ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সেচ নিতে বাড়তি টাকা দিতে হয় অপারেটরকে

মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ২০ মে ২০২২   আপডেট: ১৭:৩৯, ২০ মে ২০২২
সেচ নিতে বাড়তি টাকা দিতে হয় অপারেটরকে

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ নেওয়ার জন্য কার্ডের টাকা ছাড়াও কৃষককে বাড়তি করে ভাড়ার টাকা গুনতে হচ্ছে বলে অভিযৈাগ উঠেছে। 

সদর উপজেলার ভূল্লী বড় বালিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের আওতায় থাকা প্রায় ৫০ জন কৃষক সেচ নিতে গিয়ে এমন ভোগান্তিতে পড়েছে বলে অভিযোগ। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে কৃষকেরা বরেন্দ্র নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর অপারেটরের নামে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বড় বালিয়া ইউনিয়নে ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের দায়িত্বে থাকা অপারেটর আক্তারুজ্জামান বিগত ১০ বছর থেকে ওই এলাকার কৃষকের কাছে ডিপ টিউবওয়েলের ভাড়া নিয়ে আসছে। প্রতি সেচ মৌসুমে একর প্রতি ২৪শ’ টাকা করে ভাড়া দিতে হয় কৃষকদের। ওই গভীর নলকূপের আওতায় প্রায় ৬০ একর জমি রয়েছে। বোরো বা আমন মৌসুমে কৃষক একর প্রতি ২৪শ’ টাকা দিতে না পারলে তাকে সেচ সুবিধা দেওয়া হয় না। এ বছর ওই এলাকার ৫০ জন কৃষক একত্রিত হয়ে এ বিষয়ে বরেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর অভিযোগ করলে অপারেটর গভীর নলকূপে তালা মেরে দেন এবং কৃষকে পানি না দেওয়ার হুমকি দেন।

কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, ‘আমরা কার্ডের মাধ্যমে টাকা দিয়ে ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি নিই। কার্ডে টাকা দিতে হয়, আবার আলাদা করে ভাড়াও দিতে হয়। নিজেকে এই ডিপ টিউবওয়েলের মালিক দাবি করে আক্তারুজ্জামান। বিঘাপ্রতি ১২০০ টাকা না দিলে জমিতে তিনি সেচ দেবেন না। তিনি তালা মেরে রেখেছেন। সেজন্য আমরা কৃষকরা সবাই মিলে বরেন্দ্র অফিসে একটি অভিযোগ করেছি। এর পর থেকে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে ঐ অপারেটর। আমরা এটির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।’

প্রায় আড়াই একর জমির মালিক কৃষক বিপ্লব বলেন, ‘দশ বছর ধরে আমরা এই ডিপ টিউবওয়েলের আওতায় সেচ নিয়ে আসছি। চাপে পড়ে আমরা টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। আমরা নিজস্ব কার্ডে টাকা ঢোকানোর পরেও বিঘাপ্রতি ১২০০ টাকা করে অপারেটরকে ভাড়া দেই। আসলে তিনি কেন এই টাকা নেন বা নিয়ম আছে কি না সেটা আমরা জানতে চাই।’

ভুক্তভোগী আরেক কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অপারেটরকে টাকা দিলে সে পানি দেবে, তা না হলে পানি দেবে না। গত এক মাস যাবৎ আমি পানি নিতে পারিনি। উনি নিজেকে এই ডিপ টিউবওলের মালিক বলে পরিচয় দেন। জোর করে পানি নিতে চাইলে মামলা করার হুমকি দেন। এদিকে পানি দিতে না পারায় আমাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।’

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গভীর নলকূপের অপারেটর আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘তারা যে অভিযোগটা করেছে তা মোটেও সত্য না। ডিপ টিউবওয়েল করতে গিয়ে বরেন্দ্রকে আমি কয়েক ধাপে টাকা দিয়েছি। সেই টাকা তোলার জন্য এবং আমি আমার খরচের জন্য আংশিক কিছু টাকা নেই কৃষকের কাছ থেকে। কৃষকের কাছে বিঘা প্রতি ৮০০ বা ১০০০ টাকা চাই। কোন ধরনের জোরপূর্বক টাকা নেওয়া হয় না। তারা যা দেয় তা নেওয়া হয়। তবে অনেকেই টাকা দেয় না।’

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের ঠাকুরগাঁও রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘১০৮ নম্বর ডিপ টিউবওয়েলের (গভীর নলকূপ) অপারেটরের বিরুদ্ধে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ সাপেক্ষে আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। যদি ঐ অপারেটর অনিয়ম করে থাকে তাহলে আমরা তাকে বাতিল করব।’

ঠাকুরগাঁও/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়