ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘সোনার বাংলার সোনার মানুষ মিলন হাওলাদার’

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৭, ১১ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৯:০০, ১১ জানুয়ারি ২০২২
‘সোনার বাংলার সোনার মানুষ মিলন হাওলাদার’

মিলন হাওলাদারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ওয়ালটন ও রাইজিংবিডির কর্মকর্তারা

‘মিলন হাওলাদারের মতো মানুষরাই হচ্ছেন আমাদের সোনার বাংলার সোনার মানুষ। বঙ্গবন্ধু সেসব সোনার মানুষের স্বপ্ন দেখেছেন। ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে মিলন হাওলাদারের মতো সোনার মানুষকে সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা উপহার দিতে পেরে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত।’

সোমবার (১০ জানুয়ারি) রাজধানীতে ওয়ালটনের প্রধান কার্যালয় মিলনায়তনে ঝালকাঠির ট্রলার মাঝি মিলন হাওলাদারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ওয়ালটন ও রাইজিংবিডি ডটকমের কর্মকর্তারা এসব কথা বলেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে রাইজিংবিডির নির্বাহী সম্পাদক তাপস রায় বলেন, ‘আজ বিশেষ দিন। জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এমন দিনে একজন অসাধারণ মানুষকে সম্মানিত করতে পারায় আমরা আনন্দিত ও গর্বিত।’

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এম এম কায়সার বলেন, ‘মিলন হাওলাদারকে তার কাজের জন্য টুপি খোলা অভিবাদন জানাই। নিজের জীবনের মায়া না করে, শীতের রাতে জ্বলন্ত লঞ্চ থেকে অনেকগুলো মানুষের জীবন বাঁচিয়ে তাদেরকে তীরে পৌঁছে দেওয়ার কারণে তিনি আমাদের হিরো। দেশে তার মতো আরও অনেক হিরো দরকার।‘

মিলন হাওলাদারকে অভিনন্দন জানিয়ে রাইজিংবিডির প্রকাশক এস এম জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের সবারই আপনার কাছে শেখার আছে। অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত সবারই। আমরা অনেকেই সেটা পারি না। আপনি পেরেছেন বলেই অন্যদের চেয়ে আলাদা। আপনাকে সম্মানিত করতে পেরে আমরাও সম্মানিত হয়েছি। আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’

ওয়ালটন প্লাজার সিওও মো. রায়হান শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘নিজের জীবন বিপন্ন করে অনেকগুলো মানুষ আর তাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়েছেন মিলন হাওলাদার। তার মতো সোনার মানুষ দেশে আরও দরকার। মিলন হাওলাদারের মতো মানুষরা হাজার বছর বেঁচে থাকুক।’

মার্সেলের প্রধান নির্বাহী ড. মো. শাখাওয়াত বলেন, ‘সুযোগ পেলে আমাদের সবারই এরকম অসাধারণ কাজ করা উচিত। একজন সাধারণ মিলন হাওলাদার দেখিয়ে দিলেন কী করে অসাধারণ কাজ করতে হয়। সবাই এ কাজ করতে পারেন না, তিনি পেরেছেন। তাই, তাকে অভিনন্দন।'

ওয়ালটনের ডিএমডি ইভা রিজওয়ানা নিলু বলেন, ‘সমাজের আলোকিত মানুষ মিলন হাওলাদার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি মানবিক কাজ করেছেন। তার কাছে অনেক কিছু শেখার আছে।’

ডিএমডি নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা অনেক বীর যোদ্ধা পেয়েছিলাম। মিলন হাওলাদার এ সময়ের বীর যোদ্ধা। আপনি জীবন্ত কিংবদন্তী। আপনার অসাধারণ কাজের জন্য স্যালুট জানাই।’

ডিএমডি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ওয়ালটন কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। তাই, কোনো মানুষের বিপদের খবর পেলে সব সময় ওয়ালটন তার পাশে দাঁড়ায়। মানুষকে যোগ্য সম্মান দিতেও কার্পণ্য করে না ওয়ালটন।’

ওয়ালটনের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার হাওলাদার বলেন, ‘সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষকে সেরা কাজ করা উচিত। মানবসেবা হচ্ছে সেরা কাজের অন্যতম। মিলন হাওলাদার সেই সেরা কাজটাই করেছেন।’

ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ও রাইজিংবিডির উপদেষ্টা সম্পাদক উদয় হাকিমের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মিলন হাওলাদারের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও ১ লাখ টাকার চেক তুলে দেন ওয়ালটন ও রাইজিংবিডির কর্মকর্তারা।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টায় ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগে। জীবন বাঁচাতে সুগন্ধা নদীতে ঝাঁপ দেন কয়েক শত যাত্রী। তাদের মধ্যে প্রায় ৩০০ জনকে নিজের ট্রলারে করে উদ্ধার করেন মিলন হাওলাদার (৩৮)।

মিলন হাওলাদার জানিয়েছেন, ২০ বছর ধরে ভাড়ায় ট্রলার চালান তিনি। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। মাসে ১৫ দিন ট্রলার চালান। বাকি ১৫ দিন বেকার থাকতে হয় তাকে। প্রতিদিন তিনি ৫ টাকার বিনিময়ে যাত্রীদের সুগন্ধা নদী পার করেন।

তিনি বলেন, ‘২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে সুগন্ধা নদীতে যাত্রীদের চিৎকার ও লঞ্চে আগুন দেখতে পেয়ে ট্রলার নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, আগুন থেকে বাঁচতে যাত্রীরা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ভেসে আছেন। তাদের অধিকাংশই দগ্ধ অবস্থায় ছিলেন। তাদেরকে ট্রলারে তুলে ঘাটে নিয়ে আসি। পরে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নদী থেকে যে কয়জন যাত্রীকে উদ্ধার করেছি, তাদের কারো কাছ থেকে টাকা নিইনি। টাকাই সব নয়। বিপদে মানুষের সহায়তা করেছি, এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া। কাজটা করতে পারায় নিজের কাছে শান্তি লাগছে।’

মেয়া/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়