ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

সব দোষের দোষী তাহলে সাদিও মানে!

রিফাত বিন জামাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৪, ৩০ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ২২:২৪, ৩০ আগস্ট ২০২০
সব দোষের দোষী তাহলে সাদিও মানে!

বল দখল, পাস, লক্ষ্যে শট- সবকিছুতেই লিভারপুল ছিল এগিয়ে। কিন্তু গোলের খেলা ফুটবলে জয়-পরাজয় নির্ধারণে এসবের কোনো ভুমিকাই নেই! ম্যাচের ৬০ ভাগ সময়ে বল ছিল লিভারপুলের দখলে। গানারদের ৮ শটের বিপরীতে লিভারপুলের শট ছিল ১৫টি। যার মধ্যে অলরেডদের অন টার্গেটে ছিল ৪টি, আর আর্সেনালের ২টি। লিভারপুলের মোট পাস ছিল ৬২৯, আর আর্সেনালের ৪২৪। শতকরা ৮৬ ভাগ নির্ভুল পাস ছিল সালাহ-মানেদের, অন্যদিকে গানারদের ৭৮ ভাগ। এসবে পিছিয়ে থাকলেও কমিউনিটি শিল্ড ঠিকই জিতে নিয়েছে আর্সেনাল। অবশ্য জেতার সুযোগ বেশি ছিল লিভারপুলেরই।

তবে গোলের খাতা আর্সেনালই আগে খোলে। গানার অধিনায়ক পিয়েরে-এমেরিক অবেমেয়াং ম্যাচ শুরুর ১২ মিনিটে এগিয়ে দেন উত্তর লন্ডনের ক্লাবটিকে। কায়ো সাকার বাড়ানো ক্রস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডান পায়ের দারুণ শটে বল জালে জড়ান অবেমেয়াং। এরপর নির্ধারিত সময়ে লিভারপুলের তাকুমি মিনামিনো ছাড়া আর কেউই বল জালে জড়াতে পারেননি। ৭৩ মিনিটে সমতাসুচক সেই গোল করেন জাপানের এই ফরোয়ার্ড।

করোনাকালে নতুন নিয়মে ৯০ মিনিটের পরে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট নেই। সরাসরি পেনাল্টি শুটআউট। ফলে কমিউনিটি শিল্ডের ফল নির্ধারণ করতে ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে। এর আগে ম্যাচের ফলে লিভারপুলের অবশ্য আক্ষেপ থাকবেই। সাদিও মানে যদি ৮০ মিনিটে অমন সহজ মিসটা না করতেন তাহলে শিরোপা উঁচিয়ে মৌসুম শুরু করতে পারতো ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। বাঁ পাশ থেকে আসা দুর্দান্ত এক ক্রস বুক দিয়ে রিসিভ করে আর্সেনাল গোলকিপার মার্তিনেজের গায়ে শট করেন সাদিও মানে। আর্সেনালের হয়ে সে মার্তিনেজই আসলে ম্যাচের নায়ক!

মানে অবশ্য এই ম্যাচে এমন সহজ গোলের সুযোগ আরও একবার মিস করেছিলেন। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে সতীর্থের লম্বা করে বাড়ানো বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেবারও গোলরক্ষকের গায়ে মারেন সেনেগালের এই ফুটবলার।

পেনাল্টি শুটআউটে দুই কোচের মধ্যে অভিজ্ঞ ইয়ুর্গেন ক্লপ কৌশল সাজিয়েছিলেন অভিজ্ঞদের নিয়ে, মিকেল আর্তেতা তার উল্টো। সালাহ অলরেডদের পক্ষে প্রথম পেনাল্টি নিতে আসেন। দুই দলই প্রথম দুই পেনাল্টিতে সফল হলো। গোলকিপার লটারি লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন প্রত্যেকবার, বল যেদিকে যাচ্ছিলো পড়ছিলেন তার বিপরীতে। এরপর ম্যাচের অতিরিক্ত ৩ মিনিটের সময় পেনাল্টির জন্যই নামানো রিয়ান ব্রিষ্টার মিস করলেন পেনাল্টি। এবার মার্টিনেজের লটারি লেগেছিল, কিন্ত বলই গিয়ে লাগে ক্রসবারে। এই গোলই গড়ে দেয় ব্যবধান।

লিভারপুলের শেষ আশা ছিলেন বিশ্বের সেরা গোলকিপারদের একজন, তর্কসাপেক্ষে বর্তমান সময়ের বিশ্বসেরা গোলকিপার এলিসন বেকার। শট নিতেও আসলেন সেরাদের একজন পিয়েরি-এমেরিক অবামেয়াং। এই শটের আগে লিভারপুলের হয়ে একটিও পেনাল্টি সেভ করতে পারেননি এলিসন বেকার। অবামেয়াংয়ের ডানদিকে নেয়া শটেও পারলেন না! বহাল তবিয়তেই ব্রাজিলিয়ান এই ডিফেন্ডারের পেনাল্টি ঠেকাতে না পারার রেকর্ডটা থাকলো। ৫-৪ ব্যবধানে ট্রাইবেকারে জিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, লিভারপুলের চেয়ে একবার বেশি, ১৬ বার কমিউনিটি শিল্ড জিতলো আর্সেনাল। সবচেয়ে বেশি ২১টি শিরোপা জিতেছে ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড।

শেষ জয়সুচক পেনাল্টি শট নিয়েই অবামেয়াং গেলেন মার্তিনেসের দিকে। জড়িয়ে ধরলেন একে অপরকে। একমাসের মধ্যেই দ্বিতীয়বারের মতো আর্সেনালের শিরোপা উঁচিয়ে ধরা দেখতে হলো প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলকে।

করোনার কারণে অতিথিবিহীন পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্টান হলো। শিরোপার এক পাশে রাখা ছিলো মেডেল। একে একে বিজয়ের হাসি সঙ্গে করে নিয়ে মেডেল নিতে থাকলেন ডেভিড লুইজরা। সবশেষে ছিলেন বিজয়ী অধিনায়ক পিয়েরি-এমেরিক অবামেয়াং। পাশে থাকা অন্য একজন কানে কানে তাকে বললেন কিছু একটা। অবামেয়াংও হাসলেন। ২৮ দিন আগে (১ আগষ্ট) এফএ কাপ জিতে যে ট্রফি নিতে গিয়ে ট্রফিই ভেঙ্গে দিয়েছিলেন তিনি। সে কথাই হয়তো মনে করিয়ে দিয়েছিলেন ওই ভদ্রলোক, কিংবা অবামেয়াংয়ের নিজেরই হয়তো মনে পড়ে গিয়েছিল সে দৃশ্য। অধিনায়ক হয়ে কি আর শিল্ড হাতে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করা যায়! অবামেয়াং গিয়ে ঠিকই শিল্ড হাতে নিলেন। এবার আর কোন দুর্ঘটনা ঘটলো না!

ঢাকা/কামরুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়