ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘নাকানো এরিকো ৭ বছরের বাচ্চাকে দূরে রেখে মাতৃত্বের গল্প শোনাচ্ছেন’

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ২২ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ২২:৩৮, ২২ জানুয়ারি ২০২৩
‘নাকানো এরিকো ৭ বছরের বাচ্চাকে দূরে রেখে মাতৃত্বের গল্প শোনাচ্ছেন’

‘জাপানে জন্ম নেওয়া দুই শিশু নাকানো জেসমিন মালিকা (১১) ও নাকানো লায়লা লিনা (৯) তাদের বাবা ইমরান শরীফের কাছেই ছিল। ইমরানের সাত বছর বয়সী আরেক মেয়ে জাপানে আছে। নাকানো এরিকো (ইমরানের সাবেক স্ত্রী) তাকে জাপানে রেখে এসেছেন। এত জিদ তার! ৭ বছরের বাচ্চাকে দূরে রেখে এ দেশে এসে মাতৃত্বের গল্প শোনাচ্ছেন তিনি।’

রোববার (২২ জানুয়ারি) ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতে দুই শিশুর জিম্মার মামলায় শুনানি হয়। শুনানিতে ইমরান শরীফের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে উল্লিখিত কথাগুলো বলেন আইনজীবী নাসিমা আক্তার।

এদিকে, জাপানে জন্ম নেওয়া দুই শিশু বাংলাদেশি বাবা নাকি জাপানি মায়ের জিম্মায় থাকবে, সে বিষয়ে রায়ের তারিখ আগামী ২৯ জানুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত।

মায়ের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন শিশির মনির। বাবার পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন নাসিমা আক্তার। এদিন এক শিশু জেসমিন মালিকা মায়ের সঙ্গে আদালতে উপস্থিত ছিল।

প্রথমে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন শিশির মনির। তিনি বলেন, দুই শিশু বাংলাদেশে থাকায় স্কুলের ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না। ইমরান শরীফ তাদের পর্যাপ্ত খরচের টাকা দিচ্ছেন না। প্রথমে দিলেও এখন তিনি একটা টাকাও দিচ্ছেন না। শিশুদের মায়ের জিম্মায় দিলে তারা জাপানে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা নিতে পারবে। তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে। তারা এখানে এডজাস্ট করতে পারছে না।

এরপর ইমরান শরীফের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে নাসিমা আক্তার বলেন, ইমরান শরীফ জাপানে ব্যবসা করতেন। করোনার কারণে তার ব্যবসায় ক্ষতি হয়। এ কারণে বাড়িভাড়া নিয়ে ঝামেলা হয়। নাকানো এরিকো ইমরান শরীফকে বাসা থেকে বের করে দেন। ইমরান শরীফ মেয়েদের সঙ্গে আলাপ করেন। তারা বাবার সাথে আসতে রাজি হয়। এরপর ইমরান শরীফ তাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তিনি সব সময় বাচ্চাদের টেককেয়ার করেন। সন্তান জন্ম দেওয়া বাদে সবই করেছেন ইমরান শরীফ। তার দুই বাচ্চাকে কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি করেন। কিন্তু নাকানো এরিকো স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের সাথে ঝগড়া করেন। তাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ আছে। মায়ের জিম্মায় থেকে ৮ মাস তারা স্কুলে যেতে পারছে না। এ অবস্থায় তারা যদি মায়ের কাছে থাকে, তাহলে কিভাবে তাদের মঙ্গল হবে? মায়ের জিম্মায় থাকা অবস্থায় জেসমিন অ্যালার্জির সমস্যায় ভুগছিল। কিন্তু, তার চিকিৎসা হয়নি। চিকিৎসার জন্য আদালতে আবেদন করে চিকিৎসা করাতে হয়। এদিকে, দেড় বছরের মধ্যে এক দিনও মা ওদের রান্না করে খাওয়ায়নি। ফুডপান্ডা বা বাইরের খাবার এসেছে বাসায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইন সবার অধিকার নিশ্চিত করেছে। কিন্তু, জাপানে কোনো বাবা সন্তানকে ফিরে পেতে আবেদন করলে পুলিশ বাবাকেই কাস্টডিতে নিয়ে নেয়। জাপানের আইন মারাত্মক। শত শত বাবা বাচ্চা খুঁজতে গিয়ে অ্যারেস্ট হয়েছেন। তারা এখানে থাকলে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পাবে। তাদের মা যখন খুশি তখন দেখে যেতে পারবে। অথচ দেশে থেকে ইমরান শরীফকে তার দুই বাচ্চাকে দেখতে দেয়া হওয়নি। জাপানে গেলে তাহলে কী করবে?

নাসিমা আক্তার বলেন, তাদের (ইমরান ও নাকানো) সাত বছরের একটি মেয়ে আছে। দেড় বছর বাবা তার মেয়ের সাথে কথা বলতে পারেনি। আর কোনোদিন তার ওই বাচ্চাকে দেখার সুযোগ হবে কি না, তা অনিশ্চিত। এখন দুই মেয়েকে নিয়ে যেতে পাঁয়তারা করছে নাকানো। ইমরান শরীফকে নিঃসন্তান করার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের আইন মর্যাদাসম্পন্ন, কাউকে বঞ্চিত করা হয়নি। 

তিনি বলেন, দুই শিশু চমৎকার কালেমা পড়তে পারে। এ অবস্থায় তারা যদি অন্য কোনো দেশে চলে যায়, তাহলে নিশ্চিতভাবে তারা মুসলিম থাকতে পারবে না। শুধু ধর্মের কারণে নয়, আইনের দিক বিবেচনায়ও শিশু দুটির বাবার কাছে থাকার হকদার। বাংলাদেশের আইন মাকে সম্মান দিয়েছে। মা যখন খুশি সন্তানদের দেখতে পাবেন। কিন্তু বাবার ক্ষেত্রে এটা হবে না। বাবা কোনো মেয়েকেই দেখতে পাবেন না। তিনি নিঃসন্তান হয়ে যাবেন।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রায়ের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ধার্য করেন।

এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি ওই দুই জাপানি শিশু ও তাদের মা আদালতে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

মামুন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়