ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান: রামেন্দু মজুমদারের খোলা চিঠি

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২২, ২৩ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৮:২৮, ২৩ জানুয়ারি ২০২২
গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান: রামেন্দু মজুমদারের খোলা চিঠি

আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ ও সম্পাদক (অর্থ) রফিকু উল্লাহ সেলিমকে অব্যহতি দিয়েছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাট্যকর্মীদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। রোববার (২৩ জানুয়ারি) থিয়েটার বিষয়ক পত্রিকা ‘ক্ষ্যাপা’-এর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হয় চিঠিটি।

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন রামেন্দু মজুমদার। প্রতিষ্ঠা লগ্নের কথা স্মরণ করে তিনি লিখেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমি ফেডারেশানের ব্যাপারে নির্লিপ্ত। থিয়েটার পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে ১৯৮০ সালে আমার আহ্বানে নাট্যকর্মীরা সভায় মিলিত হয়ে ফেডারেশান গঠনে একমত হন এবং আমি প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। তাই সংকটকালে একটা দায়িত্ববোধ অনুভব করছি। আমরা প্রতিষ্ঠাকালে যে ফেডারেশানের স্বপ্ন দেখেছিলাম, আজকের পরিস্থিতি আমাদের কল্পনারও অতীত ছিল। অনেক কষ্ট করে সকল মত ও পথের মানুষকে ফেডারেশানের পতাকাতলে এক করে সংগঠনকে নাট্যকর্মীদের একটি বিশাল শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছিলাম। কোনো সরকারি আর্থিক অনুদান ছাড়া নিজেরা পরিশ্রম করে বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন ফেডারেশানের কাজকর্ম চালিয়েছি। আমরা সমবয়সী হলেও একে অন্যের সিদ্ধান্ত মেনে চলেছি, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করেছি।’

গ্রুপ থিয়েটারকে কেন্দ্র করে এখন ক্ষমতার রাজনীতি হচ্ছে বলে মত দিয়েছেন রামেন্দু মজুমদার। তার ভাষায়—‘এখন দেখছি, নাটক নয় তথাকথিত ক্ষমতার রাজনীতিই প্রধান হয়ে উঠেছে। জাতীয় নির্বাচনের মতো ফেডারেশানের নির্বাচনে প্রার্থীরা দেশব্যাপী ঘুরে প্রচার চালান, প্রতিনিধিরা ঢাকায় এলে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন, কেবল ভোটের আশায়। কী এমন মধু আছে ফেডারেশানে আমি বুঝতে পারি না। বর্তমানে ফেডারেশানের কর্তাব্যক্তিদের এই বিরোধ জনসমক্ষে নাট্যকর্মীদের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে কালিমালিপ্ত করেছে। এর দায় নাট্যকর্মীরা কেন নেবেন? তারা সুন্দর পরিবেশে নাটক করতে চান, নোংরা রাজনীতি চান না।’

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সকল কার্যক্রম স্থগিত করার পরামর্শ দিয়ে রামেন্দু মজুমদার লিখেন, ‘এমন অবস্থায় আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, অনির্দিষ্টকালের জন্যে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সকল কর্মকাণ্ড স্থগিত করা হোক এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে রাখা হোক। গঠনতান্ত্রিক উপায়ে কাজটি করার জন্য ফেডারেশানের একটি জরুরি সাধারণ সভা আহ্বান করে এসব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বর্তমান নির্বাহী ও কেন্দ্রীয় পরিষদ বাতিল করে ৭/৮ জনের একটি অ্যাডহক কমিটি করে দেয়া যেতে পারে; যারা বেশ কিছুদিন পর পরিস্থিতি শীতল হলে ফেডারেশানকে ঢেলে সাজিয়ে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করবেন। আবারো বলছি, এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মত, সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা ফেডারেশানের সাধারণ সদস্যদের। আমরা কোনোভাবেই চাই না নাট্যকর্মীদের এমন একটি প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে যাক। সকলে নিজ নিজ দলের নাট্যকর্মে মনোযোগ দিই। কারণ আমাদের প্রধান কাজ নাটক করা, নাটক নিয়ে রাজনীতি করা নয়।’

শনিবার (২২ জানুয়ারি) গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের কেন্দ্রীয় পরিষদের সভায় কামাল বায়েজীদ ও রফিকু উল্লাহ সেলিমকে অব্যহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে ফেডারেশানের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বাংলাদেশের তিন শতাধিক নাট্যদলের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান। ১৯৮০ সালে গঠিত হয় এটি। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন রামেন্দু মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়