ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ধর্মান্তরের আহ্বান: ৪ আসামির রিমান্ডের আবেদন

মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১১, ২৪ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৭:২১, ২৪ মার্চ ২০২১
ধর্মান্তরের আহ্বান: ৪ আসামির রিমান্ডের আবেদন

গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়িতে চিঠি পাঠানো হয়

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার দুটি গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে ধর্মান্তরিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে পুলিশ। 

গত ১৯ মার্চ রাতে চর গোয়ালদহ ও মালাইনগর গ্রামের ৫০টিরও বেশি বাড়িতে ইসলামের দাওয়াত এবং হিন্দুধর্ম ত্যাগের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ২১ মার্চ শ্রীপুর থানায় ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবুল বাশার জানান, আদালতে চার আসামির প্রত্যেকের ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড শুনানির জন্য ২৫ মার্চ দিন ধার্য করেছেন আদালত। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, শ্রীপুর উপজেলার চৌগাছী গ্রামের ইউসুফ বিশ্বাস, চরমহেশপুর গ্রামের কোরবান আলী, দারিয়াপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান হারেজ ও কচুয়া গ্রামের মোস্তাকিম বিল্লাহ।

এসআই আবুল বাশার বলেন, বিতরণকৃত চিঠিতে ‘মুসলিম জামাত’ নাম ব্যবহার করা হলেও প্রকৃতঅর্থে এ ধরনের সংগঠনের অস্তিত্ব আছে কি না সেটি খুঁজতে এবং অধিক তথ্য অনুসন্ধানে তাদের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
মাগুরার পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

স্থানীয় সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ১৯ মার্চ মাগরিবের নামাজের পর থেকে রাত ১০টার মধ্যে চর গোয়ালদাহ ও মালাইনগর গ্রামে ‘মুসলিম জামাত’ পরিচয়ে অসিত কুমার গোস্বামীসহ ৫০ থেকে ৬০টি হিন্দু বাড়িতে ইসলামের দাওয়াতপত্র বিতরণ করা হয়। সাতটি দলে বিভক্ত হয়ে মোটরসাইকেলযোগে এ সব চিঠি বিতরণ করেন আসামিরা। এতে কোরআনের বিভিন্ন সুরা উল্লেখ করে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া হয়। এটা ওই এলাকার ভুক্তভোগীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। 

ওই দুটি গ্রামের হিন্দুপাড়ার পরিবার প্রধানের নামে এ সব চিঠি বিতরণ করা হয়। চিঠিতে কারও নাম না থাকলেও ‘মুসলিম জামাতের পক্ষ থেকে’ বলে উল্লেখ করা হয়।   

শ্রীপুর থানার ওসি আলী আহমদ মাসুদ বলেন, বিতরণকৃত চিঠিতে ইসলামের পক্ষে বিভিন্ন বক্তব্য উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সেখানে হুমকি কিংবা ভয়ভীতি দেখানো হয়নি। পাশাপাশি গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনার পেছনে বিশেষ গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টও পাওয়া যায়নি। তবে ধর্মান্তরিত হওয়ার আহ্বান জানানোর কারণে ওই জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হওয়ায় ২১ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

এসপি জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। স্বীকারোক্তিতে তারা এটিকে শুধু ইসলামের দাওয়াতের চিঠি বলে উল্লেখ করেন। 

পুলিশ সুপার জানান, আসামিদের দলনেতা ইউসুফ বিশ্বাস ইবনুল ঢাকা কলেজে পরিসংখ্যান বিভাগে লেখাপড়া করতেন। তৃতীয়বর্ষ পর্যন্ত সেখানে লেখাপড়া করে সেটি ছেড়ে মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরে সেটি ছেড়ে নিজ গ্রাম চৌগাছীতে এসে বেশ কিছুদিন ধরে মক্তবে বিভিন্ন বয়সীদের কোরআন শিক্ষা দিয়ে আসছিলেন। তার নেতৃত্বে মালাইনগর ও চর গোয়ালদাহ গ্রামে চিঠি দেওয়া হয়। 

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী বলেন, একটি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এ ধরনের চিঠি বিতরণের ঘটনায় তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত মনে করলেও শ্রীপুরের ওই এলাকার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন বজায় রয়েছে। সেখানকার মানুষ সম্প্রীতি রক্ষা করে চলেছেন। কোনো গুজব প্রশ্রয় না দিতে বাসিন্দাদের প্রতি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। 
 

শাহীন/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়