ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘স্বজনপ্রীতি, বাচ্চা হাতি’ ছাপিয়ে তিনি আজম খান

ক্রীড়া প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০২, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৯:২৯, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩
‘স্বজনপ্রীতি, বাচ্চা হাতি’ ছাপিয়ে তিনি আজম খান

পড়ার টেবিলের দেয়ালে রুটিন টাঙিয়ে, বীজগণিতের সূত্র লিখে কিংবা ইংরেজির গ্রামার মনে রাখার সহজ উপায়গুলো তুলে পড়াশোনাকে সহজ করে তোলেন শিক্ষার্থীরা। 

স্বপ্ন পূরণের পথে ছোটা মানুষ নিজেদের স্বপ্ন তুলে রাখতে পছন্দ করেন চার দেয়ালে কিংবা পছন্দের কোনো খাতায়, ডায়েরিতে। যেন নিজের লক্ষ‌্য সব সময় দেখতে পারেন, সেই লক্ষ‌্যের পথে ছুটতে পারেন। তবে সবার গল্প এক হয় না। যেমনটা হয়নি পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার মঈন খানের ছেলে আজম খানের ক্ষেত্রে।

আজম নিজের দেয়ালে সাদা কাগজে লিখে রেখেছেন অসংখ‌্য শব্দ। যেগুলো রোজ তাকে পথ চলতে প্রেরণা দিয়েছেন। সবার উপরে লেখা, ‘এসব শব্দে মনোযোগ রাখতে হবে।’ শব্দগুলো কী? ‘স্বজনপ্রীতি, বাচ্চা হাতি, অকাজের।’ সঙ্গে রোজ শুনতে হয়েছে, ‘আলু’, ‘লাড্ডু’, ‘হাতি’, ‘মোটা’। 

অনেকেরই ধারণা মঈনের ছেলে হওয়ায় আজমের পথ চলা মসৃণ ছিল। কিন্তু আদতেই কি তাই? নিজেদের পরিশ্রম, সামর্থ‌্য ছাড়া কি শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলা যায়? আবার একশরও বেশি ওজন হওয়ায় তাকে রোজ ‘বডি শেমিংয়ের’ যন্ত্রণায় পুড়তে হয়। শুনতে হয় কটু কথা। মেনে নিতে হয় সেসব যন্ত্রণা। অফলাইন কিংবা অনলাইন সবখানেই চলে এসব। 

সব পেছনে ফেলে এ উইকেটরক্ষক ব‌্যাটসম‌্যান দিব‌্যি খেলে যাচ্ছেন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে। পিএসএল, সিপিএল, টি টেন লিগের পর প্রথমবার খেলতে এসেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল)। খুলনা টাইগার্সের এ ব‌্যাটসম‌্যানের ব‌্যাটেই এবারের আসরের প্রথম সেঞ্চুরি আসে।

ম‌্যাচে আজমের রান ফোয়ারা ছুটানোর পেছনে বড় কারণ অনুশীলনে নিজেকে শতভাগ ঝালিয়ে নেওয়া। নেটে এমনভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেন, দেখে মনে হয় ২২ গজেই ব‌্যাটিং করছেন। শট খেলার পর কোন বলে কত রান হবে তা মুখে মুখে হিসেব করছেন। কোনো শট মিস করলে নিজের ওপর রেগে যাচ্ছেন, পরের বলে নিজেকে ফিরিয়ে আনতে আরো মনোযোগী হচ্ছেন।

পাকিস্তানের তারকা ক্রিকেটাররা এবার বিপিএলে এসে স্থানীয় ক্রিকেটারদের যে পরামর্শ সবচেয়ে বেশি দিয়েছেন তা হলো, ‘অনুশীলনেই ম‌্যাচ খেলে নাও।’ ২৪ বছর বয়সী আজমের বৃহস্পতিবারের অনুশীলনেও সেসব ফুটে উঠল স্পষ্টভাবে। 
 
ফিল্ডিং কোচ আশিকুর রহমান থ্রো ডাউন করছিলেন। বল মিস করেন আজম। থ্রোয়ার বলেন, ৯০ কিমি’র গতি ছিল। আজম হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘৭৫ কিমি।’ প্রায় একই রকম পরের বল টাইমিং মিলিয়ে ছক্কা। এবার আজম নিজের ব‌্যাটিংয়ে ধারাভাষ‌্য দিচ্ছিলেন এভাবে, ‘৯০ কিমির বল। উড়িয়ে বিশাল ছক্কা।’ পেছনে ফিরে সাংবাদিকদের উদ্দেশ‌্যে, ‘সত‌্যি বলছি না!’

স্পিনার হাসান মুরাদের বল উড়িয়ে ফলো থ্রুতে তাকিয়ে ডানহাতি ব‌্যাটসম‌্যান। মুরাদ সামনে এসে জিজ্ঞাসা, ‘কী হলো?’ আজমের উত্তর, ‘ছক্কা। আবার কি?’ মন খারাপ করা সুরে বাঁহাতি স্পিনার, ‘তুমি মারলে ছক্কা হবে।’

আরেক বোলার নাহিদুল ইসলামের সঙ্গে আজমের অনুশীলন ছিল কেবল ছক্কা মারার। ম‌্যাচ-আপের কারণে এমনিতেই বাড়তি সুবিধা। আজম স্পিনারদের যেন ‘গোনায়’ ধরেন না। শরীরের শক্তির সঙ্গে টাইমিং মেলান শুধু। নাহিদুল বল করছেন। কখনো পুল, কখনো ডাউন দ‌্য উইকেট বা জায়গায় দাঁড়িয়ে লং অন, লং অফ দিয়ে বল উড়াচ্ছিলেন আজম। অফ স্পিনার যেন স্রেফ দর্শক। বল উড়িয়ে উড়িয়ে মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে বলেন, ‘ছক্কা মারা সহজ না কিন্তু।’

ছক্কা মারা সহজ না হলেও তার ব‌্যাটিং দেখলে বোঝা যায় মন খুলে বল উড়াচ্ছেন। খেলছেন আনন্দ নিয়ে। ডানা মেলে উড়ছেন নিজের ভুবনে। প্রতিটি শট সেসব সমালোচকদের জন্যে, যারা পথে-পথে বাধা হয়েছেন, কটূক্তি করেছেন। শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে লড়াই করে জেতার আনন্দ ফুটে উঠে তার ব‌্যাটিংয়ে। স্বজনপ্রীতি, কতশত বিদ্রূপ ছাপিয়ে আজ তিনি আজম খান।

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়