ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের এক মামলায় চার্জশিট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৩, ৩ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৮:২৯, ৩ ডিসেম্বর ২০২০
গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের এক মামলায় চার্জশিট

রাজধানীর মেরুল বাড্ডা থেকে বিপুল অর্থ, অস্ত্র-মদ ও সোনাসহ গ্রেপ্তার গোল্ডেন মনির হোসেনের বিরুদ্ধে আট বছর আগে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা এক মামলার চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে তিন কোটি ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য এ তথ্য জানিয়েছেন।

শিগগিরই চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতে দাখিল করা হবে বলে জানিয়ে প্রনব বলেন, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে চার্জশিট দিতে ৮ বছর লেগেছে। এরপর কমিশনের এক সহকারী পরিচালককে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।  এই কর্মকর্তার বদলিজনিত কারণে মামলা তদন্ত কার্যক্রম বিলম্বিত হয়।

গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে আরেকটি অনুসন্ধান চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের পর থেকে তার অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদের এই অনুসন্ধান চলছে।  এই অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে মনির হোসেন ও তার স্ত্রী রওশন আক্তারের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।  এই নতুন অনুসন্ধানে তার প্রচুর অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, গোল্ডেন মনির এক কোটি ৬১ লাখ টাকা বৈধ করতে বিভিন্ন ব্যক্তি থেকে দান প্রাপ্ত হয়েছেন বলে ভুয়া তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া তিনি আরও এক কোটি ৪৯ লাখ ৮৫ লাখ ৩৩৫ টাকার সম্পদ আছে। সম্পদ বিবরণী দাখিল করলেও তার কোনো বৈধ উৎস্য তদন্তে পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

২০১২ সালের ১৩ মার্চ রাজধানীর রমনা থাকায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক।  এর আগে তার সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠায় দুদক।  ২০০৯ সাল পর্যন্ত গোল্ডেন মনির তার সম্পদের হিসাব কমিশনে জমা দেন।  পরে আদালতে এই সংক্রান্ত একটি রিট মামলা হওয়ার কারণে তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। পরে দুদকের উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন মৃধা মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিলে এর অভিযোগপত্র অনুমোদন করে দুদক।

নতুন অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এর আগে গত ২৬ নভেম্বর গোল্ডেন মনির ও তার স্ত্রী রওশন আক্তারের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছে দুদক। দুদক পরিচালক আকতার হোসেন আজাদের স্বাক্ষরে পাঠানো নোটিশে তাদের ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়েছে।

মেরুল বাড্ডায় মনিরের ছয়তলা বাড়িতে র‍্যাব-৩ গত ২০ নভেম্বর রাতে অভিযান চালায় র‌্যাব। অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে এই অভিযান চালানোর পর মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।  অভিযানে মনিরের বাড়ি থেকে নগদ এক কোটি নয় লাখ টাকা, চার লিটার মদ, আট কেজি স্বর্ণ, একটি বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর মনিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে তিনটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসা নয়, কার্যত সোনা চোরাচালানই ছিল মনিরের ব্যবসা; পরে তিনি জড়িত হন জমির ব্যবসায়। এক সময় নিউমার্কেট এলাকায় মনিরের একটি স্বর্ণের দোকান ছিল। স্বর্ণ চোরাচালান ব্যবসার সময় তিনি ‘গোল্ডেন মনির’ নামে পরিচিতি পান।  তবে ২০০১ সালের পর এই ব্যবসা গুটিয়ে জমির ব্যবসায় মন দেন।

মনিরের বাড়িতে পাঁচটি গাড়ি পাওয়া গেছে, যার মধ্যে তিনটি গাড়ির বৈধ কাগজপত্র নেই বলে সেগুলো জব্দ করেছে র‌্যাব।  তার এক হাজার ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। বাড্ডা, নিকেতন, কেরানীগঞ্জ, উত্তরা ও নিকুঞ্জে দুইশর বেশি প্লট রয়েছে তার।

 

এম এ রহমান/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়