ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-৪)

মোহাম্মদ তৌহিদ, চীন থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৫ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ০৫:০৪, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-৪)

মহাপ্রাচীর (The Great Wall of China), ( ছবি: ইন্টারনেট)

বেইজিংয়ের সংস্কৃতি ও পর্যটন আকর্ষণ: সংস্কৃতি শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক। সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো সমাজের সাহিত্য, সংগীত, কলা, ক্রীড়া, মানবিকতা, জ্ঞানের উৎকর্ষ ইত্যাদিকেই এক শব্দে সংস্কৃতি বলে। 

একটি দেশ বা অঞ্চলের মানুষের জীবনাচরণ, মূল্যবোধ, স্বভাব, বৈশিষ্ট্য সবই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, সংস্কৃতি হলো মানুষের জ্ঞান, আচার-আচরণ, বিশ্বাস, রীতিনীতি, নীতিবোধ, চিরাচরিত প্রথা, সমষ্টিগত মনোভাব, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং অর্জিত সাফল্যসমূহ। মূলত সংস্কৃতিই নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলের মানুষের পরিচয় নির্ধারণ করে ও তাদের ভবিষ্যত পথ বাতলে দেয়। কোনো একটি জাতির উন্নত সংস্কৃতি তার অমূল্য সম্পদ। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের কর্মকাণ্ড জাতীয় সাংস্কৃতিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। তাই ভিন্ন কোনো জাতির সঙ্গে পরিচিত হতে, তাদেরকে জানতে সে দেশ বা অঞ্চলের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। 

বেইজিংয়ের সংস্কৃতি চীনের সংস্কৃতি থেকে ভিন্ন কিছু নয়। বরং রাজধানীতে সাংস্কৃতিক উপাদানের রীতিমত ‘ছড়াছড়ি’ দেখা যায়। এই মহানগরীর সংস্কৃতি মূলত চীনের সংস্কৃতিরই প্রতিনিধিত্ব করে। জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, নির্মাণশৈলী, শিল্প-সাহিত্য, মৌখিক কথা, আচার আচরণ- সবকিছুতেই বেইজিংয়ের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। 

পিকিং মানব (Peking man), ( ছবি: ইন্টারনেট)

ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও বেইজিং চীনের সাংস্কৃতিক রাজধানী। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদানের মধ্য থেকে ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় সাংস্কৃতিক উপাদানের প্রতিই এখানে দৃষ্টিপাত করা হলো। বিশেষ করে বেইজিংয়ের যেসব সাংস্কৃতিক সম্পদকে বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে, সেসবের মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদের দিক থেকে চীন বেশ সমৃদ্ধ। চীনের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, পাহাড়, নদী, সমুদ্র ও আধুনিক নগরায়ন সারা বিশ্বের ভ্রমণ পিয়াসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর তাই, বিশ্ব পর্যটনের অন্যতম গন্তব্যস্থল চীন। 

১৯৮৫ সালে দেশটি প্রথম জাতিসংঘের ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ সম্মেলনে যোগ দেয়। দীর্ঘ ইতিহাস চীনকে অত্যন্ত মূল্যবান বিশ্ব সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক ঐতিহ্য উপহার দিয়েছে। এসব গোটা মানবজাতির ঐতিহ্যিক উত্তরাধিকার বলে মনে করে চীন। জাতিসংঘের ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের সংখ্যার দিক থেকে চীন এখন প্রথম স্থানে রয়েছে। 

২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত চীনে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ রয়েছে ৫৫টি। ৫৪টি ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ স্থান নিয়ে চীনের পরে রয়েছে ইতালি। এই ৫৫টির মধ্যে ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের’ মধ্যে ৩৭টি ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’, ১৪টি ‘বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য’ এবং ৪টি ‘মিশ্র বিশ্ব ঐতিহ্য’। 

বেইজিংয়ে ১২৬টি ‘প্রধান জাতীয় ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান’ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ইউনেস্কো ঘোষিত ৭টি বিশ্ব ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক পর্বত, উদ্যান ও জাতীয় ঐতিহ্যগুলো। 

কয়েক বছর ধরেই চীনের অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাত ও বিদেশ ভ্রমণে প্রথম সারিতে রয়েছে চীনারা। বলা যেতে পারে, বিশ্ব পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছেন চীনা পর্যটকরা। ২০১৮ সালে নিজ দেশে ভ্রমণ করেছেন ১৪১.২ মিলিয়ন (১৪,১২,০০,০০০) চীনা নাগরিক। যা আগের বছরের চেয়ে ১.২ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে মহানগরী বেইজিং ভ্রমণকারী মানুষের সংখ্যা ৩.৯৩ মিলিয়ন বা ৩,৯৩,০০,০০০জন। 

ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় চীনের ৫৪টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে ৭টি রয়েছে মহানগরী বেইজিংয়ে। বেইজিং ভ্রমণকারীরা খুব সহজেই এসব স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। বেইজিংয়ের ৭টি বিশ্ব ঐতিহ্য হলো-চৌখৌতিয়ান পিকিং মানব, মহাপ্রাচীর, নিষিদ্ধ নগর, গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ, স্বর্গ মন্দির, মিং সমাধি, গ্র্যান্ড ক্যানেল।

লেখক:  বিদেশি বিশেষজ্ঞ, বাংলা বিভাগ, চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং, চীন।


আরও পড়ুন

বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-৩)
বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-২)
বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-১)

 

ঢাকা/সাইফ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়