ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বাসচাপায় রাজীব-দিয়ার মৃত্যু: যে কারণে ঝুলে আছে আপিল

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ২৯ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বাসচাপায় রাজীব-দিয়ার মৃত্যু: যে কারণে ঝুলে আছে আপিল

দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব

বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় জাবালে নূর পরিবহনের বাসমালিক মো. শাহাদাত হোসেন আকন্দের বিচার দুই বছরেও শেষ হয়নি। হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করায় থমকে আছে বিচার। 

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মামলা সচল থাকলে শাহাদাতেরও সাজা হয়ে যেত। তাকে বিচারের আওতায় আনতে মামলা সচল করতে উদ্যোগ নিচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে ঢাকার কালশী ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে জাবালে নূর বাসের চাপায় দিয়া ও রাজীব নিহত হয়  আহত হয় ১৫-২০ শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম মামলা দায়ের করেন। 

মামলায় গত বছর ১ ডিসেম্বর তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দুই আসামিকে খালাস দেন আদালত। আসামি জাবালে নূর পরিবহনের বাসমালিক মো. শাহাদাত হোসেন আকন্দের মামলার অংশের কার্যক্রম হাইকোর্ট স্থগিত করেন। এ কারণে তার অংশের মামলার বিচার শেষ হয়নি।

এ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু জানান,  অবৈধ লাইসেন্স দিয়ে অন্যায় করে কেউ পার পাবে না। শাহাদাত হোসেনও অন্যায় করেছেন। তিনিও যেন বিচারের আওতায় আসেন, এজন্য তার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘‘করোনার কারণে এখন হাইকোর্ট বন্ধ। শুধু জামিন ছাড়া অন্য কার্যক্রম চলছে না। কোর্ট খুললে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে যোগাযোগ করবো। যাতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয় সেই বিষয়ে উদ্যোগ নিবো। বিচারের আওতায় এনে তার যেন সাজা হয়, সেই জন্য কাজ করে যাবো।’’  

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, যারা দোষী তাদের সাজা হয়ে গেছে। বাসমালিক শাহাদাত হোসেনেরও বাঁচার সুযোগ নেই। মামলা সচল থাকলে ওই আসামিদের সঙ্গে তারও সাজা হয়ে যেত। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে তার অংশের মামলার কার্যক্রম রাষ্ট্রপক্ষ দ্রুত শেষ করবে। 

কালশী ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে ১৫-২০ শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিলেন। জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় মুখেই দাঁড়িয়ে যায়। পেছন থেকে জাবালে নূরের আরেকটি বাস ওভারটেক করে সামনে আসতে চাইলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর ওঠে যায় আগের বাসটি। চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে দুই শিক্ষার্থী মারা যায়।

ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উত্তর ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক কাজী শরীফুল ইসলাম ঢাকা সিএমএম আদালতে ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, বেপরোয়া গতির কারণে মাছুম বিল্লাহর চালানো বাসটি ফ্লাইওভারের ঢালে রেলিং ও দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ওই সময় যাত্রীরা বাসটি সাবধানে চালানোর জন্য চালক ও তার সহকারীকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা যাত্রীদের অনুরোধ রাখেননি।

২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। মামলায় ৪১ জনের মধ্যে ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ১ ডিসেম্বর মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

রায়ে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচালক মাসুম বিল্লাহ, আরেক চালক মো. জোবায়ের সুমন ও চালকের সহকারী মো. আসাদ কাজীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। আসাদ কাজী এখনও পলাতক।

দণ্ডপ্রাপ্তদের আইনজীবীরা বলছেন, বিচারিক আদালতে তারা ন্যায় বিচার পাননি। উচ্চ আদালতে গেলে ন্যায় বিচার পাবেন। রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পর আপিল করার কথা জানান তারা।

জোবায়ের সুমনের আইনজীবী টিএম আসাদুল সুমন বলেন, ‘‘আমি ন্যায়বিচার পাইনি। রায়ের সার্টিফাইড কপি আমরা এখনো পায়নি। কপি পাওয়ার পর আপিল করবো। আশা করছি উচ্চ আদালতে ন্যায় বিচার পাবো।’’

 

ঢাকা/মামুন খান/বকুল

রাইজিং বিডি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়