বইমেলায় আদর্শকে স্টল না দেওয়ার বিষয়ে বাংলা একাডেমির ব্যাখ্যা
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
ছবি: সংগৃহীত
বইমেলার স্টল বরাদ্দ সংক্রান্ত শর্ত মেনে চলতে ‘অস্বীকৃতি জানানোর’ কারণে প্রকাশনা সংস্থা ‘আদর্শ’-কে এবার স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি।
রোববার (২২ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অমর একুশে বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি জানায়, শনিবার বিকেলে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। শর্ত মানতে না চাওয়ার কারণে আদর্শ প্রকাশনী আজকের স্টল বরাদ্দের লটারিতে অংশগ্রহণে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
কারণ ব্যাখ্যা করে আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, আবেদনকারী প্রকাশনীগুলোকে স্টল বরাদ্দ দিতে আজ (রোববার) লটারি হবে। একুশে বইমেলা ২০২৩ নীতিমালা অনুযায়ী ৩১ সদস্যের পরিচালনা কমিটি এ বরাদ্দ দেবে।
এদিকে, একাডেমির এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা জানিয়েছেন আদর্শ’র সিইও মাহাবুব রাহমান।
তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি এমন স্বেচ্ছাচারী আচরণ করতে পারে না। এই ব্যাপারটির নিষ্পত্তির জন্য আমরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হব।
এর আগে, বইমেলায় স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি অভিযোগ করে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেন আদর্শ কর্তৃপক্ষ।
মাহবুব অভিযোগ করে বলেন, বাংলা একাডেমি মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যেখানে সংবিধানের ৩৯ নম্বর ধারায় প্রত্যেক নাগরিকের চিন্তা, বিবেক, বাক ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের কথা বলা হয়েছে, সেখানে বাংলা একাডেমি কোন যুক্তিতে সংবিধানবিরোধী অবস্থান নেয়?
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’, ফাহাম আব্দুস সালামের ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ ও জিয়া হাশানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’ বই দেখিয়ে আদর্শ’র কর্ণধার বলেন, এ তিন বইয়ের কারণে আদর্শকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলে বাংলা একাডেমির লোকজন আমাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।
এর আগে, লেখক ফাহাম আব্দুস সালাম ও ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করেন, তাদের বইয়ের কারণে আদর্শকে স্টল বরাদ্দ দিচ্ছে না বাংলা একাডেমি।
প্রসঙ্গত, ফাহাম বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বড় মেয়ে শামারুহ মির্জার স্বামী।
আদর্শকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত এসবের প্রেক্ষিতে ও শনিবারের বইমেলা পরিচালনা কমিটির সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা একাডেমি আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার বিষয়ে আদর্শ’র কর্ণধারের সঙ্গে যোগাযোগসহ এর পূর্বাপর তুলে ধরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়।
বাংলা একাডেমি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দৃষ্টিগোচর হলে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ পরিচালনা কমিটি আদর্শ প্রকাশনা কর্তৃক প্রকাশিত লেখক ফাহাম আব্দুস সালাম রচিত ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ বইটি সংগ্রহ করেন এবং উপর্যুক্ত বইটি পাঠ করে কমিটি বইমেলা ২০২৩ নীতিমালা ও নিয়মাবলীর ১৪ নং অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ ১৪.১৪, ১৪.১৫ এ বর্ণিত শর্তাবলি পূরণে সক্ষম হয়নি বিবেচনায় প্রকাশনা সংস্থা আদর্শ’র প্রকাশক মাহাবুব রহমানের বক্তব্য শোনার জন্য বাংলা একাডেমির বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এই বই সম্পর্কে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনের জন্য তাকে আহ্বান জানান।
বইমেলার সদস্য সচিব উল্লেখিত বইটি বইমেলায় প্রদর্শিত হবে না, এই মর্মে একটি লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন এবং আসন্ন বইমেলার নীতিমালা অনুসরণ করতে মাহাবুবকে বিনীত আহবান জানান। প্রত্যুত্তরে মাহাবুব উপর্যুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না বলে দৃঢ়ভাবে তার অবস্থান ব্যক্ত করেন বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
এর পরের ঘটনা তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পরবর্তীতে তিনি (মাহাবুব) উল্লেখ করেন যে, বইমেলার বিদ্যমান নীতিমালা বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বইমেলার এই নীতিমালা মানেন না বলে স্পষ্টভাবে জানান, যা পরবর্তীকালে তার বরাত দিয়ে গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কথা-প্রসঙ্গে তিনি (মাহবুব) জানান, স্টল বরাদ্দ না পেলে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হবেন। প্রয়োজনে তিনি বিদেশি সহযোগিতা গ্রহণের কথাও উল্লেখ করেন। পরিচালনা কমিটিতে মাহাবুবের বক্তব্যটি উপস্থাপন করবেন কি না সে বিষয়ে সদস্য সচিব তার কাছে জানতে চাইলে তিনি হ্যাঁ-সূচক জবাব প্রদান করেন’।
বই নিয়ে আপত্তির বিষয়ে বাংলা একাডেমি বলছে, ‘আদর্শ-এর বিতর্কিত বইটির ১৫ নং পৃষ্ঠায় বাঙালি জাতিসত্তা, ১৬ নং পৃষ্ঠায় বিচার বিভাগ, মাননীয় বিচারপতিগণ, বাংলাদেশের সংবিধান, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় সদস্যবৃন্দ, ২০ নং পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং ৭১ নং পৃষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অশ্লীল, রুচিগর্হিত, কটাক্ষমূলক বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে।’
‘এসব বক্তব্য বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত মত-প্রকাশের স্বাধীনতা, যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে বাক ও ভাব-প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থী। যারা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন, আমাদের বিশ্বাস তারা এ বিতর্কিত বইটি পাঠ করেননি অথবা পাঠ করলেও বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯(২) এর মর্মার্থ অনুধাবন করতে সক্ষম হননি।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংবিধানের ৩৯(২) তুলে ধরে বলা হয়, ‘অনুরূপভাবে কমিটি মনে করে, বইটি অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ এর নীতিমালা ও নিয়মাবলীর অনুচ্ছেদ ১৪.১৪ ও ১৪.১৫ এর পরিপন্থী। এর প্রেক্ষিতে কমিটির পক্ষ থেকে বইটি প্রদর্শন ও বিক্রয়ের জন্য বইমেলার স্টলে না রাখার বিষয়ে আদর্শ-এর প্রকাশক মাহাবুব রহমানের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। তিনি উপর্যুক্ত বইটি স্টলে প্রদর্শন ও বিক্রয়ের জন্য রাখবেন বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, যা বইমেলার নীতিমালায় বর্ণিত শর্তাবলির সম্পূর্ণ বিপরীত।’
এরপর শনিবার বিকালে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সভায় প্রকাশনীটিকে ‘স্টল বরাদ্দের লটারিতে অংশগ্রহণে অযোগ্য বলে’ বিবেচিত হওয়ায় স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
মেয়া/এনএইচ
আরো পড়ুন