ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অনলাইন-টেলিভিশন ক্লাস: কতটুকু লাভবান গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা

সোহেল রানা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ৮ অক্টোবর ২০২০  
অনলাইন-টেলিভিশন ক্লাস: কতটুকু লাভবান গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা

মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে গত ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় নিয়ে মে মাস থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া অনলাইনের পাশাপাশি সংসদ টেলিভিশনে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের ব্যবস্তা করে শিক্ষা মন্ত্রাণালয়।

অনলাইন ও টেলিভিশনে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগটা প্রশংসনীয়। কিন্তু শহরে পড়ুয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গ্রামের মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসে। এমনও অনেক শিক্ষার্থী আছে, যাদের পরিবারের আয়ের উৎস খুবই সামান্য। যারা দিন এনে দিন খায়, এমন অবস্থা। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেকেই অনলাইন ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস, নেট সংযোগ বা ডাটা দিয়ে ব্যবহার করার মতো আর্থিক অবস্থানে নেই। 

এছাড়া যেসব শিক্ষার্থী শহরাঞ্চলে অবস্থান করছে, তারা তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে কিছুটা সুবিধা পেলেও গ্রাম, চর, হাওর ও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরতরা উন্নত নেটওয়ার্ক বা ব্রডব্যান্ড সুবিধা সহজে পাচ্ছে না। এছাড়া গ্রামে বেশি সংখ্যক পরিবার নিম্ন আয়ের, বর্তমান এ মহামারি পরিস্থিতিতে যে সময়ে লকডাউন ছিল, তারা অন্যদের কাছে ধার-দেনা করে চলেছে। যেখানে এদের সংসার চালানো মুশকিল, সেখানে ইন্টারনেটের খরচ বহন করা খুব কষ্টসাধ্য। 

নিম্ন আয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর ভালো মানের মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার সুবিধা নেই। কলেজ পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব স্মার্ট ফোন নেই, পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের ফোন ব্যবহার করে ক্লাস করছে। শুধু তাই নয়, যদিও কেউ কেউ ক্লাস করে, কিন্তু দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে অনলাইনে ক্লাস করার সময় নানা সমস্যায় ভুগছে গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে শহরে বেশীরভাগ বাসায় টেলিভিশনের দেখা মিললেও গ্রামে কিন্তু তা নয়, সবার কেনারও সার্মথ্য নেই। যদিও কারো কারো বাড়িতে টেলিভিশন দেখা যায়, তারপরেও লোডশেডিং সমস্যা যেন গ্রামের নিত্য দিনের সঙ্গী। ফলে অনেকেই সময়মতো ক্লাস করতেও পারে না। আবার চরাঞ্চলগুলোতে যেখানে এখনও বিদ্যুতের পৌঁছায়নি, তারাতো অনলাইন ও টেলিভিশন দুটো থেকেই একদম বঞ্চিত।  সেখানে অনেকেই মেধাবী হওয়া সত্বেও শিক্ষার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজের মানবিক বিভাগের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহতিব হাসিব বলে, করোনার আগে কলেজ চলাকালীন সময়ে খুবই বাধ্যবাধকতার সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়েছি। কিন্তু এই লকডাউনের সময়ে পারিবারিক ও আর্থিক সমস্যার কারণে পড়াশোনা সঠিকভাবে করতে পারছি না। আমার বাবা মাস খানেক আগে অনলাইন ক্লাস করার জন্য ২৩০০ টাকা দিয়ে একটি স্মার্টফোন কিনে দিয়েছে, টাকার অভাবে আমি ফোনে এমবি কিনতে পারি না। এক বন্ধুর বাসায় ওয়াইফাই আছে, সেখানে গিয়ে মাঝেমধ্যে ক্লাস করি।’ 

সিলেট পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দিন। তিনি বর্তমানে গ্রামের বাড়ি জামালপুরে রয়েছেন। এ বিষয়ে সে বলেন, ‘আমাদের পলিটেকনিকের ক্লাসগুলো ফেসবুক পেজে লাইভ ক্লাস হিসেবে সম্প্রচারিত হয়। এগুলো একমুখী ক্লাসব্যবস্থা। এখানে সরাসরি শিক্ষক-শিক্ষার্থী মতামত প্রকাশ করতে পারলেও প্র্যাক্টিক্যাল কিছু করার সুযোগ নেই। যেটা আছে, সেটা কমেন্ট সিস্টেম। এছাড়া দৈনিক ক্লাসের সংখ্যা অনেক কম। ফলে আমি পড়ালেখায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছি, এরমধ্যে পরীক্ষা নিলে ফলাফল মোটেও ভালো হবে না।’

গ্রামের শিক্ষার্থীদের তুলনায় শহরে বসবাসকারীরা বহুগুণে এগিয়ে। তবে, যদি বছর শেষে পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাহলে এ অবস্থায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে। এতে তারা মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও সুবিধাবঞ্চিত হওয়ায় ঝরে পড়তে পারে। সরকারের কাছে শহর-গ্রাম সব স্থানের শিক্ষার্থীরই অধিকার সমান। তাই, শিক্ষার বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক, যেখানে সবাই সমান মূল্যায়ন পাবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল (৪র্থ পর্ব), উত্তরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়