টাংগাইল-৭ আসনে নির্বাচন, প্রস্তুতি চূড়ান্ত
কেএমএ হাসনাত, মির্জাপুর থেকে || রাইজিংবিডি.কম
রোববার (১৬ জানুয়ারি) রাত পোহালেই জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর, শুন্য আসনের উপনির্বাচন। নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের উপকরণ ইতোমধ্যে কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) মির্জাপুর সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে শতাধিক ট্রাকযোগে উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ইভিএম বক্স-সহ নির্বাচনের অন্যান্য সামগ্রী সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে তুলে দেওয়া হয়। নির্বাচনি সামগ্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ট্রাকে পুলিশ ও আনসার নিয়োজিত ছিল।
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও মির্জাপুর উপনির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী রাইজিংবিডিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মির্জাপুরে সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এলাকাবাসী অত্যন্ত সুশৃংখলভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আমরা আশা করছি টাংগাইল-৭ মির্জাপুর আসনের ভোটও অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।’
নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি মির্জাপুরবাসী অত্যন্ত সুশৃংখল। তারা শান্তিপূর্ণভাবেই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোটাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং শান্তিপূর্ণ ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বার্থে প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিজিবি, র্যাব সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে, ম্যাজিস্ট্রেটরাও থাকবেন।’
উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে মির্জাপুরে প্রথম বারের মত ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভোটাররা কোনো জটিলতায় পড়বেন কি না— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য পরীক্ষামূলক ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করেছিলাম। এজন্য প্রচারণাও করা হয়েছিল। কিন্তু ভোটারদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপরও ভোটারদের কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। কারণ ইভিএম ব্যবস্থা অত্যন্ত সহজ। ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং, সহকারি প্রিজাইডিং এবং পোলিং অফিসাররা থাকবেন। তারা ভোটারদের সব কিছু দেখিয়ে দেবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে কোনো কারচুপির সুযোগ নেই। যারা ভোট দিতে যাবেন তারা সহজেই ভোট দিতে পারবেন। ভোট কেন্দ্রের ভেতরে প্রার্থীদের যে এজেন্টরা থাকবেন তাদের উপস্থিতিতেই সব হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দিলেন, সেটা ছাড়া পুরো প্রক্রিয়া এজেন্টদের সামনে হবে। একজনের ভোট অন্য একজনের দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
মির্জাপুর সরকারি কলেজের ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ভাওড়া ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার কেন্দ্রের ইভিএম-এর প্রয়োজনীয় সব জিনিস সংগ্রহ করেছি। যাচ্ছি ভোটকেন্দ্রে। আশা করছি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে। যদিও ইভিএম সম্পূর্ণ নতুন ব্যবস্থা। ভোটারও এ বিষয়ে তেমন সচেতন নয়। তবে বিষয়টি অত্যন্ত সহজ। ভোটাররা যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তার জন্য আমরা সহযোগিতা করব।’
টাংগাইল-৭ মির্জাপুর আসনের উপনির্বাচনে মোট পাঁচজন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এরা হলেন— আওয়ামী লীগের খান আহমেদ শুভ (নৌকা), জাতীয় পার্টির মো. জহিরুল ইসলাম জহির (লাঙ্গল) বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মো. গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরী (হাতুড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নুরুল ইসলাম নুরু (মোটর গাড়ি) এবং বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী শ্রীমতি রুপা রায় চৌধুরী (ডাব)।
একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত টাংগাইল-৭ মির্জাপুর আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৩৭৯ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৫০১ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৮ জন। এছাড়া টাংগাইল কটন মিলস উচ্চ বিদ্যালয় (মহিলা কেন্দ্র) গোড়াইয়ে চার জন হিজড়া তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ১২১টি ভোটকেন্দ্রের ৭৫৬ কক্ষে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে।
গত ১৬ নভেম্বর এ আসনে জাতীয় সংসদের নির্বাচনে পরপর চার বারের নির্বাচিত জনপ্রিয় সংসদ সদস্য, সড়ক পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. একাব্বর হোসেনের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর নির্বাচন কমিশন আসনটি শুন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে।
নির্বাচন আচরবিধি অনুযায়ী গত শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) রাত থেকে টাংগাইল-৭ মির্জাপুর আসনের উপনির্বাচন উপলক্ষে সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে।
মির্জাপুর/সনি
আরো পড়ুন