ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

আড়ালে থেকে ‘সমাধানের’ খোঁজে বাংলাদেশ

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ, দুবাই থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:১২, ২৮ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ২৩:১৪, ২৮ অক্টোবর ২০২১
আড়ালে থেকে ‘সমাধানের’ খোঁজে বাংলাদেশ

‘হোটেলের গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই এক ভারতীয় বললেন, ‘কেয়া হো গ্যায়া ইয়ার বাংলাদেশ কী সাথ।’ পরনে বাংলাদেশের জার্সি থাকায় এই ভারতীয়র বুঝতে সমস্যা হয়নি লাল সবুজ আমার ঠিকানা। তার প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। তবুও আশার কথা শোনালাম, ‘শুক্রবার একটি ম্যাচ আছে। আশা করি জিতে যাবে বাংলাদেশ।’ প্রতিবেশী দেশের নাগরিক শুভকামনা জানাতে ভুল করেননি। 

আসলে কী হচ্ছে সেটা সম্ভবত ক্রিকেটাররাও বুঝতে পারছেন না। যাদের দায়িত্ব নিয়ে অবস্থান ব্যাখা করার কথা তারা আড়ালে! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাজে পরিণতির পর আনকোরা নাসুম আহমেদকে সংবাদ সম্মেলনে পাঠিয়েছিল টিম ম্যানেজম্যান্ট। হার নিয়ে এক প্রশ্নে সোজাসুজি উত্তর, ‘আমাদের দিয়ে হচ্ছে না।‘ 

শারজায় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে তৃতীয় ম্যাচে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। তাইতো ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে নুরুল হাসান সোহান বললেন, ‘এখন দরকার একটি জয়। তাতেই চাঙ্গা হয়ে যাবে দল। কালকের ম্যাচটা ভালোভাবে শুরু এবং শেষ করতে পারি তবে সামনে যে ম্যাচগুলো আছে সেগুলো আরো সহজ হয়ে যাবে। আমার কাছে মনে হয় যে পুরো দলটাই চাঙ্গা হয়ে যাবে।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মুখোমুখি হওয়ার আগে একদিন সময় পেয়েছিল মাহমুদউল্লাহরা। সন্ধ্যায় ফ্লাড লাইটের আলোতে অনুশীলনের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করে টিম ম্যানেজম্যান্ট। পরে জানা গেল, টিম ম্যানেজমেন্ট ঐচ্ছিক অনুশীলন করে দিয়েছিলেন। তাতে কেউ আগ্রহ দেখাননি। আইসিসি ইভেন্ট হওয়ায় ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলন বাধ্যতামূলক। সোহানকে পাঠিয়ে এখানেও দায়সারা বাংলাদেশ!

ঐচ্ছিক অনুশীলন হওয়ায় মাহমুদউল্লাহরা বেশি গুরুত্ব দেননি। একদিন আগে ম্যাচ খেলায় বিশ্রামে কেটেছে সারাবেলা। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত টিম মিটিংও হয়নি। ব্যক্তিগত সময় কাটাতেই ব্যস্ত ছিলেন ক্রিকেটাররা। ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম; তিনে কেটেছে সময়। একই হোটেলে, পাশাপাশি রুমে থাকলেও দল যেন বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ। 

এমন হারের পর প্রয়োজন অনুপ্রেরণা, দলীয় একতা। শুধু ম্যাচের দিন কিংবা অনুশীলনের আগে দলীয় বৈঠক সমাধান নয়। পাশাপাশি দেখাতে হয় কঠিন পেশাদারিত্ব। কিন্তু একেকটি হারের পর সবাই আড়ালে চলে যান, নীরবে থাকেন। বায়োবাবলের কারণে হোটেল থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। তবে চার দেয়ালে একা থাকলেও যে মানসিকভাবে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বেন ক্রিকেটাররা। 

রাইজিংবিডিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেছেন, ‘ওদের সঙ্গে কথা তো হচ্ছেই, সবার সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। অনুপ্রেরণা দেওয়া হচ্ছে। কালকের ম্যাচে দল ঘুরে দাঁড়াবে।'

‘ম্যাচ হারলে যেটা হয়, সবাই একটু আপসেট থাকে। আমাদের ছেলেরাও এখন একটু আপসেট। এখন এটা নিয়ে বসে থাকলে তো হবে না। এটা থেকে ওভারকাম করতে হবে। আমরাও সেভাবে দিক নির্দেশনা দিচ্ছি’-আরও যোগ করেন প্রধান নির্বাচক। 

টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্টইন্ডিজের বিপক্ষে বরাবরই ভালো বাংলাদেশ। এ ছাড়া বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে তারাও দুটি ম্যাচ হেরেছে, বাংলাদেশও দুটি ম্যাচ হেরেছে। দুই দলেরই এই ম্যাচটি ঘুরে দাঁড়ানোর কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সোহানেরও আশা এই ম্যাচকে ঘিরে, ‘আমরা শেষ সিরিজগুলোয় ওদের সঙ্গে ভালো করেছি। এটা অবশ্যই আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগাবে এবং এ ম্যাচটা যদি আমরা জিততে পারি তবে অবশ্যই আমাদের মধ্যে টুর্নামেন্টের জন্য ইতিবাচক মানসিকতা চলে আসবে।’

বাংলাদেশের সামনে এখন টিকে থাকার লড়াই, অস্তিত্ব জানান দেওয়ার লড়াই। পারবেন তো মাহমুদউল্লাহ-সাকিবরা? নাকি আরও আড়ালে চলে যাবেন তারা! 

দুবাই/রিয়াদ/ইয়াসিন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়