ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সেই হোসেনের ঈদ কাটলো যেভাবে

তারেকুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৬, ২২ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৩:০১, ২৩ জুলাই ২০২১

গত ঈদুল ফিতরের দিন একটি ভালো জামা ওঠেনি সুবিধাবঞ্চিত মা-বাবা হারা শিশু হোসেনের গায়ে। প্রতিবেশীদের দেওয়া সেমাই রান্না করতে চিনির খরচ জোগাড়ের জন‌্য ঈদের দিনেও সে জাল কাঁধে নিয়ে সমুদ্রে গিয়েছিল। 

তবে ঈদুল আজহায় সে চিত্র অনেকটা বদলে গেছে। অনাবিল আনন্দ ও খুশিতে ভরপুর হয়ে উঠতে দেখা গেছে সেই হোসেনকে। এবার ঈদে সে ভালো জামা-কাপড় পরতে পেরেছে। মামির জন্য ওষুধও কিনতে পেরেছে।

অনলাইন নিউজপোর্টাল রাইজিংবিডিতে হোসেনকে নিয়ে একটি সংবাদ প্রচারের পর ভাইরাল হয় হোসেনের কষ্টের চিত্র। তার কষ্টে ব্যথিত হন কিছু হৃদয়বান মানুষ। দূর দূরান্ত থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাঠান তারা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জহুরা বেগমের মাধ্যমে হোসেনের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়া হয়। আর্থিক সহায়তা পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলে হোসেন। সেই টাকায় এবারের ঈদ তার অন‌্যরকম কাটলো।

হোসেনের মামি সাহারা খাতুন বলেন, ‘যখন শুনি হোসেনের সংবাদ পেয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ৩০ হাজার টাকা সাহায্য এসেছে, তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না। পরে যখন হোসেন টাকা এনে আমার কাছে দিলো, তখন খুশিতে কান্না চলে আসে। আমার ওষুধ কেনার খরচের কথা বাদই দিলাম। রাইজিংবিডির প্রকাশিত সংবাদে পরোপকারী মানুষগুলোর সহযোগিতায় আমার হোসেন যে সুন্দর জামা পরে হাসিমুখে ঈদ করতে পেরেছে তাতেই আমি খুশি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘যারা হোসেনকে এই কঠিন সময়েও টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছে এবং আমাদের দুর্দশার কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে তাদের কাছে আজীবন ঋণী হয়ে থাকলাম। তারা আমাদের দুঃসময়ে পাশে থেকে মহৎ কাজ করেছেন। আল্লাহ যেন তাদের মঙ্গল করেন।’

হোসেন রাইজিংবিডিকে বলে, ‘আমার দুঃখের সময় যারা পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের কাছে আমি চিরঋণী ও কৃতজ্ঞ। আমি তাদের কোনোদিন ভুলব না। মা মরে যাওয়ার পর নিজের জন্মদাতা বাবাও ছেড়ে চলে গেছে। অথচ আমার কষ্ট সহ্য করতে পারেনি কিছু হৃদয়বান মানুষ। আমি তাদের জন্য দোয়া করি। আর আমার এই কষ্টের খবরটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাইজিংবিডির প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

সমাজকর্মী শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘রাইজিংবিডিতে হোসেনের সংবাদটি পেয়ে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। আমার সন্তানগুলোর কথা মনে পড়েছে প্রতিমুহূর্তে। হোসেনের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। আমাদের পরিবারের বন্ধু কণ্ঠশিল্পী ফুয়াদ আল মুক্তাদিরকে নিউজের ভিডিও লিংক ও নিউজটি পাঠাই। তিনি আমেরিকা থেকে ২০০ ইউএসডি ডলার (১৭ হাজার টাকা) পাঠিয়ে দেন। আমার মেয়ের বান্ধবী মিথিলা ১ হাজার টাকা দেয়। হারুন নামের আরেকজন ভাগিনা সৌদি আরব থেকে ১৩ হাজার টাকা পাঠান। নারিশ বড়ুয়া নামের আরেক ব্যক্তি ১ হাজার টাকা দেন। টাকাগুলো প্রতিবেশী এক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে হোসেনের হাতে তুলে দেই।’ 

তিনি বলেন, ‘ছোট্ট শিশু হোসেনকে সমুদ্র থেকে তুলে এনে স্থলে কিছু একটা করে দিতে হবে। তাতে আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন। তাই হোসেনের জন্য একটা তহবিল করার চেষ্টা করেছি। দুইটা মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশের) মাধ্যমে হোসেনের জন্য সহায়তা সংগ্রহ করা হচ্ছে। (০১৫১৬-৩৪০৬৪০, ০১৮৪৫-৪০৩৪৩২) এই বিকাশ নম্বরগুলোতে যে কেউ চাইলে সহায়তা পাঠাতে পারবেন। হোসেনের সাথে যোগাযোগের নম্বর- ০১৮৩৫-৫৩৩৯৬৬।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল তারা চাইলে হোসেনের সংগ্রামী কষ্টের জীবনটি একটি সুখি ও সুন্দর জীবনে পরিণত করতে পারি। হোসেনকে উপহার দিতে পারি একটি স্বপ্নময় নতুন জীবন।’

আরও পড়ুন > সাগরের ঢেউয়ে দুলছে হোসেনের ভাগ্য

কক্সবাজার/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়