ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারে চলছে কুবি, কর্মকর্তাদের অসন্তোষ  

মাহফুজ কিশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৬:৫৩, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারে চলছে কুবি, কর্মকর্তাদের অসন্তোষ  

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) স্থায়ী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সরিয়ে একজন অধ্যাপককে রেজিস্ট্রার পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে চলছে প্রশাসন। 

বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরপরই ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কর্মরত রেজিস্ট্রার মো. মুজিবুর রহমান মজুমদারকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই পদে তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরকে রেজিস্ট্রার পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেলে তাকে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়।  

সম্প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। 

গত ১৩ সেপ্টেম্বর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। 

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে রেজিস্ট্রার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বেশকিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের উচিৎ দ্রুত স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়া।’

সাধারণত, বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের জন্য অ্যাডিশনাল রেজিস্ট্রার বা ডেপুটি রেজিস্ট্রার বা সমমানের পদে ৪-৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসহ বিশ্ববিদ্যালয়/সরকারি/স্বায়ত্ত্বশাসিত/স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে ১২-১৫ বছরের প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। অথচ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অধ্যাপককে প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়াই এই পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোয় বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। তাছাড়া, প্রশাসনিক পদে শিক্ষককে বসিয়ে দেওয়ায় নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়েও হতাশা আছে অনেক সিনিয়র কর্মকর্তাদের মাঝে। 

রেজিস্ট্রার পদে থাকলে নিজের পছন্দের শিক্ষকদের পদ, প্রমোশন, বিদেশ যাত্রার সুবিধা করে দিয়ে শিক্ষক রাজনীতি করাটা সহজ হয় বলে অনেক শিক্ষকের এই পদের দিকে নজর থাকে, উল্লেখ করেন একাধিক কর্মকর্তা। অনেকেই তাদের ক্ষোভ সম্পর্কে জানিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনে। 

এ প্রসঙ্গে কথা হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জিনাত আমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে আমিও বিব্রত। আমি উপাচার্য স্যারকে বেশ কয়েকবার জানিয়েছি যে, কর্মকর্তারা অ্যাসোসিয়েশনে এটি নিয়ে অভিযোগ করছেন। এটি একটি বাজে প্রবণতা, যা চালালে চলতেই থাকবে। উপাচার্য স্যার আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন ব্যাপারটি দেখবেন।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মো. সৈয়দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যদি প্রাক্তন রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকতো, তবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা যেত। তা না করে তাকে সরিয়ে লাইব্রেরিতে দেওয়া হলো, যেখানে তার কোনো কাজ নেই। আর যাকে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেওয়া হলো, সেই অধ্যাপক তো বেতন পান অধ্যাপনার জন্য, প্রশাসনিক কাজের জন্য না। আমি মনে করি এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি, এটা কখনো হওয়া উচিৎ না।’  

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের সিদ্ধান্তের লিখিত নোটিশটা আসুক। না আসলে এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না। অনেক কথাই তো এরকম মুখে শুনি। মুখের কথা আর লিখিত সিদ্ধান্ত তো এক জিনিস না।’ 

একজন স্থায়ী রেজিস্ট্রারকে সরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের অধ্যাপককে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে (সাবেক রেজিস্ট্রার) তো কত অভিযোগ! সেজন্যই তাকে সরিয়ে নতুন একজনকে দায়িত্ব দিয়েছি এবং কাজে গতি এসেছে। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। ধীরে ধীরে পূরণ হবে সব।’  

বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের কোনো পরিকল্পনা আছে কি-না জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘দেখা যাক। এটা অবস্থা বুঝে, আপাতত আমাদের কাজ ভালো হচ্ছে। বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়েই অস্থায়ী রেজিস্ট্রারে কাজ চালানো হচ্ছে। সব জায়গায় নেগেটিভিটি খুঁজতে যেও না।’ 

কুবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়