ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বই কিনে যেন প্রতারিত না হন পাঠক

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বই কিনে যেন প্রতারিত না হন পাঠক

আবু বকর ইয়া‌মিন : বই মেলায় কার কতটি বই প্রকাশ হয়েছে সেটি বড় কথা নয়। মূলতঃ মানসম্পন্ন বই প্রকাশিত হয়েছে কতটি সেটি বড় কথা। বই প্রকাশ হতে হবে। তবে প্রতিযোগিতামূলকভাবে গণহারে বই প্রকাশ করলেই হবে না। সব বই সব পাঠক নেবেন না। তবে পাঠক যে বইটি কিনবেন সেটিতে যেন পাঠক প্রতারিত না হন সেদিকে লেখকের খেয়াল রাখতে হবে।

কথাগুলো বলছিলেন লেখকদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ডের চেয়ারম্যান পারভেজ রানা।

রাইজিংবিডির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি বইমেলা, লেখালেখি, প্রকাশনা, সংগঠনের কার্যক্রম ইত্যাদি নানা বিষয়ে তুলে ধরেন। সাক্ষাতকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির নিজস্ব প্রতিবেদক আবু বকর ইয়ামিন। 

রাইজিংবিডি : মেলা প্রায় শেষ পর্যায়ে, পুরো মেলার পর্যবেক্ষণ কী?
পারভেজ রানা : পর্যবেক্ষণ ভাল, অনেকে মেলায় আসেন লিস্ট নিয়ে, অনেকে আসেন লিস্ট ছাড়া, বই হাতে নেন, কিছুটা পড়েন, ভাল লাগলে কিনে নেন। প্রতিবার যেমনটি হয় এবারও তেমনটিই মনে হচ্ছে।

রাইজিংবিডি : মেলার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে কিছু বলেন।
পারভেজ রানা : বাংলা একাডেমির যে নীতিমালা সেখানে লেখা থাকে যে জানুয়ারির ২১ তারিখ লটারি হবে। কিন্তু কোনোবারই সেটা সময়মতো হয় না। দেখা যায় প্রতিবারই সেটা দেরি হয়ে যায়। হতে হতে ২৫ তারিখ চলে যায়। শেষ সময়ে এসে স্টল প্রস্তুতির বিষয়ে একটু ঝামেলা লেগে যায়। তাই এ দিকটা আরো আগানো যায় কি না কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত।

রাইজিংবিডি : এক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?
পারভেজ রানা : এই যে এত বড় একটি মেলার আয়োজন। বাংলা একাডেমির বৃষ্টি নিয়ে তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। আগে প্লাস্টিকের ত্রিপল দেওয়া হতো, তাতে অনেক বেশি পানি লিক করতো, ফলে বই ভিজে যেত। এখন টিন দেওয়া হয়, টিনের মাথায় কোনো পাইপ দিয়ে দেওয়া হয় না। ফলে বৃষ্টির পানিগুলো চুইয়ে বইয়ের মধ্যে পড়ে। এটাকে আরো সুন্দরভাবে ডিজাইন করা যেত। কিভাবে ড্রেনেজ করলে পানি পড়বে না, সেটি আয়োজকদের মাথায় থাকা উচিত।

রাইজিংবিডি : মেলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছু বলুন।
পারভেজ রানা : মেলা শুরুর ষষ্ঠ দিন আমার স্টলের সামনে ইট পাতানো হয়েছে। অনেকে মেলায় ঢুকে ঘাস পেরিয়ে এসব স্টলগুলোতে আসতে চান না। এক্ষেত্রে যাদের এসব দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের গাফিলতি বড় কারণ। মেলার সারিগুলো সাজানোর ক্ষেত্রে ডিজাইনারের আরো গুছিয়ে করা উচিত ছিল। যাতে সব স্টলে দর্শনার্থী সমানভাবে যেতে পারে বই দেখতে পারে।

রাইজিংবিডি : গাড়ি পার্কিংয়ের অভাব মেলায় কোনো প্রভাব ‌ফেলে কি?
পারভেজ রানা : বাণিজ্য মেলায় গাড়ি রাখার জন্য অনেক বড় ব্যবস্থাপনা রয়েছে। যার কারণে দর্শনার্থীরা নিশ্চিন্তে মেলায় যেতে পারেন। কিন্তু বইমেলায় এ জাতীয় কোনো আয়োজন নেই। যার কারণে অনেক দর্শনার্থী মেলায় আসতে পারেন না। আমি মনে করি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে দর্শনার্থী আরো বাড়বে। আরো বেশি বেশি বই বিক্রি হবে।

রাইজিংবিডি : লটারি আরো আগে করলে কেমন হয়?
পারভেজ রানা : বাংলা একাডেমি সারা বছর কি কাজ করছে সেটি সার্বিকভাবে দৃশ্যমান নয়। একটা জিনিস দৃশ্যমান যে তারা বইমেলার আয়োজন করে। বাংলা একাডেমি একটা ফরমেটের মধ্যে চলছে। তারা প্রতিবছর যে তারিখে বিজ্ঞাপন দেন, সে তারিখেই বিজ্ঞাপন দেন, প্রতিবছর একইভাবে লটারির তারিখ পেছাচ্ছে। কিন্তু আমরা ভুল থেকে কোনো শিক্ষা নিচ্ছি না।

রাইজিংবিডি : এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্টল বরাদ্দের আবেদনের সুযোগ ছিল। এটা কতটুকু সুবিধাজনক ছিল বলে আপনার মনে হয়।
পারভেজ রানা : আমরা এবার স্টলের আবেদন করেছিলাম অনলাইনে। আবার অনেকে অনলাইনে আবেদন করেন নাই। আমি আমার বাসায় বসে আবেদন করেছি। তারা অনলাইনে আমাকে স্টল পাওয়ার বিষয়টি কনফার্মও করেছে। কিন্তু আমার স্টল নাম্বার কত সেটি তারা অনলাইনে জানাতে পারেনি। আমাকে লোক পাঠিয়ে স্টল নাম্বার জানতে হয়েছে। আমি ব্যাংকে টাকা দিয়েছি সেটি এখন পর্যন্ত দেখানো হচ্ছে নট ভেরিফায়েড। এসব জায়গায় উন্নতি ঘটাতে হবে। তারা চেষ্টা করছে বাট সেটি সঠিক প্রক্রিয়ায় হচ্ছে না বলে আমার মনে হয়।

রাইজিংবিডি : প্রতিবছরতো অনেক বই-ই বের হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে প্রকাশনা ও সম্পাদনার মান নিয়ে পাঠকদের মনে প্রশ্ন থেকে যায়। এ বিষয়ে আপনার মত কী?
পারভেজ রানা : মূলত অফসেট প্রিন্টিং প্রেস হওয়ার কারণে বই ছাপার বিষয়টা অনেক সহজ হয়ে গেছে। এখন অনেকে লেখেন, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন। বাহবা পেলেন। এতে অনেক পাঠক বই কেনার প্রতি আকর্ষিত হয়। কিন্তু তারা মেলায় এসে দেখেন বইটি অনেক অযত্নে অবহেলায় প্রকাশিত। বইয়ের লেখা ভাল হয়েছে। কিন্তু প্রকাশনার মান ভাল হয়নি। এখানে প্রকাশককে আরো পেশাদার হওয়া উচিত।

রাইজিংবিডি : প্রতিবছর বই প্রকাশ নিয়ে অনেক প্রতিযোগিতা লেগে যায়। এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন।
পারভেজ রানা : আসলে কার কয়টা বই প্রকাশ হয়েছে সেটি বড় কথা নয়। মূলত কয়টা মানসম্পন্ন বই প্রকাশিত হয়েছে সেটি বড় কথা। বই প্রকাশ হতে হবে। তবে প্রতিযোগিতামূলকভাবে গণহারে বই প্রকাশ করলেই হবে না। সব বই সব পাঠক নেবেন না। তবে পাঠক যে বইটি কিনবেন সেটিতে যেন পাঠক প্রতারিত না হন সেটিকে লেখকের খেয়াল রাখতে হবে।

রাইজিংবিডি : লেখক হিসেবে আপনার দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে কিছু বলুন।
পারভেজ রানা : লেখার সময় আমি সমাজের প্রতি কতটা দায়িত্বশীল সেটি দেখার বিষয়। বই পণ্য হওয়ার চেয়ে জ্ঞানের আধার হবে এটাই হচ্ছে আসল কথা। পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে গিয়ে একটি বইকে আমরা নষ্ট করে ফেলতে পারি না। লেখালেখির মাধ্যমে আমি সমাজ ও দেশকে ভাল কিছু দিতে চাই। আমি চাই আমার পাঠকরাও যেন ভাল মানের লেখা পান।

রাইজিংবিডি : নবীন লেখকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
পারভেজ রানা : আমরা প্রথমে দেখি বইয়ের কনটেন্ট। বইয়ের কনটেন্ট যেমন ভাল হতে হবে তেমনি তার বই যেন আরেকজন পড়ে সেটি মাথায় রাখতে হবে। আমাদের বইমেলাতে অনেক পাঠক আসেন। যারা এসে বইয়ের ভেতর দু চার লাইন পড়ে যাচাই বাছাই করে বই কিনে। অনেকে আবার বইয়ের প্রচ্ছদ, নামকরণেও আকৃষ্ট হন। বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

রাইজিংবিডি : পাঠকরা এখনো নির্দিষ্ট কিছু লেখকের বইয়ের প্রতিই আকৃষ্ট থাকেন। এটার মূল কারণ কি মানসম্মত নবীন লেখকের অভাব?
পারভেজ রানা : বিষয়টা এমন না আসলে। এক সময় হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবালস স্যারও নবীন ছিলেন। এখানে আসলে পাঠকদের আকৃষ্ট করতে নবীন লেখদের বড় ধরণের ভুমিকা রাখতে হবে। লেখার মান ভাল করতে হবে। পাঠকদের চাহিদা বুঝতে হবে। হঠাৎ হারিয়ে গিয়ে দীর্ঘ সময পর আবার ফিরে আসলে চলবে না। সবসময় পাঠকদের কাছাকাছি থাকতে হবে।

রাইজিংবিডি : রাইটার্স গিল্ডের কার্যক্রম নিয়ে কিছু বলুন।
পারভেজ রানা : রাইটার্স গিল্ড মূলতঃ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে লেখকদের অধিকার নিশ্চিত ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে। আমাদের অনেকগুলো কার্যক্রম রয়েছে। এর মধ্যে একটা বই প্রকাশনা। এছাড়া বানান নিয়ে আমরা কর্মশালা করে থাকি। উচ্চারণ নিয়েও কাজ করতে চাই। লেখকদের অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।

রাইজিংবিডি : ভবিষ্যত পরিকল্পনা?
পারভেজ রানা : আমরা দেশব্যাপী পাঠক সৃষ্টি করতে চাই। পাঠকদের কাছে যেতে চাই। খুলনা, চট্টগ্রাম, ফেনীসহ বিভিন্ন বইমেলায় আমরা অংশগ্রহণ করছি। পাঠকদের কাছে পৌঁছানো মূল টার্গেট। সেটা শুধু বইমেলা নয়, নানভাবে তাদের সাথে মতবিনিময় করে, তাদের বুদ্ধি পরামর্শ নিয়ে রাইটার্স গিল্ডকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

রাইজিংবিডি : আপনাকে ধন্যবাদ।
পারভেজ রানা : রাইজিংবিডিকেও ধন্যবাদ। 




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/ইয়ামিন/হাসান/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়