ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

মহাস্থানগড়ে সাধু-পুণ্যার্থীদের মিলন মেলা

এনাম আহমেদ, বগুড়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৮, ১২ মে ২০২২   আপডেট: ২২:২৫, ১৩ মে ২০২২

পুন্ড্রের রাজধানী বগুড়ার মহাস্থানগড়ে চলছে সাধু ও পুণ্যার্থীদের মিলন মেলা। প্রতি বছর বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার এই মিলনমেলা বসে মহাস্থানগড় মাজার প্রাঙ্গণে। রমজান এবং করোনা বিধিনিষেধের কারণে গত তিন বছর এই মিলনমেলা বন্ধ ছিল। এবার করোনার বিধিনিষেধ নেই, যে কারণে মহাস্থানে ঢল নেমেছে  সাধু সন্ন্যাসীদের। বিভিন্ন ত্বরিকার সন্ন্যাসীরা তাদের ত্বরিকার গান বাজনা করে আনন্দ উদযাপন করছেন।

পুন্ড্রনগরী মহাস্থানের ইতিহাস থেকে জানা যায়, মধ্য-এশিয়ার বল্লখ রাজ্যের সম্রাট হজরত শাহ সুলতান (রহ.) তার শীষ্যদের নিয়ে ফকিরবেশে বল্লখ থেকে মাছ আকৃতির নৌকায় চড়ে মহাস্থানগড়ে আসেন। মাছ আকৃতির নৌকায় চড়ে আসার কারণে তার তাকে ‘মাহি সাওয়ার’ এবং বল্লখ থেকে আসার জন্য তাকে ‘বলখি’ বলা হয়।

মহাস্থানগড় পৌঁছে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। প্রথমে রাজা পরশুরামের সেনাপ্রধান, মন্ত্রী এবং কিছু সাধারণ মানুষ ইসলামের বার্তা গ্রহণ করে মুসলিম হন। এভাবে পুন্ড্রবর্ধনের মানুষ হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকলে পুন্ডনগরীর রাজা পরশুরামের সঙ্গে শাহ সুলতানের ১৩৪৩ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ হয়।

সেই সময় যুদ্ধে রাজা পরশুরাম পরাজিত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় নিজের সম্ভ্রম ও ধর্মরক্ষার জন্য পরশুরামের একমাত্র বোন শিলা দেবী করতোয়া নদীতে আত্মবিসর্জন দেন। সেই দিন ছিল বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার। সেই থেকে এই দিনে মহাস্থানে উভয়ধর্মের মানুষেরা সমবেত হয় পুণ্য সঞ্চয়ের আশায়। কালক্রমে এটি হয়ে ওঠে সাধু-সন্ন্যাসী ও পুণ্যার্থীদের মিলন মেলা। এ দিন মহাস্থান মাজারে পবিত্র ওরশ মাহফিল হয়।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির জন্য শাহ সুলতান বলখি (রহ.)-এর মাজারে অবস্থান নিলেও সাধু ও বাউলরা অবস্থান নেন পাশের হজরত বোরহান উদ্দিন (রহ.) মাজার, পশ্চিম পাশের আমবাগান ও উত্তরপাশের আবাসিক এলাকার মাঝে। এছাড়াও মাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের মাঠসহ পুরো মহাস্থান এলাকায় বসে মেলা।

বর্তমানে মেলাটি যেহেতু বাউল-সাধু-সন্ন্যাস কেন্দ্রিক হয়ে গেছে, তাই মেলায় পিতলের বালা, মোটা পুথি ও পাথরের মালা, হুক্কা, একতারা, দোতারা, বাঁশের বাশি, বাউলদের তবলা, জুরির দোকানপাট বেশি বসে। এছাড়াও মেলায় স্থানীয় প্রসিদ্ধ খাবার মহাস্থানের কটকটি ভক্তদের কাছে জনপ্রিয়। কটকটি বিক্রি হয় প্রচুর পরিমাণে।

মেলায় ঘুরতে আসা সারিয়াকান্দি উপজেলার রজব আলী জানান, মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাউল সন্ন্যাসীরা আসেন। তারা বিভিন্ন ত্বরিকার গান বাজনা করেন। অন্য ধরণের কিছু মানুষের দেখা যায়, তাই মেলায় এসেছেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার তিনি এসেছেন মেলায়। বেশ ভালো লাগছে তার।

আরেক দর্শনার্থী উজ্জল হোসেন জানান, তিনি বগুড়া শহর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন মেলায় ঘুরছেন। দরবেশরা ব্যবহার করেন এমন বিভিন্ন ধরণের আংটি, বালা, মালার দোকান বসেছে। ঘুরে ঘুরে তিনি সেসব দেখছেন।

মেলায় কুষ্টিয়া থেকে এসেছেন শেখ ফরিদ নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি মাজারে মাজারে ঘুরে দরবেশদের লাঠি, আংটি, মালা বিক্রি করেন। তিনি জানান, প্রতি বছর তিনি এই মেলায় আসেন। তিনি অনেকগুলো লাঠি নিয়ে এসেছিলেন। লাঠিগুলো পাহাড়ি গাছ থেকে তৈরি। সেগুলোর নাম নাগমনি লতা। প্রতি পিস লাঠি ১০০ টাকা। তবে ৮০ টাকা হলেও তিনি বিক্রি করছেন। এখন পর্যন্ত ২৫টি লাঠি বিক্রি করতে পেরেছেন।

মহাস্থান মাজার মসজিদ কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান জানান, গত তিন বছর বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার এই অনুষ্ঠান হয়নি। তবে এবার কোনো বাধা নেই। এ জন্য প্রচুর মাজারভক্ত এবং দর্শনার্থীরা এসেছেন। মূলত বৈশাখের শুরু থেকে সাধু সন্ন্যাসরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মহাস্থানগড়ের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। মেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষণিক কাজ করছে বলে জানান তিনি।

/বকুল/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়