ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সিলেটে ৪৯৭ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে সোয়া ২ লাখ মানুষ

সিলেট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ১৯ জুন ২০২২  
সিলেটে ৪৯৭ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে সোয়া ২ লাখ মানুষ

সেনাবহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড সিলেটে পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার। নগরীর কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। ৪৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে সোয়া ২ লাখের বেশি মানুষ অবস্থান করছে। রয়েছে ৩১ হাজার গবাদিপুশও। তবে বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। সিলেটের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সিলেটের আঞ্চলিক সড়কগুলো এখনো পানির নিচে। 

সিলেটের জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়, ৪৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৩২ জন মানুষ অবস্থান করছে। সিটি কর্পোরেশনসহ ১৩টি উপজেলার সবগুলো বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ৪টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। সেনাবহিনীর ১৩টি ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। ৬০টি বোট নিয়ে উদ্ধার ও সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। সুনামগঞ্জেও নৌবাহিনীর ১০০ সদস্য কার্যক্রম শুরু করেছে। 

সিলেটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট সদর উপজেলার সবকটা ইউনিয়ন বন্যা কবলিত। অনেকের ঘরের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। ঘরের চালে উঠে অনেকে বাচার চেষ্টা করেছে। হাটখোলা-জালালাবাদ-কান্দিাগাও ইউনিয়নে বেশকিছু ঘরের উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।
 
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে অনেক মানুষ অস্থায়ী তাঁবু বেঁধে আশ্রয় নিয়েছে। মানুষের সঙ্গে রয়েছে গরু-ছাগলও। পাড়ুয়া, ভোলাগঞ্জ, কলাবাড়ী ও বালুচর আশ্রয়কেন্দ্রে প্রচুর মানুষ। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের তীব্র সংকট রয়েছে। স্থানীয় লোকজন তাদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি। বন্যা কবলিত এলাকায় খাবারের পাশাপাশি পয়ঃনিষ্কাশনেরও সমস্যা হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

কেবল কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নয়, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাটসহ সব উপজেলায় খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। কোম্পনীগঞ্জের হাইটেক পার্ক এলাকায় প্রায় ২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত খাবার নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণের মজুদ আছে। কিন্তু, পরিবহনের অভাবে ত্রাণ মানুষের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না। সর্বত্র নৌকার অভাব রয়েছে। সড়ক জেগে উঠলে দ্রুত খাবার পৌঁছে যাবে। এখনো বন্যা কবলিত সিলেটে নৌকার জন্য হাহাকার চলছে। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও মিলছে না নৌকা। এই সুযোগে অনেক নৌকার মাঝি ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকাচ্ছে। এ কারণে পানিবন্দি লোকজনের উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।  

বন্যার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার (১৫ জুন) থেকে পুরো সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এছাড়াও সিলেট নগরীর উপশহর এবং দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি গ্রিডের আওতাধীন এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সিলেট নগরী ও আশপাশের এলাকার ৭০-৮০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এখনো বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎসংযোগ দেয়া যায়নি বলে (বিউবো), সিলেট-এর প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির নিশ্চিত করেন।

সিলেট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম জানান, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে ত্রাণ তৎপরতা বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে সরকারের কাছে যে পরিমাণ ত্রাণ চাওয়া হচ্ছে, সেই পরিমাণ ত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে। বন্যার্তদের মধ্যে দ্রুত ত্রাণ পৌছে যাওয়ার আশা করেন তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর রোববার বিকেল ৩টার বুলেটিনে জানানো হয়, সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ও কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছ। এতদিন বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও শেওলা পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, আপাতত শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। কারণ সব গুদামে পানি ঢুকেছে। ফলে চাল গুদাম থেকে বের করা যাচ্ছে না। পানি নামা সাপেক্ষে চাল পাওয়া যাবে। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনো তিনি নিশ্চিত নন।   

মঙ্গলবার (১৪ জুন) থেকে সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাটসহ পর্যায়ক্রমে সব এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। সিলেটের বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। তবে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট থেকে বন্যার পানি কিছুটা নেমেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। 
 

নূর/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়