজনীতি প্রাণ ফিরে পাক। পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়া হোক। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়