ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

প্রকৃতি ও স্থাপত্যশৈলীতে জাবির প্রজাপতি হল 

ইমন ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ২৭ মার্চ ২০২১  
প্রকৃতি ও স্থাপত্যশৈলীতে জাবির প্রজাপতি হল 

প্রজাপতি নামটি শুনলেই মানুষের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। বাহারি রঙের প্রজাপতির মিলনমেলা মানুষের মনে যেন আনন্দের জোয়ার এনে দেয়। এজন্যই হয়তো গুণীজনেরা বলেছেন, ‘আকাশে উড়লে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’। প্রজাপতি যে শুধু মানুষেরই আনন্দের খোরাক জোগায় তা নয়, বিশাল এই ধরণীর সৌন্দর্য চেতনার ধারক এবং বাহকও বটে। আর তাই যুগে যুগে মানুষ তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় প্রজাপতিকে স্থাপত্যশৈলীতে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

বাংলাদেশের অন্যতম সৌন্দর্য মন্ডিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সবুজ ক্যাম্পাসে লাল ইটের স্থাপত্যশৈলীগুলো যেন ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে করেছে আরও সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম আকর্ষণ হলো এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ। বাহারি রকমের গাছপালা, পাখপাখালি আর উঁচু উঁচু স্থাপত্যশৈলীগুলো যেন মিলে-মিশে একাকার হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি এই অপরূপ সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে যেন মেতে উঠেছে এক অন্তিম কোনো লীলায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটি আকর্ষণ হলো দেশ সেরা ‘প্রজাপতি হল’। প্রজাপতি আকৃতির এই আবাসিক হলটি মন কাড়ে সবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও এই প্রজাপতি হলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরাও আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। সবুজের মধ্যে লাল ইটের এই প্রজাপতি হলের আচ্ছাদনে প্রকৃতি পেয়েছে নতুন রূপ, নতুন প্রাণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শত স্বপ্নের ভিড়ে যেন এক টুকরো চাঁদ। প্রজাপতি হল হিসেবে খ্যাত এই আবাসিক হলটি ক্যাম্পাসের পশ্চিম প্রান্তে এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত।

জানা যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর হল হিসেবে এই প্রজাপতি হলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এমন অদ্ভুত ও দানব আকৃতির এই হলটির নকশা প্রণয়ন করেন বিশিষ্ট স্থপতি মাজহারুল ইসলাম। বিশিষ্ট কথাশিল্পী মীর মশাররফ হোসেনের নাম অনুসারে ১৯৭৮ সালে এই প্রজাপতি হলের নাম নির্ধারণ করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই হলটি মীর মশাররফ হোসেন হল নামে পরিচিত। সংক্ষেপে (MH) হল নামে পরিচিত।

জাবির প্রজাপতি হলের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো এর বিশালতা। প্রায় দুটি খণ্ডের এই বিশাল হলটি শুধু দেশ সেরার খেতাবই জয় করেনি বরং ইতোপূর্বে কোনো বিশাল ভবন তৈরি না হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় আবাসিক হলের খেতাবটাও এখন জাবির প্রজাপতি হলের দখলে। যা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একার গৌরবের বিষয় নয়, এই গৌরব সমগ্র দেশের, বাঙালি জাতির।

উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী দেশের শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম একটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শুধু উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য নয় বরং অনেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অপরূপ সৌন্দর্যের মায়ায় পড়ে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সুবাদে এখানকার সব শিক্ষার্থীই আবাসিক হলে থেকে পড়াশোনা করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে আছে ‘মীর মশাররফ হোসেন হল’ বা প্রজাপতি হল। অথচ সবার ভাগ্যে সেই অন্তিম ভালোবাসার স্পর্শ জোটে না। আর তাই তো শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের হলটি সম্পর্কে বিভিন্ন আবেগঘন প্রতিক্রিয়া সোশ্যাল মিডিয়াসহ অন্যান্য মাধ্যমে ব্যক্ত করে থাকেন।

দেশ সেরা এই প্রজাপতি হলের সৌন্দর্য যেন সবাইকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। প্রকৃতিকে হাতের মুঠোয় পাওয়ার এ যেন এক অন্যতম অনুভূতি। জাবির প্রজাপতি হল যেন এক স্বপ্নের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল ফিল্ড ও টিএসসি-ক্যাফেটেরিয়া থেকে সামান্য একটু এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে দেশ সেরা এই প্রজাপতি হলের।

কুয়াশা ঢাকা ভোরে ঘন জঙ্গলের ছমছমে পরিবেশ গড়ে ওঠা লাল ইটের এই বিশাল ভবনের সৌন্দর্য চোখে পড়ার মতো। আর তাই তো ইতিহাসের সাক্ষী এ হলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক ভিড় জমাচ্ছেন। কেউ সেলফি, কেউ বা ভিডিও ধারণ করে তাদের সেই বিশেষ মূহুর্তগুলো ক্যামেরা বন্দী করার আনন্দে মেতে উঠছেন। বিশাল আকৃতির এই প্রজাপতি হলটি ঘুরে দেখতে বেশ বেগ পেতে হয় পর্যটকদের। এদিকে বিশাল এই প্রজাপতি হল ক্যামেরা বন্দী করতে গিয়েও ব্যর্থ হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রজাপতি হলের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো হলের শিক্ষার্থীরা। একমাত্র এই হলের শিক্ষার্থীরাই এই হলের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। শিক্ষার্থীদের কাছে এ যেন এক মায়ার বাঁধন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গীয়াস উদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, চিরায়ত সংস্কৃতি কিংবা বিমুক্ত প্রকৃতি সবটাই যেন আপাদমস্তকে ধারণ করে জাহাঙ্গীরনগর।

হ্যাঁ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই বলছি। এখানে প্রাণ-প্রকৃতির পূর্ণ স্পন্দন ইট-কাঠ-পাথরেরও যেন লেগে আছে। অবারিত সবুজের মাঝে লাল ইটের স্থাপনা মনে করিয়ে দিবে লাল সবুজের চেতনা। প্রকৃতির স্মারক চিহ্ন প্রজাপতি। তার লাল নীল পাখার শোভা মুগ্ধ করবে যে কাউকেই।

প্রজাপতির আদলে নির্মিত স্থাপনা দেখতে পাওয়া যাবে জাহাঙ্গীরনগরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই আমি জাবির প্রজাপতি হলের অপরূপ সৌন্দর্যের মায়ায় পড়েছি। আমার ইচ্ছে ছিল এই হলের শিক্ষার্থী হওয়ার। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আমি ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারিনি। তবে এই প্রজাপতি হলের শিক্ষার্থী না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এই হলের দাবিদার আমিও। সত্যি অসাধারণ এই হলের সৌন্দর্যগাথা। সংস্কৃতি এবং প্রাণ প্রকৃতির মর্যাদা রক্ষা এভাবেই জাহাঙ্গীরনগর সর্বদা কথায় ও কর্মে অগ্রগামী হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী শারমিন মৌরি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং মনোরম সৌন্দর্য মন্ডিত হলের নাম মীর মোশারফ হোসেন হল। যেটায় প্রজাপতির আকার দেওয়া হয়েছে। প্রজাপতি হল হওয়ায় আকর্ষণটাও অনেক বেশি। তাছাড়া হলের চারদিকের সবুজ ঘেরা পরিবেশ, রোড অব হেভেন সবসময়ই মুগ্ধ করেছে আমাকে। লোক মুখে শুনেছি হলটি এত বড় যে অনেকেই হলের ভেতরে গিয়ে হারিয়ে যায়। প্রজাপতির আকৃতির এ হলটি অনন্য এক স্থাপত্য।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সুবীর সরকার শাওন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল মানেই দ্বিতীয় বাসস্থান। আর সেটা যদি হয় জাবির এমএইচ হল, তাহলে স্বর্গের সুখ অনুভূত হয়। কারণ এই হলের চারপাশের সৌন্দর্য সবাইকে আকর্ষণ করে। আর এই হলের আকৃতি সবাইকে বিমোহিত করে। যারা এই হলে থাকে না, তারাও এই হলের প্রেমে পড়তে বাধ্য। এই হলের চারপাশ মায়া দিয়ে আবৃত। সৌন্দর্যের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ জাবির এই প্রজাপতি হল।

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত জাবি ক্যাম্পাসে এভাবেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে ভালোবাসার প্রজাপতি হল, এমনটাই প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

জাবি/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়