ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বিদায়ঘণ্টা বাজছে ডমিঙ্গোর!

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ৪ মে ২০২১   আপডেট: ২০:০০, ৪ মে ২০২১
বিদায়ঘণ্টা বাজছে ডমিঙ্গোর!

আরেকটি সিরিজ হার। আরেকটি ব্যর্থতার গল্প। ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া বাংলাদেশের কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর ভবিষ্যৎ শঙ্কায়। শ্রীলঙ্কা সফর ছিল তার অ্যাসিড টেস্ট। সেখানে তার দল পুরোপুরি ব্যর্থ। পুরোটা দায় নিতে হচ্ছে কোচকেই। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার যে বিদায়ঘণ্টা বাজছে, তা মোটামুটি নিশ্চিত।

ডমিঙ্গোর সমালোচনা ক্রিকেটাঙ্গনে ‘ওপেন সিক্রেট’। বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপনও সন্তুষ্ট নন কোচের পারফরম্যান্সে। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা সিরিজ শেষে কোচের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বিসিবি। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান বলেন, ‘আমরা কোচদের মূল্যায়ন করবো ওয়ানডে সিরিজের পর। ক্রিকেটারদের কেন্দ্রীয় চুক্তিও এরপরই চূড়ান্ত করবো। এজন্য এ সিরিজটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সবার জন্যই।’

তিন ওয়ানডে খেলতে ১৬ মে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। মিরপুরে তিন ওয়ানডে হতে পারে ২৩, ২৫ ও ২৭ মে।

২০১৯ সালের ৭ আগস্ট বিসিবিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। বিসিবির হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের (এইচপি) কোচ হিসেবে সাক্ষাৎকার দিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন এ দক্ষিণ আফ্রিকান। তার প্রোফাইলে উচ্ছ্বসিত হয়ে বিসিবি থেকে দেওয়া হয় জাতীয় দলের কোচ হওয়ার প্রস্তাব। বেতন ধরা হয় মাসিক ১৫ হাজার ডলারের মতো। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেট হজম করে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ধাক্কা। ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে হার। নতুন কোচ বলে সমালোচনায় বিদ্ধ হননি। কিন্তু দুই বছর পর তার নামের পাশে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিচ্ছেন নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ।

কারণটাও স্পষ্ট। ‘বাংলাদেশ দল ধারাবাহিক খারাপ খেলছে। খেলার মান দেখে মনে হচ্ছে না কোনও পরিকল্পনা কাজে আসছে। প্ল্যান এ কাজে না আসলে প্ল্যান বি’তে যেতে হয়। সেটাও না হলে প্ল্যান সি। বিকল্প ধরে আগাতে হবে। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে তারা পাঠ্যপুস্তকের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেটা নূন্যতম কাজে আসছে না’-রাইজিংবিডিকে এভাবেই বলছিলেন বিসিবির এক পরিচালক।

পাশাপাশি ডমিঙ্গোর কোচিং বাংলাদেশ দলের জন্য উপযোগী কী না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, ‘উপমহাদেশে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা ডমিঙ্গোর ছিল না। আমাদের এখানে ক্রিকেটারদের বলে দেবে আর ক্রিকেটাররা সেটা করবে, এমনটা নয়। তাদের পেছনে লেগে থাকতে হয়। তার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন না-ই থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ দলের জন্য উপযুক্ত কী না তা নির্ধারণ করার সময় এসেছে।’

ডমিঙ্গোর অধীনে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩১ ম্যাচ খেলে ১৮টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ দল। জয় ১৩টিতে। টেস্টে ৮ ম্যাচ খেলে একটি জয়, ওয়ানডেতে ৯ ম্যাচে জয় ৬টি ও টি–টোয়েন্টিতে ১৪ ম্যাচেও জয় ৬টিতে।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের মতে, জাতীয় দলের জন্য চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মতো কঠোর কোচকেই প্রয়োজন। তিনি বলেন,‘আমাদের কোচ হতে হবে হাথুরুসিংহের মতো। ডমিঙ্গো মানুষ হিসেবে যথেষ্ট ভালো। নরম মনের। তবে আমাদের এই পরিবেশের সঙ্গে যায় না।’

আশরাফুল আরও যোগ করেন, ‘ডমিঙ্গো এসেছেন অনেক দিন হয়ে গেলো। তাকে দিয়ে টিম ভালো করছে না। সামনে ২০২৩ বিশ্বকাপ। এ বছর আবার একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে। এখন থেকেই নতুন কোচ নিয়ে ভাবা উচিত।’

আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট অবশ্য ডমিঙ্গোর পক্ষেই কথা বললেন। তার জোর দাবি, মাঠে পারফরম্যান্স হচ্ছে না খেলোয়াড়দের কারণে। সেখানে কোচের ভূমিকা সামান্যই। তিনি বলেন, ‘কোচ তো আর ম্যাচ খেলবে না। আমার কাছে মনে হয় পরিকল্পনা খুব বেশি ভুল হয় তা না, নূন্যতম পারফরম্যান্স খেলোয়াড়কে করতে হবে। কোচকে দোষারোপ করে লাভ নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত খেলোয়াড়রা নিজ থেকে পারফরম্যান্স না করবে।’

তবে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন ডমিঙ্গো। মঙ্গলবার দলের সঙ্গে দেশে ফিরে তিনি বলেন, ‘আমি সেসব নিয়ে চিন্তিত নই। আমি এখানে ছেলেদের সঙ্গে কাজ করে খুশি। এখানের সেটআপও দারুণ। এখনও আমাদের কাজ করা বাকি। আমি মনে করি, আমাদের অনুপস্থিতিতে ঘরোয়া ক্রিকেটাররা কী কী সুযোগ সুবিধা পায় সেটা দেখা উচিত। আমি ছেলেদের সঙ্গে যুক্ত আছি। আশা করছি তাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে পারবো।’

ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়