ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে নেই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

ইয়াছিন মোহাম্মদ সিথুন, নীলফামারী  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ২১ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৭:৩৩, ২১ জানুয়ারি ২০২৩
মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে নেই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে অবস্থিত মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটিতে নেই কোনো শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। নেই অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞও। চালকের পদ না থাকায় ১০ বছর ধরে পড়ে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। আছেন একজন মেডিকেল কর্মকর্তা। যিনি আরও দুটি পদের দায়িত্বে রয়েছেন।

এভাবেই সৈয়দপুর শহরের পৌর পরিষদের সামনে অবস্থিত ১০ শয্যার হাসপাতালটি কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ফলে সেবাপ্রত্যাশীদের বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা খরচ করে যেতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৫৮ সালে শহরের পৌর পরিষদের সামনে প্রায় ৪০ শতক জমির ওপর গর্ভবতী মা ও শিশুদের জন্য ১০ শয্যার মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র পরিদর্শিকা, নার্স ও সুইপার পদ শূন্য রয়েছে। হাসপাতালে দায়িত্বপালনকারী মেডিকেল কর্মকর্তা একই সঙ্গে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও ক্লিনিক্যাল কন্টাক সেশনের নীলফামারীর সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সপ্তাহে তিনদিন রোগী দেখেন এখানে। দুই মাস পর অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে তারও।

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ৬৫ বছর হয়ে গেলেও এখানে বাড়েনি একটি শয্যাও। অথচ জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। গড়ে প্রতিদিন কেন্দ্রেটিতে সেবা নিতে আসেন অর্ধ শতাধিক মানুষ। বিনা টাকায় সন্তান প্রসব, লাইগেশনসহ নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে ১৬ ধরনের সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও মেলে না তার কিছুই। চালকের পদ না থাকায় ১০ বছর ধরে চলছে না অ্যাম্বুলেন্সের চাকাও। এছাড়াও এই কেন্দ্রে নেই রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাগারও। একটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও তা ব্যবহারে সক্ষম চিকিৎসক নেই। ফলে বাধ্য হয়েই রোগীদের ভরসা করতে হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের ওপর।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটির কার্যক্রম চলছে জরাজীর্ণ একটি ভবনে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ক্লিনিকের সামনে  ও ছাদে আগাছা জন্মেছে। ভবনে দেওয়াল ও ছাদে ছত্রাকের ছড়াছড়ি। চিকিৎসা কর্মকর্তার কক্ষ তালাবদ্ধ। গল্পগুজব করে সময় অতিবাহিত করতে দেখা গেছে অফিস স্টাফদের।

সালেহা পারভীন নামে এক গর্ভবতী নারী বলেন, ‘এখানে চিকিৎসক দেখাতে এসে শুনি উনি নীলফামারীতে অফিস করছেন। এভাবে পরপর দুই দিন এসে ফিরে যাচ্ছি।’

শহরের গোলাগাট এলাকার বাসিন্দা বিলকিস বানু বলেন, ‘আমার দুই মাসের মেয়ে তিন দিন ধরে অসুস্থ। আমার স্বামী দিনমজুর। বিনামূল্যে চিকিৎসার কথা শুনে এখানে মেয়েকে চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলাম। কিন্তু এসে শুনি এখানে কোনো শিশু চিকিৎসক নেই।’ 

পোড়াহাট এলাকার সুমি বেগম বলেন, ‘অধিকাংশ সময় চিকিৎসক নেই বলে শুনতে হয়। চিকিৎসক না থাকলে হাসপাতাল রেখে লাভ কি?’

এ বিষয়ে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এখানকার পাশাপাশি আরও দুটি পদে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে আমাকে। তাই প্রতিদিন রোগী দেখা সম্ভব হয় না।‘ 

তিনি আরও বলেন, ‘২০০১ সালে শয্যা সংখ্যা ১০ টি বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেওয়া হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। জনবল, অকাঠামো ও নানা ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও যতোটা সম্ভব সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এবিষয়ে নীলফামারী জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মোজ্জামেল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এরপর থেকেই তার ফোনটি বন্ধ ছিল। 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়