৩০ বছরে তলিয়ে যেতে পারে জাকার্তা
এনএ || রাইজিংবিডি.কম
রাইজিংবিডি ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা ক্রমে বাড়ছে। এতে ব্যাপক হারে পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ুর। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশে দেশে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে দ্রুত হারে গলছে দুই মেরুর বরফ। সমুদ্রের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বরফ ও হিমবাহ গলে যাওয়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে৷
এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে তলিয়ে যেতে পারে সমুদ্র তীরবর্তী অনেক দেশ বা শহর। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জলবায়ু বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের সংকটে পড়তে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রের উচ্চতা বাড়লে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলও ডুবে যাবার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আশঙ্কায় রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা। তলিয়ে যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে তলিয়ে যেতে পারে জাকার্তা শহর। অর্থাৎ আগামী ৩০ বছরের মধ্যেই ডুবে যেতে পারে জাকার্তার এক-তৃতীয়াংশ। সমুদ্র উপকূলবর্তী ওই অংশে বাস প্রায় এক কোটি মানুষের বসবাস।
ইন্দোনেশিয়ার অত্যন্ত ব্যস্ত শহর জাকার্তা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সংবাদ হলো এটি বিশ্বের অন্যান্য নিম্নভূমির শহরের মতো ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে সমুদ্রের জলে। শহরটি মূলত জলাভূমির ওপর অবস্থিত। তাছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অধিক নগরায়ন ও শিল্পায়ন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং অপরিকল্পিতভাবে জমি ব্যবহার করার ফলে প্রতি বছরই একটু একটু করে শহরটি সমুদ্রতলে চলে যাচ্ছে। এছাড়া শহরের বাসিন্দারা যে হারে পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভ থেকে পানি তুলছে তা পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
এছাড়া জাকার্তায় বন্যার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। ২০১৩ সালে অধিক বন্যার ফলে কয়েকটি স্থানের কিছু অংশ একবারে দুই মিটার নিচে ডুবে যায়। জাকার্তার উত্তর দিক বিগত ১০ বছরে প্রায় ২ দশমিক ৫ মিটার ভূমি সমুদ্রে তলিয়ে যায়। এছাড়া গড়ে প্রতি বছর ২৫ সেন্টিমিটার ভূমি পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে।
জাকার্তার এই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ফর ক্রিস্টিয়ান এইড’ এর গ্লোবাল লিডার ড. ক্যাথেরিন ক্রেমার বলেন, এই পরিস্থিতির পেছনে মূলত দুটি সমস্যা দায়ী। একটি হলো প্রাকৃতিক এবং অপরটি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ।
ক্রেমার জানান, জাকার্তা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন- বন্যা, ঝড়-বৃষ্টির কারণে দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আর এর পেছনে জলবায়ুর পরিবর্তনকেই দায়ী করেন তিনি। তাছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বরফ গলে যাচ্ছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে জাকার্তা ও এধরনের আরো নিচু শহরগুলো ব্যাপক হুমকির মুখে রয়েছে।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী সরিয়ে নেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। ইউরো নিউজ ও ফাস্র্ট পোস্ট জানিয়েছে, সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো ঘোষণা করেন, রাজধানী জাকার্তা থেকে বোর্নিও দ্বীপে স্থানান্তর করা হবে। গত এপ্রিলে রাজধানী শহর সরিয়ে নেয়ার কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তখন কোথায় স্থানান্তর করা হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।
এর আগে জাকার্তার পরিকাঠামোগত পরিবর্তন এনে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। শহরের রাস্তাঘাট উঁচু করার চেষ্টা করা হয়েছে। উপকূল বরাবর তৈরি করা হয়েছে বিশাল বাঁধও। কিন্তু, সব প্রচেষ্টাই মাটি। সাফ বিজ্ঞানীরা জানিয়ে দিয়েছেন জাকার্তাকে বাঁচানোর কোনও উপায় নেই।
এ অবস্থায় রাজধানী স্থানান্তর করাই একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর তাদের কথা মেনে দ্রুত রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার সরকার।
রাইজিংবিডি/১৯ আগস্ট ২০১৯/এনএ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন