ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হাজার বছর টিকে আছে যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

সাতসতের ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৫, ২৬ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১১:৫৬, ২৮ আগস্ট ২০২০
হাজার বছর টিকে আছে যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

নিশহিয়ামা অনসেন কেইউনকান

ব্যবসায় উত্থান-পতন থাকেই। পতনের ধাক্কা সামলাতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ীর স্বপ্ন অঙ্কুরে নষ্ট হয়। লাভ-ক্ষতির রিলে রেসে হেরে গিয়ে তারা হারিয়ে যান চিরতরে- পৃথিবী রাখে না তাদের খবর। কিন্তু দৃঢ় প্রত্যয়ে যারা ঘুড়ে দাঁড়ান। তিলে তিলে গড়ে তোলেন প্রতিষ্ঠান। বছরের পর বছর বংশ পরম্পরায় যখন ব্যবসা টিকে থাকে, তখন সেগুলোকে বলা হয় ‘শতবর্ষী প্রতিষ্ঠান’।

এমন কিছু শতবর্ষী প্রতিষ্ঠানের কথা হয়তো আমরা জানি। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো টিকে আছে হাজার বছর, সেইসব প্রতিষ্ঠান নিয়েই এই লেখা। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে টিকে রয়েছে বিশ্বে এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

বিশ্বে প্রাচীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জাপানে ৩,১৪৬টি, জার্মানিতে ৮৩৭টি, নেদারল্যান্ডসে ২২২টি এবং ফ্রান্সে ১৯৬টি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি রয়েছে হাজার বছরের পুরনো। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো শত বছর ধরে লাভ-ক্ষতির নানা প্রতিকূলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধসহ নানা ধ্বংসাত্মক সময় পেরিয়ে আজও টিকে আছে। জেনে নিন, বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো এমনই কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে।

কঙ্গো গুমি: ৫৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত কঙ্গো গুমি হলো বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর প্রধান কার্যালয় জাপানের ওসাকা শহরে। কনস্ট্রাকশন বা ভবন নির্মাণ করাই কঙ্গো গুমির কাজ। এর প্রতিষ্ঠাতা একজন অভিবাসী, যিনি শিতেনো-জি বৌদ্ধ নির্মাণের জন্য রাজকুমার শোটোকুর কাছ থেকে দায়িত্ব পান। ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত কঙ্গো গুমি প্রায় ১৪০০ বছর ধরে পরিবার পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ছিল। ২০০৬ সালে বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি তাকামাতসু কনস্ট্রাকশন গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। একীভূত হওয়ার আগে এর কর্মী সংখ্যা ছিল শতাধিক এবং বার্ষিক বাজেট ছিল প্রায় ৭০ মিলিয়ন ডলার। প্রতিষ্ঠানটি আজও বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ ও সংস্কার কাজ অব্যাহত রেখেছে।

নিশহিয়ামা অনসেন কেইউনকান: বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান হলো নিশহিয়ামা অনসেন কেইউনকান। এটি জাপানের হায়াকাওয়া শহরে অবস্থিত একটি হট স্প্রিং হোটেল। ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এই হোটেল ২০১১ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বিশ্বের প্রাচীনতম হোটেল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ৩৭ রুমের হোটেলটি একই পরিবার ৫২ প্রজন্ম ধরে ১,৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিচালনা করে আসছে। এই হোটেলে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে গরম পানির ৬টি ঝরনা। হোটেলটি আকাইশি পর্বতমালার গা ঘেঁষে অবস্থিত এবং এর গরম পানির উৎস পার্শ্ববর্তী হাকুহো স্প্রিংস।

কোমান: ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত কোমান হোটেলটি বিশ্বের তৃতীয় প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী জাপানি হোটেল। হোটেলটি প্রতিষ্ঠা করেন গনোকামি হিউকে, যিনি চার দেবতাকে স্বপ্ন দেখে হোটেল শুরু করার অনুপ্রেরণা পান। স্বপ্নে দেবতারা তাঁকে বলেছিলেন- পরিবারকে বংশ পরম্পরায় রক্ষা করার জন্য তাঁকে অবশ্যই সেই জায়গায় থাকতে হবে। তিনি হোটেলের ভেতর দেবতাদের উদ্দেশ্যে একটি মন্দিরও তৈরি করেন। বংশ পরম্পরায় এই হোটেল এখনো পরিচালিত হচ্ছে।

হোশি: হোশি হলো আরেকটি জাপানি ঐতিহ্যবাহী হোটেল। ৭১৮ খ্রিস্টাব্দে এই হোটেল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি বিশ্বের চতুর্থ প্রাচীনতম হোটেল। জাপানের ইশিকাওয়া প্রদেশের আওয়াজু ওনসে অঞ্চলে অবস্থিত এই হোটেল একই পরিবারের মালিকানায় ৪৬ প্রজন্ম ধরে আজও টিকে রয়েছে।

গেন্ডা শিগিও: বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চালু থাকা কাগজ তৈরির প্রতিষ্ঠান এটি। ১০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অন্যান্য নানা প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখনো চালু রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গেন্ডা শিগিও প্রতিষ্ঠা করা হয় ৭৭১ খ্রিস্টাব্দে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অফিস কিয়োটো ইম্পেরিয়াল প্রাসাদ এবং নিজো ক্যাসেলের মধ্যে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি কাগজের পাশাপাশি বিয়ের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কার্ড তৈরি করে। এছাড়া মিজুহিকি নামক বিশেষ কাগজ দিয়ে উপহারের মোড়ক তৈরির জন্যও খ্যাত।

স্টিফস্কেলার সেন্ট পিটার: এটি বিশ্বের ষষ্ঠতম প্রাচীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং এ তালিকার প্রথম প্রতিষ্ঠান যেটি জাপানের বাইরে অবস্থিত। এই রোস্তেরাঁটি পাওয়া যাবে অস্ট্রিয়ার সালজবুর্গ শহরে। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম রেস্তোরাঁ এবং ইউরোপের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। রেস্তোরাঁটি ৮০৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাদের দাবি, গত কয়েক শতাব্দীতে এখানে ক্রিস্টোফার কলম্বাস এবং উলফগ্যাং অ্যামাদিউস মোজার্টসহ বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তি এসেছিলেন।

নিচের ছবিতে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম ২০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেখে নিন। এসব প্রতিষ্ঠান আজও সগৌরবে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়