ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বাংলাদেশে রাজনীতি বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই: মঈন খান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫০, ২৪ জানুয়ারি ২০২৩  
বাংলাদেশে রাজনীতি বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই: মঈন খান

বাংলাদেশে রাজনীতি বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, আমরা যারা বিএনপি করি, তারা রাজনীতি বলতে যা বুঝি; মানুষের কল্যাণ করা, তাদের সেবা দেওয়া, তাদের উন্নয়ন করা এবং সত্যিকার অর্থে জনগণের ভোট নিয়ে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে দেশকে পরিচালনা করা। রাজনীতি বলতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবশিষ্ট কিছু নেই।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় ড. মঈন খান এসব কথা বলেন। 

রাজনীতি বলতে এখন বাংলাদেশের রাজনীতি বলতে অঘোষিত দুর্নীতি বলে মন্তব্য করেন মঈন খান। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে ছিল ২২ পরিবার। এখন এই আওয়ামী লীগই ২২০ পরিবার সৃষ্টি করেছে। অথচ এরা দীর্ঘবছর ক্ষমতায় থেকেও দেশের মানুষের অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। এ ধারা থেকে বের হতে না পারলে এই স্বাধীনতা অর্থহীন।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন রাষ্ট্রে বিরুদ্ধে যদি কেউ কথা বলে, সেটা রাষ্ট্রদ্রোহ হয়। কিন্তু কোনো দলের বিরুদ্ধে কথা বললে সেটা কিভাবে রাষ্ট্রদ্রোহ হয়? সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে, সেটা কিভাবে রাষ্ট্রদ্রোহ হয়? বিএনপির কেউ তো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলে না। বিএনপি তো সরকার ও আওয়ামী লীগের ভুল কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে। এটা তো সাংবিধানিক অধিকার।

বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এক লাখ মামলায় ৩৫ লাখ আসামি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলের মহাসচিবের বিরুদ্ধে ৮৪ টি মামলা। এতো কর্তৃত্ববাদী শাসন। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা সমাবেশের আগে ৩০ নভেম্বর থেকে ২৫ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়, এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাহলে কোথায় আছে রাজনীতি? রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই।

সরকার দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে মঈন খান বলেন, বিচার বিভাগ অবস্থা দেখুন, সরকার যেভাবে রায় লিখে দেয়, শুধু তা পাঠ করে। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে প্রশাসন তৈরি করা হয়, তাও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয় কে আওয়ামী লীগ করে। পুলিশ বিভাগকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তারা যত দুর্নীতি করুক, সরকার তাদের রক্ষা করবে, সব কিছু মাফ। এ দেশ এখন পুলিশি রাষ্ট্র। নির্বাচন কমিশন, ভোটের ফলাফল আগে রাতেই লিখে সই করে দেয়। মিডিয়ার কী স্বাধীনতা আছে?  দেশে এখন বাকশালের নামে অঘোষিত বাকশাল চলছে বলে মন্তব্য করেন ড. মঈন খান। তিনি বলেন, দেশে রাজনীতির রেশ বলতে কিছু নেই। ৭২ থেকে ৭৫ সালে লিখিত বাকশাল ছিল; এখন অলিখিত বাকশাল কায়েম করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ যা হুকুম করে তা জনগণকে মানতে বাধ্য করে। ক্ষমতাসীনদের অস্বাভাবিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা দিতে হবে। 

অনেকেই বলেন রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই উল্লেখ করে ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, আজকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেষ কথা ফিরিয়ে আনতে হবে। ধোঁকাবাজির রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না। স্বাধীনতা যুদ্ধে কাপুরুষের মতো পালিয়ে গেলাম, আর মুখে স্বাধীনতার কথা বলব- এই ধোঁকাবাজির রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না। সত্যিকার অর্থে যারা জীবনপন করে মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিল- আমাদের নেতা শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ক্ষান্ত হননি, তিনি সম্মুখ যুদ্ধ করেছেন এবং জয়লাভ করেছেন। তাকে বাংলাদেশের মানুষ বীরউত্তম উপাধিতে ভূষিত করেছিল। সেই জিয়াউর রহমানের সৃষ্ট জনগণের রাজনৈতিক দল বিএনপির একজন সদস্য হিসেবে নিজেকে গর্ববোধ করি। আওয়ামী লীগ মুখে একটা বলে, করে আরেকটা। যেটা করে তা কোনোদিন বলে না। এই রাজনীতি দেশের মানুষ অতীতে প্রত্যাখ্যান করেছে, এখন করছে আবার ভবিষ্যতেও প্রত্যাখ্যান করবে। এদেশের মানুষ চায় সৎ রাজনীতি, তারা চায়  গণতন্ত্র ফিরে আসুক, তারা তাদের অর্থনৈতিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। এসব ফিরে পেতে হলে প্রয়োজন সৎ রাজনীতি।

জিয়া প্রজন্ম দলের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সংগঠনের চেয়ারম্যান শাহীনুর মল্লিক জীবনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন রুবেলের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লাহ বুলু, নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ। 

মেয়া/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়