ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ম্যারাডোনার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নিয়ে জটিলতা

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ১ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ০১:০৬, ২ ডিসেম্বর ২০২০
ম্যারাডোনার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নিয়ে জটিলতা

বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার ছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা, যেখানেই গেছেন ফেলেছেন ছাপ। ফুটবলে থেকে জীবনে অঢেল অর্থ উপার্জন করেছেন। সম্পত্তিও অফুরান। কিন্তু তা পুরোটা ভোগ করে যেতে পারেননি, এর উত্তরাধিকারী কে হবে তাও ঠিক করেননি। তার মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবে এই সম্পত্তির ভাগীদার নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কা এ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে নানা দেশ বিচরণ করেছেন ম্যারাডোনা। তাই বিশ্বের একাধিক দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার সম্পত্তি। এগুলো কীভাবে ভাগাভাগি করা হবে সত্যিই কঠিন কাজ, তবুও এটা তো করার দরকার।

আনুমানিক সাড়ে সাত কোটি ডলার মূল্যমানের সম্পত্তি

সেলেব্রিটি নেট ওর্থের তথ্য অনুযায়ী ম্যারাডোনা তার ক্যারিয়ার জুড়ে ৫০ কোটি ডলার অর্জন করেছেন। কিন্তু কোনও না কোনোভাবে তা অনেক কমে গেছে। শোনা যায়, ম্যারাডোনাকে বোকা বানিয়ে অনেকে অর্থ সরিয়ে নিয়েছে। তার বর্তমান সম্পত্তির মূল্যমান দাঁড়িয়েছে সাড়ে সাত কোটি ডলারের।

এই সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে ম্যারাডোনার প্রিয়জনদের মধ্যে নাটক হলে একটুও অবাক হবেন না বলে জানালেন ম্যারাডোনার মৃত্যুর সংবাদ সবার আগে প্রকাশ করা সাংবাদিক হুলিও চিয়াপ্পেত্তা। ক্লারিনের এই সাংবাদিক বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে এটা হতে যাচ্ছে ম্যারাডোনাকে নিয়ে পরবর্তী সোপ অপেরা।’

কোনও উইল নেই

এখন পর্যন্ত জানা গেছে, ম্যারাডোনা কাউকে তার সম্পত্তির উইল করে যাননি। তবে স্বাভাবিকভাবে তার সন্তানরা এর ভাগীদার হবেন।

ম্যারাডোনার স্বীকৃত সন্তান পাঁচজন: ডালমা ও জিয়ানিন্না (একমাত্র স্ত্রী ক্লাউদিয়া ভিয়াফানের গর্ভজাত), জানা (যার মা ভ্যালেরিয়া সাবালাইন), ডিয়েগো জুনিয়র (তার ইতালিয়ান সন্তান, যার মা ক্রিস্টিনা সিনাগরা) ও ডিয়েগো ফার্নান্দো (ভেরোনিকা ওজেদার ছেলে)। এই পাঁচ সন্তান হতে যাচ্ছে মূল উত্তরাধিকারী।

নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে এই পাঁচ সন্তান সম্পত্তি ভাগাভাগি করলে কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু কেউ যদি আপত্তি জানায় তাহলে বাঁধবে সমস্যা। 

জীবনের শেষ দিনগুলোতে ম্যারাডোনার পাশে দেখা গেছে তিন মেয়েকে। চিকিৎসক লিওপোলদো লুকুয়ের সঙ্গে একটি গ্রুপ ছবি সম্প্রতি শেয়ার করেছেন তারা সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই সময়ে বাবার শারীরিক অবস্থা নিয়ে খোঁজ রেখেছেন ডালমা, জিয়ানিন্না ও জানা।

ইতালিয়ান ছেলে ডিয়েগো একটু দূরেই ছিলেন। করোনাভাইরাস বিধিনিষেধের কারণে তার বাবার শেষকৃত্যেও হাজির থাকতে পারেননি। কিন্তু বাবার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল বেশ শক্ত এবং দুজনের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসাও ছিল দারুণ।

পঞ্চমজন সাত বছর বয়সী ছেলে ফার্নান্দো। তার মা ওজেদার সঙ্গে অনেক আগেই ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে ম্যারাডোনার। তার জন্য সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হওয়া একটু কঠিন বটে। এখন পর্যন্ত ম্যারাডোনার তিন মেয়ে ফার্নান্দো ও ওজেদাকে মেনে নিতে পারেনি।

যারা স্বীকৃত নয়

আরেকটি সমস্যা তৈরি হতে পারে ম্যারাডোনার বাকি সন্তানদের কারণে, যারা আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। ধারণা করা হয়, এমন সন্তান আছে ছয়জন: একজন লা প্লাতার, আরেকজন বুয়েন্স আয়ার্সে এবং অন্তত চারজন কিউবায়।

তারা ম্যারাডোনার সম্পত্তির ভাগীদার হতে পারে কি না তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এরই মধ্যে এক যুবক তাকে আর্জেন্টাইন ফুটবল গ্রেটের সন্তান হিসেবে দাবি করেছেন। একই সঙ্গে ম্যারাডোনাকে গোরস্থান থেকে তুলে ডিএনএ’র নমুনা পরীক্ষার আহ্বান করেছেন তিনি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এমন কিছুর অনুমতি দেওয়া হয়নি।

তাতে দাঁড়ালো যে, ম্যারাডোনার উত্তরাধিকার হওয়ার লড়াই হবে ১১ সন্তানের মধ্যে। তবে একজন বিচারক এরই মধ্যে বিশ্বজয়ী অধিনায়কের তিন কন্যাকে প্রাধান্য দিয়ে রুল জারি করেছেন।

সম্পত্তি

ম্যারাডোনার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক সম্পত্তি এক জায়গায় করা বলতে গেলে অসম্ভব। কারণ কোথায় কতটা সম্পত্তি আছে তা সঠিকভাবে নিরূপণ করা যায়নি। হয়তো বা সময় লাগবে।

তবে ‘ম্যারাডোনা’ ব্র্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করেন তার আইনজীবী মাতিয়াস মোরলা, অন্তত যুক্তরাষ্ট্র ও আর্জেন্টিনায়। এক হিসেবে তার এই আইনজীবীকেও উত্তরাধিকারের তালিকায় গণনা করা যেতে পারে।

একটি বিচার

কর অপরাধের অভিযোগে সাবেক স্ত্রী ক্লাউদিও ভিয়াফানের সঙ্গে তার একটি বিচারকার্য স্থগিত রয়েছে ২০১৫ সাল থেকে। সেটির মিটমাটও হতে হবে।

উত্তরাধিকারী কে- এই জটিল পরিস্থিতির সমাধান এখনই করা সম্ভব নয়। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত, ম্যারাডোনার মৃত্যুর পরও তার নাম থেকে অর্থ তৈরি বন্ধ হবে না এবং তার উপার্জন ভাগাভাগি করা নিয়েও সমস্যা চলতেই থাকবে।

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়