ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে সরকার সতর্ক: অর্থমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ১১ মে ২০২২   আপডেট: ১৮:২১, ১১ মে ২০২২
বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে সরকার সতর্ক: অর্থমন্ত্রী

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুসংহত রাখতে সরকার নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। বিলাসজাত পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, প্রয়োজন ছাড়া সরকারি সফর বন্ধ করা হয়েছে, অতি প্রয়োজন ছাড়া নতুন প্রকল্প হাতে না নেওয়াসহ ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বন করেছে সরকার।

এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘যেসব উন্নয়ন প্রকল্প এখনই বাস্তবায়ন জরুরি নয়, সেগুলো ছয় মাস বা আরও পরে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কারণ, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অস্বাভাবিক সময় চলছে। এই সময়ে অহেতুক ব্যয় করতে চাচ্ছে না সরকার। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয়ে সরকার সতর্ক। এজন্য বিলাসপণ্যের আমদানিও যেন কম হয় সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

বুধবার (১১ মে) দুপুরে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাশেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সহজ। সময় যখন কঠিন, সিদ্ধান্ত কঠিন নিতে হবে। বর্তমানে বিশ্বের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। বিশ্বের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যতদিন বহির্বিশ্বে অস্থিরতা থাকবে, ততদিন এ ধরনের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে কঠিন মানে এমন নয় যে সবকিছু বন্ধ করে ফেলা হবে। বিলাসপণ্য পরে কেনা যাবে। যেসব প্রকল্পের সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের বিষয় রয়েছে এবং এখনই বাস্তবায়ন জরুরি নয় সেগুলো পরে বাস্তবায়ন করা হবে। সরকার এই অস্বাভাবিক সময়টি ম্যানেজ করার জন্য যা করার তাই করছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কবে শেষ হবে তা স্পষ্ট নয়। এই যুদ্ধ সারাবিশ্বে প্রভাব ফেলেছে।’

সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর সম্পর্কিত এক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখন যে সফরগুলো হচ্ছে সেগুলো আগেকার অনুমোদন নেওয়া। নিতান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নতুন করে বিদেশ ভ্রমণের অনুমোদন না দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। ফলে আপাতত বিদেশ সফর আর নয়।’

জিডিপির প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে দেশের অর্থনীতিবিদদের সংশয় বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জিডিপির হিসাব মেলাতে গেলে যেখান থেকে এই হিসাব করা হয়েছে তাদের সঙ্গে সংশয়বাদিদের বসতে হবে। তবে জিডিপির হিসাব যেভাবে করা হয়, সেভাবেই করা হয়েছে। কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ফলে কোনো সন্দেহও নেই।’

তিনি বলেন, ‘সব কাজে সব সময় সন্দেহ করার দরকার নেই। সবাই এদেশের মানুষ। দেশের ভালো সকলেই চায়। সরকার যে তথ্য প্রকাশ করেছে সেগুলো জনগণের জন্যই প্রকাশ করেছে। ফলে জিডিপির হিসাব কীভাবে করা হয়েছে তাও প্রকাশ করা হবে। সবচেয়ে বড় সন্দেহকারী বিশ্বব্যাংক, আইএমএফও সরকারের তথ্যে আপত্তি করে না বরং সরকারের সঙ্গে তারা একমত।’

তিনি আরও বলেন, ‘কঠিন সিদ্ধান্ত বলতে আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা বন্ধ হয়ে যাবে, আমাদের উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে, আমাদের স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো রকম ঘাটতি আসবে সেরকম কিছু নয়। যেসব প্রকল্প আমরা করতে চেয়েছিলাম, আমরা যদি মনে করি সেগুলো এখন না করলেও সমস্যা নাই সেগুলোকে আমরা পরবর্তী সময়ের জন্য রেখে দেবো, এভাবে আমরা সমন্বয় করছি। এখানে কোনো কিছু কমতি না, শুধু সময় কার্যকরভাবে সমন্বয় করতে চাই। আমাদের ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে আশা করি অর্থনীতির গতিশীলতা হারাবে না।’

কতদিন এভাবে সমন্বয় করতে হবে জানতে চাইলে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আপনি বলতে পারবেন না রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ কবে থামবে। মূল কারণ তো একটাই, এ মুহূর্তে কোভিড নাই। কোভিড মহামারী সারাবিশ্বে কমে গেছে সেজন্য শুকরিয়া আদায় করি। এটির প্রভাব আর নেগেটিভলি পড়ছে না। এখন শুধুমাত্র যুদ্ধের প্রভাব সারাবিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। সবাই এটা নিয়ে কষ্ট পাচ্ছে।’

ক্রয় কমিটির অনুমোদিত প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আজকের অনুমোদিত প্রস্তাবের মধ্যে একটি প্রকল্প খুব অসাধারণ। সেটি হলো আমাদের ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারাদেশে জায়গা-জমি নিয়ে যেগুলোর কাগজপত্র নেই সেগুলো নিয়ে অনেক মামলা মোকাদ্দমায় যেতে হয়। সেই মামলা মোকাদ্দমা সহজে শেষ হয় না। আমরা বিশ্বাস করি সেটি থেকে দেশের মানুষ মুক্তি পাবে। কারণ এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমির কাজগুলো সব ডিজিটালাইজড হবে। দেখা যাবে সবকিছুই এর আওতায় চলে আসবে। এটি খুব ভালো কাজ, দেশের মানুষের জন্য এটি কল্যাণকর। তাই এটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’

হাসনাত/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়