ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ব্যালটে আমার অভিজ্ঞতা, কেন্দ্র দখল করে ঘণ্টায় দুই-তিনশ সিল: সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৩, ২১ জুন ২০২২  
ব্যালটে আমার অভিজ্ঞতা, কেন্দ্র দখল করে ঘণ্টায় দুই-তিনশ সিল: সিইসি

ফাইল ছবি

ইভিএম ও ব্যালটের প্রসঙ্গে টেনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘ব্যালটে আমার নিজেরও অভিজ্ঞতা আছে; কীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করে এক ঘণ্টায় দুই-তিনশ সিল মেরে ভরাট করেছে। আপনারা পাশে থেকেও তো ওটা বন্ধ করতে পারেননি। সেদিক থেকে ইভিএমে যদি কোনও দোষত্রুটি থেকে থাকে, আমি ইভিএম বিশেষজ্ঞ না। তারপরও আমি এ পর্যন্ত যতটুকু ইভিএম দেখেছি ইতিবাচক দিক অনেক বেশি।

মঙ্গলবার (২১ জুন) ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক শেষে সিইসি এ কথা বলেন।

সিইসি বলেন, ‘আমাদের ওপর যদি আপনারা ডিপেন্ড করেন; তাহলে কিন্তু ইলেকশনটা সুন্দর হবে না। আপনাদের দায়িত্ব আরও অনেক বেশি। আপনারা ফিল্ডে থাকেন। আমি কয়টা সেন্টারে যাব সিইসি হয়ে? আমরা পুলিশকে ডেপ্লয় করার চেষ্টা করব। বিজিবি ডেপ্লয় করার চেষ্টা করব। এই কাজগুলো করার চেষ্টা করব। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে এখনও আপনাদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে।’

তিনি বলেন, ‘রিসেন্টলি যে নির্বাচনগুলো হয়েছে; আমরা কিন্তু কোনও সেন্টার থেকে কোনও এলিগেশন পাইনি যে, এটার (ইভিএম) অপব্যবহার হয়েছে। আপনারা টিভিতে দেখেছেন, দুয়েকজনের হাত মিলছিল না। সে বাসায় গিয়ে ধুয়ে আসার পরে আবার যখন আঙুলের ছাপ দিল, তখন কিন্তু আইডেন্টিফাই হয়েছে। যন্ত্রের কিছু কিছু সমস্যা হতে পারে। ব্যালটে যেমন একজনের জায়গায় ১০০টি (ভোট) দেওয়া হতে পারে, এখানে একটা জিনিস হাত না মিলতে পারে। কিন্তু আমার ভোট আপনি, আর আপনার ভোট আমি এটা একেবারেই অসম্ভব।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ইভিএমের ওপর যেহেতু আপনাদের পুরোপুরি আস্থা আসছে না; আমরা আজকের আলোচনাটা আয়োজন করেছিলাম ব্যাপক কনসাল্টেশনের জন্য। আজকে ১৩টি দলকে ডেকেছি। এর আগে ১৩টি দলকে ডেকেছিলাম। ১৩টি দল বোধহয় আসেনি, ৯-১০টি এসেছিল। আমরা জানি, ইভিএম নিয়ে আপনাদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। আমরা কিন্তু আপনাদের মতামত শুনছি। মতামতকে মূল্য দিচ্ছি। এরপর আরও ১৩টি দল আসবে। উনাদের সাথেও আমরা এভাবে মতবিনিময় করবো। আমরা এখনো কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। সব দলের মতামত না নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবো না। এজন্য আমরা এই প্রক্রিয়াটা গ্রহণ করেছি। আপনাদের মতামত বিশ্লেষণ করবো, সেই সুযোগটা আমাদের রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে নিবন্ধিত ৩৯টি দল আছে; তাদের প্রত্যেককে আমরা আমন্ত্রণ করেছি। আমরা আমাদের দিক থেকে শতভাগ সততার, নিষ্ঠার সাথে কাজ করবো। আমরা যারা কমিশনে আছি- তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কোনও কাজ করবো না, সরকারও চাইবে না আমরা আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করি। সবার সর্বাত্মক চেষ্টা লাগবে। আপনারা যদি ভোটকেন্দ্রে এসে লক্ষ্য করেন যে, আমরা ইভিএমে কোনও ম্যানুপুলেশন করছি কিনা, জাল ভোট হচ্ছে কিনা বা ব্যালটেও তো ভোট হবে। সেখানেও ভোটাররা সঠিকভাবে তাদের ভোট দিতে পারছে কিনা। সেই চেষ্টাগুলো সার্বিকভাবে আপনাদেরও করতে হবে।’

কাজী আউয়াল বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে শতভাগ আস্থায় বিশ্বাস করি না। শতভাগ আস্থা কখনও হয় না। আপনি হারলে বলবেন উনি চোরামি করেছেন। আর উনি বলবেন আমি খুব সৎ। কারণ এই দ্বন্দ্ব থেকে যাবেই। একশ পারসেন্ট আমি সৎ থাকবো, আমার চারপাশে যারা আছে- যাদের ওপর আমার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেই। আপনারা রাজনৈতিক দল, সরকার, সরকারি দল। তারাসহ সবাই কি আপনারা হান্ড্রেড পারসেন্ট সৎ থাকবেন? প্রশ্ন রাখেন সিইসি।’

এর আগে, বিকেল ৩টায় মতবিনিময় সভা শুরু হয়। দ্বিতীয় দফায় ১৩ দলকে আমন্ত্রণ জানালেও বিএনপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দল ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি। বাকি আটটি দল নিয়ে সভা করে কমিশন। প্রথম ধাপে ১৯ জুন ১৩ দলকে আমন্ত্রণ জানালেও ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও আন্দালিব রহমান পার্থ’র বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির কোনও প্রতিনিধি ওই সভায় অংশ নেয়নি।।

দ্বিতীয় দফায় ইসির সভায় যে আট দল উপস্থিত ছিল
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
 
যে পাঁচ দল ইসির আমন্ত্রণে আসেনি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল।

সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.), বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/হাসিবুল/এনএইচ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়