ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে হাঁস পালনে বেকার যুবকদের ভাগ্য বদল

বাদশাহ্ সৈকত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫২, ২৮ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১৫:৫৪, ২৮ আগস্ট ২০২০
কুড়িগ্রামে হাঁস পালনে বেকার যুবকদের ভাগ্য বদল

নিজের খামারে হাঁসের পরিচর্যা করছেন সাজেদুল ইসলাম

কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ছোট-বড় সাড়ে চার শতাধিক হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। বেশিরভাগ হাঁসের খামার ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন যুবকরা। এতেই ভাগ্য বদল হয়েছে অনেক খামারির।

খামারিরা প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা ২০-২৫ টাকায় কিনে এনে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস লালন-পালন করে বিক্রি করছেন। প্রতিটি হাঁসের পেছনে ব‌্যয় হচ্ছে ৯০-১১০ টাকা এবং বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকায়। প্রতিটি হাঁসে লাভ হচ্ছে ৩০০ টাকার বেশি। যারা হাঁসগুলোকে উন্মুক্ত জলাশয়ে ছেড়ে দিয়ে খাবার খাওয়াচ্ছেন তাদের খরচ হচ্ছে অনেক কম।

আড়াই বছর আগে সামান্য পুঁজি নিয়ে হাঁস পালন শুরু করেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের সিতাইঝাড় গ্রামের সাজেদুল ইসলাম (২৮)। বর্তমানে তার খামারে আছে চার শতাধিক হাঁস। পার্শ্ববর্তী জেলা গাইবান্ধা থেকে প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা ২০-২৫ টাকা দরে কিনে এনে তা তিন থেকে সাড়ে তিনি মাস লালন-পালন করেন তিনি। এরপর প্রতিটি হাঁস বিক্রি করেন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। হাঁসের খাবার ও ওষুধের জন‌্য খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। মুনাফা হয় প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা।

সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় আমার বাবা মারা যান। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট আমি। বাবা মারা যাওয়ার পর ভাইয়ের সংসারে থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাশ করার পর অভাবের কারণে আর লেখাপড়া করতে পারিনি। এরপর বিভিন্ন কাজ ও ছোট-খাটো ব্যবসা করার চেষ্টা করি। কিন্তু কোথাও মন বসাতে পারিনি। সবখানেই লোকসান হওয়ায় হতাশায় হয়ে পড়েছিলাম। এরপর এলাকার এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে আড়াই বছর আগে কিছু ধার-দেনা করে গাইবান্ধা থেকে হাঁসের বাচ্চা কিনে এনে খামার করি। প্রথমে ১০০ বাচ্চা দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে আমি প্রতি চালানে ৪০০ হাঁসের বাচ্চা নিয়ে এসে সাড়ে তিন মাস লালন-পালন করে বিক্রি করি। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এই আয়ে সংসার চালানোর পরও কিছু জমা থাকে। আগামীতে আরো বড় পরিসরে হাঁসের খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে বড় খামার গড়তে সুবিধা হতো।

সাজেদুলের মতোই হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন একই ইউনিয়নের শুলকুর বাজার এলাকার ছকিমুদ্দিন। তার খামারে বর্তমানে চার শতাধিক হাঁস আছে। এর মধ্যে খাকি ক্যাম্বেল জাতের ২০০ হাঁস ডিমের জন্য পালন করছেন তিনি। দেশি প্রজাতির ২০০ হাঁস পালন করছেন বিক্রি করার জন্য।

ছকিমুদ্দিন বলেন, ‘আমি খামারে দুই ভাগে হাঁস রেখেছি। অর্ধেক হাঁস পালছি ডিমের জন্য। বাকিগুলো বিক্রির জন্য। প্রতিদিন দেড় শতাধিক হাঁস ডিম দেয়। ডিম দেওয়া হাঁসকে খাবার একটু বেশি দিতে হয়। বাজারে হাঁসের ডিমের চাহিদা ভালো।’

তবে নতুন খামার করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন পাঁচগাছী ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের আশরাফুল আলম। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে একবারেই ৩ হাজার ৫০০ হাঁসের বাচ্চা কিনে খামার শুরু করেন তিনি। কিন্তু বন্যার কারণে এতগুলো হাঁসের ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারেননি তিনি। কিছু হাঁস মারা গেছে। বাকি হাঁস বিক্রি করে আবারো নতুন হাঁসের বাচ্চা কিনেছেন আশরাফুল আলম।

অন্যদিকে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের মো. রশিদ আলী প্রায় ছয় বছর ধরে পুকুরের পাশে খামার গড়ে ২০০ খাকি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস পালন করে আসছেন। পুকুরে হাঁস পালন করায় অন‌্য খামারিদের চেয়ে খরচ অনেক কম হয়। ফলে লাভ বেশি হয়।

পাঁচগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সাজেদুল খুবই পরিশ্রমী ছেলে। সে হাঁসের খামার করে বেকারত্ব ঘুচিয়েছে। তাকে দেখে এ ইউনিয়নেই অনেক খামার গড়ে উঠছে। যারা লেখাপড়া করেও বেকারত্বের কারণে হতাশায় ভুগছেন, তারা সাজেদুলের কাছে পরামর্শ নিয়ে তার মতো হাঁসের খামার গড়তে পারলে আর বেকারত্ব থাকবে না।’

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল হাই সরকার জানান, কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ছোট-বড় সাড়ে চার শতাধিক হাঁসের খামার আছে। হাঁসের খামার লাভজনক। বিভিন্ন বিল ও জলাশয়ে হাঁস পালনের সুবিধা থাকায় জেলায় প্রতিবছর হাঁসের খামার বাড়ছে। আমরা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে খামারিদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। করোনাকালীন সরকারি প্রণোদনার জন্য খামারিদের তালিকা পাঠানো হবে। প্রণোদনা পেলে তারা আরো লাভবান হবেন।

কুড়িগ্রাম/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়