ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন মেরিনা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩২, ২২ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১২:৩৬, ২২ জানুয়ারি ২০২৩
‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন মেরিনা

মেরিনা খাতুন

১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হন সিরাজগঞ্জের তাড়াশের উত্তরপাড়ার মৃত ফাজিল আকন্দের স্ত্রী পচি বেওয়া। স্বাধীনতার পরে পিতৃপরিচয়হীনভাবে জন্ম হয় মেরিনা খাতুনের (৫১)। এরপর থেকেই সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছেন দিনের পর দিন। 

দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০১৮ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়ে গেজেটভুক্ত হন পচি বেওয়া। এর আগে ২০০৫ সালের ১৮ এপ্রিল তিনি মারা যান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা পচি বেওয়ার মেয়ে মেরিনা খাতুন এবার বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন। 

মেরিনা খাতুন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ওয়াপদা বাঁধ এলাকার ওমর আলীর স্ত্রী।

গত ৯ জানুয়ারি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) মহাপরিচালক জহুরুল ইসলাম রোহেলের সই করা এক পত্রের মাধ্যমে মেরিনা খাতুনকে ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

রোববার (২২ জানুয়ারি) সকালে মেরিনা খাতুন ও তার স্বামী ওমর আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, তাড়াশের বীরঙ্গানা পচি বেওয়ার (মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত) মেয়ে মেরিনা খাতুন যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য ২০২২ সালের সেপ্টম্বর মাসের ৮ তারিখে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ৮২ তম সভায় মন্ত্রী বিষয়টি উত্থাপন করেন। সেখানে যুদ্ধশিশু হিসেবে মেরিনা খাতুনকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্থানীয় রাজাকাররা তাড়াশের উত্তর পাড়ার মৃত ফাজিল আকন্দের বিধবা স্ত্রী পচি বেওয়াকে (বর্তমানে মৃত) বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় পাক বাহিনীর সামরিক ক্যাম্পে।
সেখানে তারা ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় পাকিস্তানি সেনারা। 

দেশের প্রথম যুদ্ধশিশু হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়ে মেরিনা খাতুন বলেন, ‘আমাকে স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত সম্বলিত পত্র হাতে পেয়েছি। এতে আমি আনন্দিত। পাশাপাশি, মুক্তিযোদ্ধাদের মতো যুদ্ধশিশুদের আর্থিকভাবে সম্মানী দেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।’

মেরিনা খাতুন কন্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বড় হয়ে মায়ের কাছ থেকে জেনেছি কিভাবে তিনি আমাকে পেটে ধারণ করেছেন। কিভাবে মানুষজন তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। আর বর্তমানে যুদ্ধশিশু হিসেবে আমিও মায়ের মতোই অসহনীয় যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত জীবন-জীবিকা নিয়ে যুদ্ধ করছি। বর্তমানে আমার ১০ সদস্যের অভাব-অনটনের সংসারে স্বামীর একটি অটোভ্যান আর ছেলের চা বিক্রির টাকায় কোনোমতে চলেছি। তাই আমি চাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মায়ের মতো সন্মানজনক সুবিধা।’

১৯৭১ সালের চলনবিলের যুদ্ধকালীন সংগঠন পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাড়াশের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক সাইদুর রহমান সাজু বলেন, যুদ্ধশিশু মেরিনার জীবন যেন ৭১ এর যুদ্ধের গল্পের মতোই করুণ। কেননা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্থানীয় রাজাকাররা পচি বেওয়াকে বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়। পাকিস্তানি বাহিনীর সামরিক ক্যাম্পে পাশবিক নির্যাতনের ফলে জন্ম হয় মেরিনা খাতুনের। এর চেয়ে আর নির্মম কী হতে পারে? পরে মাত্র ১২ বছর বয়সে ১৯৮৪ সালে তাড়াশের ওমর আলীর সঙ্গে কিশোরী মেরিনা খাতুনের বিয়ে হয়। বর্তমানে তিন ছেলে ও এক মেয়ের মা তিনি।

তাড়াশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আরশেদুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধশিশু মেরিনার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্যও আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম। তাড়াশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা সব ধরনের সহযোগিতা করবে তাকে।

অদিত্য/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়