ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘ব্যর্থতার পরে সফলতা আসে’

আদিত্য রায় রিপন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০  
‘ব্যর্থতার পরে সফলতা আসে’

প্রতিনিয়তই নানা কারণে ঘটছে আত্মহত্যার ঘটনা। খবরের কাগজে নিয়মিত চোখে পড়ছে এ সংক্রান্ত সংবাদ। কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতি থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ জীবন যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে। পরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তারা কি আত্মহত্যা করছেন, নাকি তাদের আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হচ্ছে? পরিসংখ্যাণ বলছে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশ্বের কোথাও না কোথাও একজন আত্মহত্যা করছে।

আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে এর কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এর অনেক কারণ আছে। প্রধান কারণ হিসেবে মনোবিজ্ঞানীরা দায়ী করেছেন মানসিক ভারসাম্যহীনতাকে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, বাংলাদেশের প্রায় ৩১ শতাংশ জনগণ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। যারা আত্মহত্যা করে তাদের অধিকাংশই হতাশায় ভোগেন। ঠিক সেই মুহূর্তে তাদের কী করা উচিৎ, তখন সে বোধটুকু তাদের থাকে না। যখন এধরনের চিন্তা তাদের মাথায় আসে, তখন তারা উপায়হীন হন। ফলে এ পথে পা বাড়ান।

প্রতিবছর পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলেই দেখা যায় কিছু শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। কেন? তারা আশানুরূপ ফল করতে পারেননি বলে এ পথ বেছে নিয়েছেন? নাকি সমাজের সমালোচনার বাণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়? অবিভাবকরা শিক্ষার্থীদের কোমল মস্তিষ্কে এ প্লাস পাওয়ার প্রবণতাকে এমনভাবে গেঁথে দেন, যাতে শিক্ষার্থীদের মনে হয়- এ প্লাস না পেলে এ জীবন বৃথা। কেউ ফলাফল খারাপ করলে মানুষ তাকে নিয়ে বিভিন্ন রকম উস্কানিমূলক মন্তব্য করে। যা অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হয় না। ফলে সুপ্ত প্রতিভা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়।

ধর্ষণের শিকার মেয়েরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রতিবেশীর মুখে যখন সমালোচনার ঝড় ওঠে, যখন তাকে দেখে সমাজের মানুষ ব্যাঙ্গাত্মকভাবে তাকায়, তখন তাদের মুখ বন্ধ করতেই আত্মহত্যার মতো ঘৃণ্য পথ বেছে নেয়। সমাজকে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতেই নিজেকে শপে দেন মৃত্যুর কোলো। কিন্তু আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়।

এছাড়া আত্মহত্যার আরও অনেক কারণ আছে। যেমন প্রেমে ব্যর্থ হওয়া, মাদকাসক্তি, স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য, যৌতুক, কারো কাছে অপমানিত হওয়া, জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারা, জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করা, হতাশা, একাকিত্ব, হঠাৎ করেই প্রভাব প্রতিপত্তি কমে যাওয়া এবং ধার-দেনায় জর্জরিত হওয়া ইত্যাদি।

আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে পরিবারকে। শৈশবকাল থেকেই মানসিক চাপ ও রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো শিখিয়ে দিতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতে হবে। যারা পরীক্ষার্থী তাদের উচিৎ পরীক্ষার আগে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিতে হবে। সেই সঙ্গে এ প্লাসের চিন্তা মাথা থেকে পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলতে হবে। পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল করতে না পারলে তাদের বকা দেওয়া যাবে না। অন্য কারো সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। বরং আগামীতে ভালো করার অনুপ্রেরণা জোগাতে হবে।

ধর্ষিতার পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে- মানুষের জীবনে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে, তাই বলে আত্মহত্যা সমাধান নয়। একাকিত্বে বিষণ্ন হয়ে না পড়ে সেদিকে নজর দিতে হবে। বিষন্নতার কারণ জানার চেষ্টা করতে হবে। একঘেয়েমিভাব কাটাতে পর্যাপ্ত ও সুস্থ বিনোদন এবং খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। আকস্মিক ঘটনায় ততক্ষণাৎ বিচলিত না হয়ে শান্ত মস্তিষ্কে তা মোকাবিলা করার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে সবকিছুই আমার অনুকূলে হবে না। ব্যর্থতার পরে সফলতা আসে।

আর সমাজের কথা বাদই দিলাম। সমাজে আজকাল সান্ত্বনা দেওয়ার মতো মানুষের অভাব। কিন্তু খোঁচা দেওয়ার লোকের অভাব নেই। খোঁচা দেবেই, সমালোচনা করবেই। আমরা তাদের মুখ কখনোই আটকাতে পারবো না। মনে রাখতে হবে, ‘পাছে লোকে কিছু বলে...’।

লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

রাবি/মাহফুজ/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়