ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি মাদারীপুর সদর হাসপাতাল

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১০, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১১:১১, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩
সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি মাদারীপুর সদর হাসপাতাল

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের ওষুধসহ অন্যসব মালামাল সরবরাহেরর কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাগজে কলমে ওষুধের সরবরাহ থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়াও গজ ব্যান্ডেজ, লিলেন কাপড়, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতির সরবরাহ পর্যাপ্ত নেই হাসপাতালে। এতে করে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারি সেবা থেকে অপর দিকে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, মালামাল সরবরাহের কাজে মাদারীপুর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হওয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের জন্য গত অর্থ বছরে আইভি ফ্লুইড ও দন্ত চিকিৎসার উপকরণ (ওষুধ) কেনা হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ ৩১ হাজার ১৮৪ টাকার। অথচ এই হাসপাতালে দন্ত চিকিৎসক নেই গত দুই বছর থেকে। 

সম্প্রতি রোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালে ঝটিকা অভিযান পরিচালনাও করেছে দুদক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৫ বছর আগে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মালামাল সরবারহের কাজ পেয়েছে একটি পরিবারের দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে,তাদের হাতেই জিম্মি হয়ে পড়ছে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মালামাল সরবারহ কাজ। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ২১৬ টাকার মালামাল সরবারহ করা হয়। মালামাল সরবরাহের কাজ পায় মেসার্স তাসিন এন্টারন্যাশনাল ও মিজান ট্রেডিং নামে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক সিরাজুল আলম খান ও মিজান খান। এই দুই মালিক একে অপরের আপন ভাই। 

সিরাজুল আলম খান মাদারীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। 

২০১৯-২০ অর্থ বছরে মালমাল সরবারাহ করা হয় ৪ কোটি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ১১৯ টাকার। ওই দুই ভাইয়ের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মালামাল সরবারাহ করে। ২০২০-২১ অর্থ বছরেও ওই দুই প্রতিষ্ঠান ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৩৫৭ টাকার মালামাল সরবারাহ করে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে মিজান ট্রেডিং ৬ কোটি ৯ লাখ ৭১ হাজার ১২১ টাকার ওষুধসহ অন্য মালামাল সরবরাহ করে হাসপাতালে।

মাদারীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার দরপত্র আহবান করা হয়। মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মালামাল সরবরাহের জন্য ৬টি প্যাকেজে দরপত্র আহবান করা হয়। ৬টি প্যাকেজে ৯৮ টি সিডিউল বিক্রি হয়। জমা পড়ে মাত্র ১৩টি সিডিউল। চলতি অর্থ বছরেও সবাইকে অবাক করে কাজ পেয়ে যায় সেই দুই ভাইয়ের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মিজান ট্রেডিং এবং তাসিন ইন্টারন্যাশনাল। 

বরাদ্দকৃত ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার মধ্যে ‘ক’ গ্রুপের ইডিসিএল বহির্ভূত ওষুধ সামগ্রী ক্রয়ের জন্য ২৫ শতাংশ টাকা, ‘খ’ গ্রুপের সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ১২ শতাংশ, ‘গ’ গ্রুপে লিলেন সামগ্রী কেনার জন্য ৫ শতাংশ, ‘ঘ’ গ্রুপে গজ ব্যান্ডেজ ক্রয় কেনার জন্য ৫ শতাংশ, ‘ঙ’ গ্রুপে কেমিক্যাল ও রিএজেন্ট কিনতে ৩ শতাংশ এবং ‘চ’ গ্রুপে আসবাবপত্র কিনতে ৩ শতাংশ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। 

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, গত অর্থ বছরের গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ ছিলো ৩৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৫ টাকা। লিলেন কাপরের জন্য বরাদ্দ ছিলো ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার ৯৪০ টাকা। সে হিসেবে প্রতিদিন গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ও লিলেন কাপড়ের জন্য খরচ হয়েছে ১৯ হাজার টাকা। অথচ প্রতিদিনই রোগীদের নিজ খরচেই কিনতে হয় এইসব সামগ্রী। 

১০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের জন্য গত অর্থ বছরে আইভি ফ্লুইড ও দন্ত চিকিৎসার উপকরণ (ওষুধ) কেনা হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ ৩১ হাজার ১৮৪ টাকার। অথচ দন্ত চিকিৎসক নেই দুই বছর থেকে। দন্ত চিকিৎসক না থাকলেও বিপুল পরিমান অর্থ খরচ হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ওষুধ কেনা হয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ৯৭৩ টাকার। 

মাদারীপুরের পাঁচখোলা গ্রাম থেকে চকিৎসা নিতে আসা রোগী মো. রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের তো জ্বর আর গ্যাস্টিকের ওুষধ ছাড়া সবই কিনে নিতে হয়। হাসপাতাল থেকে বলে সাপ্লাই নেই। শুনি ওষুধ কেনায় কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। কিন্তু তেমন কোন ওষুধ তো পাই না।’

এদিকে সিন্ডিকেটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উভয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাদের দাবি, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই তারা মালামাল সরবারহের ঠিকাদারী কাজ করেন। কোন ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নয় বলেও জানান তারা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মুনির আহমেদ বলেন, ‘মালামাল সরবরাহের কাজে অনিয়ম নেই। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসলে তদন্ত করা হবে।’ 

দন্ত চিকিৎসক না থাকলেও এই খাতে কোটি টাকা খরচের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই টাকা অন্যখাতে খরচ করা হয়েছে।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়