ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

৩১ বছর আত্মগোপনে ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কাওছার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ২০ জুন ২০২২  
৩১ বছর আত্মগোপনে ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কাওছার

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. কাওছার (৬৩) দীর্ঘ ৩১ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। তবে, শেষরক্ষা হয়নি তার। রাজধানীর গুলশান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

সোমবার (২০ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার (১৯ জুন) রাতে গুলশানের বারিধারায় অভিযান চালিয়ে কাওছারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কাওছার ও আজাহার মানিকগঞ্জের চর হিজুলী গ্রামে বাস করতেন। একই এলাকায় চাষাবাদ এবং একসঙ্গে ইরি ধানের খেতে পানি সেচের ব্যবসা করতেন। সে সুবাদে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে আজহারের বিবাহিত বোন অবলার সঙ্গে কাওছারের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে অবলা, তার তৎকালীন স্বামী ফালান, ওমর, রুহুল আমিন, আসমান এবং রফিজসহ কয়েকজন কাওছারের পক্ষ নেন। কাওছার আজহারের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। আজহার মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয় লোকজন আজাহারকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের ছোট ভাই মো. আলী হোসেন বাদী হয়ে কাওছারসহ সাতজনকে আসামি করে মানিকগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে কাওছারকে গ্রেপ্তার করা হয়। কাওছার ২ মাস হাজত খেটে ১৯৯১ সালে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা কাওছার, ওমর, রুহুল আমিন, আসমান এবং রফিজকে অভিযুক্ত করে একই বছর ডিসেম্বরে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। অবলা ও তার স্বামী ফালানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় চার্জশিট থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।

১৯৯২ সালের শেষদিকে মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামি মো. কাওছারকে মৃত্যুদণ্ড এবং ওমর, রুহুল আমিন, আসমান ও রফিজকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ২ মাস হাজতে থেকে জামিনে বের হওয়ার পর থেকে ৩১ বছর পলাতক ছিলেন কাওছার।

র‌্যাব জানায়, ১৯৬০ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানার চর হিজুলী এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন কাওছার। তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। দুটি বিয়ে করেছেন কাওছার। প্রথম স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের ঘরে তার একটি মেয়ে সন্তান আছে। হত্যা মামলায় জেলে গেলে প্রথম স্ত্রী মনোয়ারা তাকে তালাক দিয়ে আবার বিয়ে করে চলে যান। কাওছার জেল থেকে জামিনে বের হয়ে আজাহারের বোন ৫ সন্তানের জননী অবলাকে পালিয়ে নিয়ে যান। অবলা তার স্বামীকে তালাক দেন। অবলার পূর্ববর্তী স্বামী ফালান রোগ ভুগে মারা যান। কাওছার গ্রেপ্তার এড়াতে ১৯৯১ সালের পর আর কোনোদিন মানিকগঞ্জে যাননি।

হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় গ্রেপ্তার এড়ানোর লক্ষ্যে আত্মগোপন করেন কাওছার। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ১৯৯১ সালের শেষের দিকে ঢাকায় চলে আসেন। কাওছার ৩১ বছর ধরে ইমরান মাহামুদ নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ছদ্মবেশে গাজীপুর, কালিয়াকৈর, পুবাইল, উত্তরা, টঙ্গীসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে তিনি পেশা পরিবর্তন করেন। প্রথমদিকে তিনি রাজমিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিক ও স্যানিটারি মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করেন। পরে সিএনজি অটোরিকশা এবং প্রাইভেটকারের চালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেন। পাশাপাশি নতুন নামে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন কাওছার।

মাকসুদ/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়