প্রতিষ্ঠার ৩১ বছর পর ‘মডেল’ রূপ পাচ্ছে খুমেক হাসপাতাল
নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
খুলনাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবার বৃহৎ সরকারি প্রতিষ্ঠান খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৩১ বছর পর ‘মডেল’ রূপ পেতে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রাথমিক পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হাসপাতাল পরিদর্শন ও চিকিৎসক-নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সঙ্গে সভা করেছেন সি-জে মডেল রেপ্লিকেশন বাস্তবায়ন কমিটি।
এ হাসপাতালকে ‘মডেল’ রূপ দেয়া সম্ভব হলে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি ও রোগী হয়রানি কমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় জনবল সংকট দূরীকরণসহ স্থানীয় কমিউনিটিকে কাজে লাগিয়ে হাসপাতালটিকে একটি ‘জনবান্ধব’ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সী মো. রেজা সেকেন্দার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং জিনাইদহ জেলা জেনারেল হাসপাতালকে (সি-জে) ‘মডেল’ ধরে তার আদলেই সরকার খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকেও ‘মডেল’ হাসপাতালে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর মধ্যেই তারা এর প্রাথমিক কার্যক্রমও শুরু করেছেন।
তিনি জানান, এ হাসপাতালে সবই রয়েছে। কিন্তু সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততার অভাব রয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতা নিয়ে এক কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ’ গঠন করে এ প্রতিষ্ঠানটিকে ‘মডেল’ হিসেবে রূপান্তর করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে, খুমেককে ‘মডেল’ রূপ দিতে সি-জে মডেল রেপ্লিকেশন বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে একটি টিম বুধবার হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে। দিনব্যাপী হাসপাতালে অবস্থান করে তারা চিকিৎসক-নার্স, বিভাগ ও ইউনিট প্রধান, আর.পি, আর.এস, আর.এম. ও, ই.এম.ও, ইনচার্জ, সহকারী রেজিস্ট্রার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উপ-সেবা তত্বাবধায়ক, নার্সিং সুপারভাইজার, নার্সিং কর্মকর্তা, পরিসংখ্যানবিদ, ওয়ার্ড মাস্টারসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক, রাজনীতিক, সিভিল সোসাইটি এবং স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সার্বিক সমস্যা-সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন।
এ সময় সি-জে মডেল রেপ্লিকেশন বাস্তবায়ন কমিটির ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ও আদ্ব-দীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইমদাদুল হক ও আইসিডিডিআরবি’র চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার ডা. ইকবাল আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে সি-জে মডেল রেপ্লিকেশন বাস্তবায়ন কমিটির ন্যাশনাল কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. ইমদাদুল হক রাইজিংবিডিকে জানান, তিনি এবং খুমেক হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ডা. মুন্সী মো. রেজা সেকেন্দারের হাতেই চৌগাছা ও ঝিনাইদহ হাসপাতাল ‘মডেল’ রূপ পেয়েছে। তাদের সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকেও তারা ‘মডেল’ রূপ দিতে চান। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের মানসিকতায় পরিবর্তন এনে ‘সৎ ও আন্তরিক’ হওয়ার আহবান জানান তিনি।
খুমেক পরিচালক ডা. মুন্সী মো. রেজা সেকেন্দার রাইজিংবিডিকে জানান, তিনি নিজে দুর্নীতি করেন না, দুর্নীতিকে প্রশ্রয়ও দেন না। আর এ কারণেই ‘মডেল’ রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা মাথায় রেখেই বিষয়টিকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে গ্রহণ করেছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৩১ বছর আগে ১৯৮৯ সালের ১৮ জানুয়ারি নগরীর বয়রা এলাকায় ৪০ দশমিক ২৫ একর জমির ওপর ৭৫ শয্যা বিশিষ্ট ‘খুলনা হাসপাতাল’ নামে যাত্রা শুরু করে। পর্যায়ক্রমে হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পরবর্তীতে এই হাসপাতালকে ঘিরে প্রতিষ্ঠা করা হয় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ। সেই থেকে ২৫০ শয্যার এই খুলনা হাসপাতালটি ‘খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল’ নামে পরিচিতি লাভ করে। জন্ম থেকেই হাসপাতালটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালটির সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হলেও কার্যত: কোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয়নি। হাসপাতালটি ২০০৮ সালে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও অদ্যাবধি এর জন্য কোনো জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। ২৫০ শয্যার জন্য নির্ধারিত জনবল দিয়েই চলছে হাজারো রোগীর চিকিৎসা সেবা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগের সূত্র জানান, ৫০০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনার জন্য চিকিৎসকসহ কমপক্ষে ১ হাজার ৬৫০ জনবল প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসক-কর্মকর্তাসহ মঞ্জুরিকৃত মোট পদ আছে ৮৯৭ জনের। এর মধ্যে ২০১টি পদ শূন্য রয়েছে। চিকিৎসক ও জনবল সংকটে কাংখিত সেবায় ব্যহত হচ্ছে। গত তিন দশকেও পূর্ণতা পায়নি খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। প্রয়োজনীয় জনবল অবকাঠামোর এক চতুর্থাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়েই চলছে এ হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রম।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে আটশ/নয়শ রোগী ভর্তি থাকে। আউটডোরে আসে প্রতিদিন ৩/৪শ রোগী। এতো রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক-সেবিকাসহ অন্যান্যদের। এখানে ৫০০ বেডের রোগীদের জন্য খাবার, বিছানাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা থাকলেও ৫০০ শয্যার অতিরিক্ত ভর্তি রোগীরা বেড পায় না। বারান্দার মেঝেতে বিছানা নিয়ে তাদের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সী মো. রেজা সেকেন্দার জানান, হাসপাতালটিতে জনবল সংকট রয়েছে। স্বল্প জনবল দিয়ে অধিক মানুষকে সেবা দিতে হচ্ছে। অনেকে বারান্দায় সেবা নিচ্ছেন। তারপরও আমরা রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য শতভাগ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী
আরো পড়ুন