ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শহর থেকে সরছে ময়লার স্তূপ, নির্মাণ হবে শিশুপার্ক

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১২, ২০ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৭:২৯, ২০ জানুয়ারি ২০২৩
শহর থেকে সরছে ময়লার স্তূপ, নির্মাণ হবে শিশুপার্ক

হবিগঞ্জ পৌরসভার ভেতরে শিশুদের জন্য নেই আধুনিক কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা বা শিশুপার্ক। যদিও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একাধিকবার শিশুপার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন, তবে কালের পরিক্রমায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি নানা কারণে। ফলে ছুটির দিন বা অবসর সময়ে শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকায় অভিভাবকদের কণ্ঠে শোনা যেতো আক্ষেপ আর হতাশার সুর। 

শিশুপার্ক বললে কল্পনার মানসে যে চিত্র ভেসে ওঠে, সেটি কল্পনা করাও অনেকটা দুঃস্বপ্ন বলেই মনে করেন শহরে থাকা অভিভাবকরা। সেই আক্ষেপ হয়তো আর থাকবে না। অভিভাবকদের প্রত্যাশা পূরণে আর শিশুদের মানসিক বিকাশে এগিয়ে এসেছে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান জানান, হবিগঞ্জ আধুনিক স্টেডিয়ামের কাছ থেকে ময়লা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে নির্মাণ হবে বহুল প্রতিক্ষীত শিশুপার্ক। যা শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করবে। শিশু পার্ক নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে স্থানও ঠিক করা হয়েছে। প্রায় ২ একর ১০ শতক জমির ওপর গড়ে তোলা হবে পার্কটি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরের পশ্চিম পাশ ঘেঁষা কামড়াপুর-নসরতপুর বাইপাস সড়ক। এ সড়কের পাশে সুলতান মাহমুদপুর গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক স্টেডিয়াম। স্টেডিয়াম সংলগ্ন বাইপাস সড়কের ঠিক উল্টো পাশে রয়েছে জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, দি রোজেস কালেক্টরেট স্কুল, আনসার ভিডিপি কার্যালয়, শাহ এএমএস কিবরিয়া অডিটরিয়াম, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ কয়েকটি সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও। এতোদিন স্টেডিয়াম এলাকাসহ বাইপাস সড়কের দুই পাশের ১ থেকে ২ কিলোমিটার পরিণত হয়েছিলো ময়লা আর্বজনার ভাগাড়ে। ফলে সড়কের দুইপাশে আর্বজনার স্তূপ ও দুর্গন্ধের কারণে ক্রীড়া প্রেমীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ছিলেন ক্ষুব্ধ ও হতাশ। নির্মিত আধুনিক স্টেডিয়ামটি ঘিরে তৈরি হয়েছিল জেলার ক্রীড়াঙ্গণের এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু একটি মাত্র কারণে অর্থাৎ পৌরসভার ফেলা ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ ছিলেন পথচারীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। 

২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর বিকেলে ওই স্থান থেকে ময়লা অপসারণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। 

হবিগঞ্জ পৌরসভা সূত্র জানায়, ২০০২ সাল থেকে আধুনিক স্টেডিয়ামের পাশে পৌর এলাকার ময়লা আবর্জনা ফেলা শুরু হয়। বছরের পর বছর ধরে ময়লা ফেলায় ওই এলাকা ভাগাড়ে পরিণত হয়। দুর্গন্ধে শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাইপাস সড়কে চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়ে। আধুনিক স্টেডিয়ামে খেলাধুলার আয়োজন করাও অনেকটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই স্টেডিয়ামে আসা খেলোয়াড়রাও অতিষ্ঠ ছিলেন দুর্গন্ধে। পাশে থাকা আধুনিক কিবরিয়া অডিটরিয়ামেও কোনো অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা সম্ভব হয়নি দুর্গন্ধের কারণে। এছাড়া বৃন্দাবন সরকারি কলেজ ও দি রোজেস কালেক্টরেট স্কুল, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও আনসার ভিডিপি কার্যালয় এলাকা পর্যন্ত ভাগাড়ের দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শহরবাসী আবর্জনা অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ডাম্পিং স্টেশনের জন্য উপযুক্ত জায়গা না পাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছিলো না।

পরে হবিগঞ্জ-লাখাই আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির, জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান ও পৌর মেয়র আতাউর রহমান সেলিমের প্রচেষ্টায় ডাম্পিং স্টেশনের ব্যবস্থা করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ময়লা অপসারণ শুরু হয়। ১০ দিনের মধ্যে ময়লা সরানো হয়েছে। এতে শহরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়েছে। এখন পথচারীদেরও আগের মতো অভিযোগ নেই। সবাই খুশি।

আজিজ নামের এক পথচারী বলেন, ‘শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের পাশে এতদিন আবর্জনার ভাগাড় ছিল। এখন অন্তত নিঃশ্বাস নিতে আগের মতো কষ্ট পেতে হবে না। তবে পরবর্তীতে কেউ যাতে ময়লা আবর্জনা ফেলতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি দিতে হবে।’ 

একই এলাকার বাসিন্দা তৃতীয় লিঙ্গের সুজন বলেন, ‘অনেক কষ্টে এখানে বসবাস করেছি। সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় ময়লার গন্ধে অতিষ্ঠ ছিলাম। নাকে রুমাল চেপে চলাচল করতে হয়েছে। কিন্তু এখন ময়লা না থাকায় স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছি।’

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘হবিগঞ্জে যোগদান করে মতবিনিময় করেছিলাম। সেই সময় সাংবাদিকরা জানান, স্বাধীনতার পর থেকে হবিগঞ্জে ডাম্পিং স্টেশন ছিলো না। পৌরসভার সব ময়লা আধুনিক স্টেডিয়ামের কাছে সড়কের দুই পাশে ফেলা হয়। আমি গিয়ে দেখেছি ময়লার স্তূপ পরিবেশকে দূষিত করে তুলেছে। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর অভিযোগ পেয়েছি। গন্ধের কারণে দাপ্তরিক কাজে সমস্যা হয় বলেও তারা উল্লেখ করেছেন অভিযোগে। এছাড়া নিউফিল্ড মাঠে মেলা হয়। দুর্গন্ধের কারণে লোকজন সেখানে যেতে চাইতেন না। সেই সঙ্গে আধুনিক স্টেডিয়ামে খেলাধুলার আয়োজন করা যাচ্ছিল না। পরে সংসদ সদস্যের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছি। তিনি আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তারপর রিচি ইউনিয়নের জমি নির্ধারন করি। কারণ সেখানে খাস জমি আছে প্রায় ২ একরের মত।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে ডাম্পিং স্টেশন করা হলে শহরবাসী দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পাবে। প্রায় বছরখানেক কাজ করেছি। সেখানে পানি উন্নয়নের বোর্ড এর মাধ্যমে বাঁধ সংস্কার হয়েছে যাতে করে সেখানে ময়লা নিয়ে ট্রাক যেতে পারে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রায় ১ কিলোমিটার ইট সোলিং রাস্তা করা হয়েছে। পরবর্তীতে এলজিইডি’র মাধ্যমে পুরো রাস্তা পিচ ঢালাই করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পৌরসভার মাধ্যমে ময়লা সরানোর কাজ দ্রুত শুরু করতে পেরেছি। এখন ইচ্ছা আছে হবিগঞ্জ আধুনিক স্টেডিয়ামের পাশের ওই স্থানটি সংস্কার করে শিশুদের জন্য পার্ক করা।’ 

জেলা প্রশাসক শিশু পার্ক নির্মাণের জন্য এটিই উপযুক্ত জায়গা উল্লেখ করে বলেন, ‘বাইপাস সড়কের স্টেডিয়ামের পাশে রয়েছে জলাশয় এছাড়া পূর্ব দিকে পুকুর ও নিউ ফিল্ডের খেলার মাঠ। এখানে শিশু পার্ক গড়ে তোলার জন্য যা যা করার দরকার সবকিছু করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে।’

মামুন চৌধুরী/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়