ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘শেখ হাসিনা বেঁচে থাকায় ভালো আছি, আমিও বেঁচে আছি’

শেখ মোহাম্মদ রতন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৪, ২১ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘শেখ হাসিনা বেঁচে থাকায় ভালো আছি, আমিও বেঁচে আছি’

‘মুহূর্তেই দ্রিম দ্রিম কান ফাটানো বিকট শব্দ, এরপর আরও কয়েকটি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কিছু বুঝার আগেই দেখতে পাই, রক্তে ভেসে যাচ্ছে মঞ্চের আশপাশ। আমার ডান পাশে থাকা আইভী আপার দুপা নেই। তার শরীরের নিচে শুধু রক্ত আর রক্ত।’

এভাবেই বলছিলেন ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আহত শরীরে অসংখ‌্য স্প্লিন্টার বয়ে বেড়ানো মিজি মো. মনির হোসেন।

তিনি বলতে থাকেন, ‘পাশে থাকা আদা চাচা কিছুক্ষণ আগেও দেখেছি, মঞ্চের কাছে নেতাকর্মীদের হাতে আদা দিচ্ছেন। সেই আদা চাচাও মঞ্চের সামনে পড়ে রয়েছে রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন ক্ষত বিক্ষত অবস্থায়। আহাজারি ও ছুটোছুটি চলছে মঞ্চের নিচে ও আশপাশ এলাকায়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের সেই ভয়াবহতার দৃশ্য দেখার আড়াই দিন পর নিজেকে খুঁজে পাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ নম্বর বেডে। তাকিয়ে দেখি দু’পায়ে কোমড় পর্যন্ত, মাথায় ও হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা। শরীরে একাধারে দেওয়া হচ্ছে স্যালাইন ও রক্ত। আশে পাশে কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মীদের মুখে শুনলাম গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়েছি।’

২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু অ‌্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” বলার আকস্মিক গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২২ জন নিহত ও কয়েকশ নেতাকর্মী গ্রেনেডের স্প্রিন্টারে আহত এবং পঙ্গু হয়েছেন। তদেরই একজন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার শিলই গ্রামের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা মিজি মো. মনির হোসেন পঙ্গুত্ববরণ করে গত ১৬ বছর ধরে সেই বিকেলের ভয়াবহতার ক্ষতচিহ্ন ও অজস্ত্র স্প্লিন্টার এখনও শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন।

মহানগর আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা মিজি মো. মনির হোসেন সেই ভয়াবহতার কথা গুলো বলার সময় বারবার শিউরে উঠছিল তার শরীর।

২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় পঙ্গুত্ব বরণ করা মিজি মনির হোসেন বলেন, শরীরে আজও অজস্র স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছি। প্রতিনিয়ত চুলকানি ও ব্যাথা অনুভব হয়। দু’দিন পরপর পা ফুলে যায়, হাত ও পায়ের আঙুলে দেখা দেয় ঘা। তখন অসহ্য যন্ত্রনায় চিৎকার করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। প্রচণ্ড ব্যাথায় তখন মনে হয় নিজেই নিজের জীবন শেষ করে ফেলি।

মিজি মনির হোসেন বলেন, ‘গ্রেনেড হামলায় তার কাছেই থাকা মাহবুবুর রশীদ, কুদ্দুস পাটোয়ারি, সেন্টুসহ অনেকেই নিহত হয়েছেন। রক্তাক্ত অবস্থায় আধা ঘণ্টা পড়ে থাকার পর কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসকরা তার বাচাঁর আশা ছেড়ে দিয়ে ক্ষতবিক্ষত একটি পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে পাঠিয়ে দেয় পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে পায়ের অস্ত্রোপাচার হলেও দিন দিন অবস্থার অবনতি হতে থাকলে এক মাস পর আমাকে ধানমন্ডির ট্রমা সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে দেড় বছর চিকিৎসা সুস্থ হলেও হারিয়ে ফেলেছি, কর্মক্ষমতা ও চলার শক্তি- যা এই জীবনে আর ফিরে পাবো না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। একটানা কয়েক বছর ক্রাচে ভর করে হাঁটতে হয়েছে আর আমৃত্যু হাঁটতে হবে লাঠিতে ভর করেই।’


মনির হোসেন বলেন, তিন মেয়ে, দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। থাকেন ঢাকার শনিরআখড়া এলাকায়। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পেয়েছেন ৫০ লাখ টাকা, তা দিয়ে ভালো ভাবেই চিকিৎসা করেছেন, এখন সংসারও ভালো চলছে তার। তিনি (আপা) সাহায্য না করলে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতাম। “বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বেঁচে থাকায়, আমিও বেঁচে আছি”। এখন একটাই চাওয়া দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আরও দীর্ঘ বছর বাচিঁয়ে রাখেন, আল্লাহ’র কাছে সেই প্রার্থনাই করি।

বিচার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেখে যেতে চান শরীরে অজস্ত্র পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা মিজি মনির হোসেন। 

মুন্সিগঞ্জ/সাজেদ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়